নিজস্ব প্রতিনিধি: কালিগঞ্জের মথুরেশপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর গাইনের বিরুদ্ধে সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ’র প্রমাণ পেয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার খন্দকার রবিউল ইসলাম গত ৫ অক্টোবর ০৫.৪৪.৮৭৪৭.০০০.১৪.০০১.১৯-৭৬৬ নম্বর স্মারকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
এরআগে গত ১ সেপ্টেম্বর কালিগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান গাইনের দুর্নীতির বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর গত ৪ অক্টোবর বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলাম সরেজমিনে প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত করেন।
তদন্তে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের ৯ লক্ষ ২৭ হাজার ৮শ’ টাকা আত্মসাৎ’র প্রমাণ মিলেছে বলে জানাযায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদনে।
প্রকল্প আত্মসাৎ’র অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে ৪ টি, আংশিক-২ টি, অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি-৪ টি আর প্রকল্প বাস্তবায়ন সঠিক নিরুপন করা যায়নি- ২টির। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মনোরঞ্জন ঘোষের বাড়ি হতে নিল কোমল ঘোষের বাড়ির অভিমুখ পর্যন্ত ১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ইট সোলিং রাস্তা নির্মাণ। তবে প্রকল্প স্থানে কাজ হয়নি। প্রকল্প সভাপতি ইউপি সদস্য কলিম গাজী ও চেয়ারম্যান মথুরেশপুর ইউপি সন্তোষজনক ব্যাখা দিতে পারেনি। অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।
দেয়া বজলু সরদারের বাড়ির মুখ হতে কোমলের বাড়ির অভিমুখে ৪১ হাজার টাকা ব্যয়ে নতুন ইট সোলিং রাস্তা নির্মাণ। প্রকল্প স্থানে কাজ হয়নি। প্রকল্প সভাপতি কলিম গাজী ও চেয়ারম্যান সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি। অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত। বসন্তপুর গ্রামের হবি মোল্লার বাড়ির মুখ হতে সাইফুল মেম্বারের বাড়ির অভিমুখে পানি নিষ্কাশনের জন্য ২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে আউট ড্রেন নির্মাণ। প্রাক্কলন মোতাবেক দুই পাশে ইটের গাথনি/ সোলিং থাকলেও এক পাশে ইটের গাথুনি দেখা যায়। ড্রেনের প্রকল্প অনুযায়ী ২১৮ ফুট কাজ করার কথা থাকলেও (৮৩+৫৫)= ১৩৮ ফুট কাজ করা হয়। প্রাক্কলনে ফ্লাসার ধরা থাকলেও কোথাও কোথাও প্লাস্টার করা হয়নি। প্রকল্পটি নির্মাণ প্রকল্প নয় সংস্কার প্রকল্প। স্থানীয় জনগণের নিকট হতে জানা যায় ১০/১২ বছরের পুরাতন যে ড্রেন ছিল তা সংস্কার করা হয়েছে। অভিযোগ আংশিক প্রমাণিত হয়েছে।
হাড়দ্দহা কলগেট হতে ঘূর্ণিঝড় আয়লায় পানি প্লাবিত হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য পুটের বাড়ির অভিমুখে ২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মাটির রাস্তা নির্মাণ। ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে মাটির কাজ ইতোমধ্যে কয়েকটি ভারি বর্ষন হওয়ায় সঠিক নিরুপন করা যায়নি। অভিযোগ আংশিক প্রমাণিত হয়েছে।
উজয়মারি জয়দেবের বাড়ির মুখ উজয়মারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত ৭৯ হাজার ৮শ’ ব্যয়ে রাস্তা সংস্কার। প্রকল্প স্থানে কাজ হয়নি। প্রকল্প সভাপতি ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান ও চেয়ারম্যান সন্তোষজনক ব্যাখা দিতে পারিনি। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়েছে।
দেয়া পিচের মুখ হতে পুরাতন সোলিং পর্যন্ত ও ইটের মুখ হতে বজলু সরদারের বাড়ির অভিমুখ পর্যন্ত ১ লক্ষ টাক ব্যয়ে ইট সোলিং রাস্তা নির্মাণ। প্রকল্প স্থানে কাজ হয়নি। মেম্বার কলিম গাজী ও চেয়ারম্যান সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি। অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।
নিজদেবপুর জসিম উদ্দিনের বাড়ি মুখ হতে মুজিবুর ঢালীর বাড়ির মুখ পর্যন্ত ৭ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে মাটি দিয়ে রাস্তা পুনঃ নির্মাণ। ইতোমধ্যে কয়েকটি ভারি বর্ষণ হওয়ায় সঠিক নিরুপুন করা যায়নি।
নিজদেবপুর মসজিদের সামনে হতে মথুরেশপুর ইউনিয়নের ৭,৮ ও ৯ নম্বর সংরক্ষিত মহিলা সদস্য’র বাড়ির অভিমুখে রাস্তা সংস্কার ৮ মেট্রিক টন। কয়েকটি ভারি বর্ষনের কারণে নিরুপন করা যায়নি বলে জানা যায়। এছাড়া ৪ টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে তার রিপোর্ট জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে জমা দিয়েছি।
তবে এ বিষয়ে মথুরেশপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের নিকট সরকারি অর্থ আত্মসাৎ প্রমাণিত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যে তদন্ত করেছে তার কোন সত্যতা পায়নি। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ইউএনও সাহেব অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে কিনা আমি জানিনা, আপনারা জানলেন কিভাবে? আমার কাছে ফোন দিয়েছেন কেন? ইউএনও সাহেবকে ফোন দিয়ে যা লেখার লেখেন।