Site icon suprovatsatkhira.com

কুখরালীতে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের হামলায় ৪ জন জখম: দু’জনের অবস্থা আশঙ্কা জনক

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার কুখরালীতে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের এক তরফা হামলায় চার জন জখম হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলার পারকুখরালী সরদার পাড়া এলাকায়। জমি জমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে প্রতিপক্ষরা এ হামলা চালিয়েছে বলে গ্রামবাসিরা জানায়।
আহতরা হলেন, শহরের পারকুখরালী সরদারপাড়া এলাকার মাস্টার শহিদুল সরদারের ছেলে মো. ইব্রাহিম হোসেন, নাঈম হোসেন, নজরুল সরদারের স্ত্রী শাকিলা খাতুন ও ছেলে ইমরান হোসেন। আহতরা সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। আহতদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর এলাকাবাসি জানায়, পারকুখরালী সরদারপাড়া এলাকার মৃত আমিনদ্দীন সরদারের ছেলে জামায়াতের নাশকতা মামলার আসামি শাহজাহান সরদার, তার ভাই লোকমান সরদার, হাসান সরদার গংদের সাথে একই এলাকার শহিদুল সরদারের জমি জমা সংক্রান্ত বিরোধ ছিলো। এ নিয়ে এলাকায় শালিস বৈঠক হলে সহিদুল সরদার শলিসের সিদ্ধান্ত মানলেও প্রতিপক্ষ শাহজাহান, লোকমান, হাসান সরদাররা শালিস অমান্য করে গায়ের জোরে জমি দখল নিতে মরিয়া হয়ে পড়ে।

শাহজাহান, লোকমান, হাসান সরদাররা গুন্ডা প্রকৃতির ও আইন অমান্যকারী ব্যক্তি হওয়ায় গ্রামবাসির কথা অমান্য করে মঙ্গলবার সকাল থেকে জমি ও জন মানুষের রাস্তার কিছু অংশ খুড়ে ও জমি দখল করে সকালে বাড়ির সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা শুরু করে। এসময় শহিদুল সরদারের দুই ছেলে ইব্রাহিম হোসেন ও নাঈম হোসেন ভ্যানসহ মানুষ চলাচলের জন্য দুই ফুট ছেড়ে দিয়ে প্রাচীর নির্মাণ করার অনুরোধ করে। এতে পূর্ব বিরোধের কথা মনে করে প্রতিপক্ষরা ইব্রাহিম ও নাঈমকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। ঘটনার সময় কিছু না বলে ঘাপটি মেরে থাকে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মঙ্গলবার জোহরের নামাজ শুরু হলে পাড়া প্রতিবেশীরা সবাই মসজিদে নামাজ রাত থাকা অবস্থায় প্রতিপক্ষ এলাকার মৃত আমিনদ্দীন সরদারের ছেলে জামায়াতের নাশকতা মামলার আসামি শাহজাহান সরদার, তার ভাই লোকমান সরদার, হাসান সরদার ও লোকমান সরদারের ছেলে ইমদাদুল সরদার, মেয়ে মোছা. শাহারিন, মোছা. তারিন ও শাহজাহান সরদারের স্ত্রী স্নেহতারা বেগম ইব্রাহিম ও নাঈমকে ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দুরে রাস্তার মোড়ে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে কাপড় দিয়ে মুখ বেঁধে কিল ঘুষি মারতে থাকে।

একপর্যায়ে হত্যার উদ্দেশে রাস্তায় ফেলে বাঁশ দিয়ে গলা ও বুক চেপে ধরে। এসময় তাদের গোঙ্গানীতে ইব্রাহিমের চাচি শাকিলা খাতুন ও চাচাতো ভাই ইমরান হোসেন উদ্ধার করতে গেলে তাদেরকেও বেধড়ক মারপিট করে মারাত্মক জখম করে। পরে মসজিদ থেকে মুছল্লিরা বেরিয়ে এসে ধাওয়া করলে সন্ত্রাসীরা পলিয়ে যায়। এসময় স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে অবস্থার অবনতি দেখে তাদেরকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুস সাত্তার গাজী জানান, দুপুরে সবাই যখন মসজিদে নামাজ পড়তে গেছে ঠিক সেই সময়ে অভিযুক্তদের বাড়ি থেকে দুইশ’ গজ দূরে একটি বাগানে দেশিয় অস্ত্র ও লাঠি দিয়ে ইব্রাহিম হোসেন ও নাঈম হোসেনকে অভিযুক্তরা বেধড়ক মারপিট করছে দেখে আমি ছুটে যায় তাদের উদ্ধার করতে। এরমধ্যে ইব্রাহিমের চাচি ও তার ছেলে ইমরান হোসেন উদ্ধার করতে এলে তাদেরকেও মারপিট শুরু করে।

প্রত্যক্ষদর্শী মো. নজিবুল্লাহ জানান, বেধড়ক মারপিটের কারণে আহতদের গোঙানির শব্দ শুনে আমি ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে থামানোর চেষ্টা করি। এসময় অহত দুজনের মুখ কাপড় দিয়ে বাধা ছিলো। প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুর রউফ জানান, আমিসহ স্থানীয় কয়েজন গিয়ে ইব্রাহিম, নাঈম, ইমরান ও শাকিলা খাতুনকে শাহজাহান, তার ভাই ও তাদের পরিবারের সদস্যদের হাত থেকে মারাত্মক জখম অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই।

সাতক্ষীরা পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মতিয়ার রহমান জানান, ‘শাহজাহান সরদার একজন নাশকতা মামলার আসামি। তার ভাই ও তাদের ছেলে মেয়েদের অত্যাচারে এলাকবাসী অতিষ্ঠ। এমনকি কাউন্সিলারসহ আমাদের কোন কথা তারা কর্ণপাত করেন না’।

তিনি আরও জানান, পৌরসভার রাস্তার হিয়ারিং বন্ডের উপর দিয়ে শাহজাহান সরদার তাদের সীমানা প্রাচীর দিচ্ছে। স্থানীয়রা ও ভুক্তভোগীরা তাদের সীমানা প্রাচীর দিতে নিষেধ করলে বিভিন্ন ধরণের হুমকি ধামকি দেয়। পরে পৌরসভায় অভিযোগ দিলে পৌর কর্তৃপক্ষ এসে সরেজমিনে পরিদর্শন করে কাজ বন্ধ করে দেয়। এরপর বিষয়টি মীমাংসার জন্য পুলিশে অভিযোগ দিলে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ এসে উভয়পক্ষকে বসে সমাধানের পরামর্শ দেয়। পুলিশ চলে যাওয়ার প্রায় এক ঘণ্টা পরে শাহজাহান সরদার, তার ভাই ও পরিবারের সদস্যরা মাস্টার শহিদুল সরদারে পরিবারের উপর হামলা চালায়।
পৌর সভার ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন মিলন জানান, একাধিকবার তাদেরকে ফোনে নিশেধ করা হলেও তারা কর্নপাত না করে থানা পুলিশের কথা অমান্য করে নাশকাতা মামলার আসাশী সাহাজান মসজিদে নামাজ চলাকালীন সময়ে তাদেরকে ধরে নিয়ে শাররীক নির্যাতন করেছে। তিনি এর সুষ্ঠু বিচার ও দোষীদের শান্তির দাবি জানিয়ে থানা পুলিশের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেনে। এ বিষয়ে সদর থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানায় ভূক্তভোগীদের পরিবার।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version