Site icon suprovatsatkhira.com

অপার সম্ভাবনার হাত ছানি কালিগঞ্জের বাঁশঝাড়িয়া মিনিসুন্দরবন

শেখ শাওন আহমেদ সোহাগ: পর্যটন শিল্পে অপার সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ। ধীর গতিতে হলেও এই শিল্পের উন্নয়ন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যুগে যুগে পর্যটকদের মুগ্ধ করেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার মাধ্যমে নিজের মন প্রাণ আর আত্মাটাকে সতেজ করা ও সঙ্গীদের সময় দেয়া দুটোই চলে একসাথে। বর্তমান বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ১শ’ কোটির বেশি। আর বিপুলসংখ্যক পর্যটকের প্রায় ৭৫ শতাংশ ভ্রমণ করেন এশিয়ার দেশগুলোতে।

২০১৯ সালের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কমপেটেটিভনেস রিপোর্ট-এ বাংলাদেশের অবস্থান ১২০তম বলা হয়েছে। যা ২০১৭ সালে ছিলো ১২৫তম।
ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের গবেষণা অনুযায়ী ২০১৪ সালে পর্যটন খাতে ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা দেশের মোট কর্মসংস্থানের ১ দশমিক ৮ শতাংশ।
২০১৫ সালে এ খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ আরও ৪ শতাংশ বৃদ্ধির প্রত্যাশা এবং ২০১৪ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে ২ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। সে হিসেবে ২০২৪ সালে মোট কর্মসংস্থানের মধ্যে পর্যটন খাতের অবদান দাঁড়াবে ১ দশমিক ৯ শতাংশ।

বাংলাদেশে ছোট-বড় প্রায় ৮শ’র বেশি পর্যটন স্থান রয়েছে। এসব স্থানকে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে পর্যটনের সাথে যুক্ত করা গেলে তা এই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে।
পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের অন্যতম একটি স্থান সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের বাঁশঝাড়িয়া বিজিবি ক্যাম্পের পাশে কালিন্দী নদীতে ভারত- বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী নদীর মাঝখানে জেগে ওঠা চরে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম দিয়েছে বিভিন্ন গাছপালা। যা সুন্দরবনের আবহ। এ কারণে স্থানীয়রা এটাকে মিনি সুন্দরবন বলে নামকরণ করেছেন।

৮৩ একর জমিতে সৃষ্টি হওয়া এ বনে গেওয়া, কেওড়া, গোলপাতাসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমণ প্রেমীরা এখানে আসে সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। সন্ধ্যার দিকে সাদা বক, পানকৌড়ি দলবেঁধে তাদের নিরাপদ আশ্রয় মিনি-সুন্দরবনে ফিরতে থাকে। চারিদিকে ডানা ঝাপটানো উড়া-উড়ির সঙ্গে পাখির কিচির-মিচির শব্দে মুখর হয়ে ওঠে এ অঞ্চল।

এই বন দেখলে অনেকটা মূল সুন্দরবনেরই অনুভূতি পাওয়া যায়। মিনি এ বনটি দেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে। এছাড়া পরিবেশের জন্য এটি একটি আর্শিবাদ স্বরুপ। এটা সংরক্ষণ করতে সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ দরকার বলে মনে করেন বনপ্রেমীসহ স্থানীয়রা।
কালিগঞ্জের মথুরেশপুর ও ধলবাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী শর্মিষ্ঠা সরকার জানান, উপজেলার বাঁশঝাড়িয়া মৌজায় এ বনটি অবস্থিত। কাগজপত্র অনুযায়ী ৮৩ একর জমির উপর সৃষ্টি হয়েছে এ বন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পত্রিকা বিক্রেতা রবিউল ইসলাম জানান, মিনি এ সুন্দরবনটি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছিলো। কিন্তু কয়েক বছর যাবৎ একের পর এক বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে বন অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বনের চারপাশে অনেক ফাঁকা হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, এখানে না আসলে বোঝা যাবে না যে, কতটা সুন্দর এ বন। সন্ধ্যার দিকে সাদা বক আর পানকৌড়িতে আকাশ ঢেকে যায়। কালিগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানের দর্শনার্থী এ মনোরম দৃশ্য দেখতে ছুটে আসে এখানে।
কালিগঞ্জের রোকেয়া মনসুর মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক নিয়াজ কওছার তুহিন, বড়শিমলা কারবালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গাজী মিজানুর রহমান, ব্যবসায়ী সঞ্জয় কুমার জানান, বাঁশঝাড়িয়া বনটি অপরুপ সৌন্দার্যের লীলাভূমি। আমরা প্রায় প্রতি শুক্রবার এখানে ঘুরতে আসি। মিনি এ সুন্দরবন পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে উঠেছে। সারা বছরই এখানে নানা প্রজাতির পাখি থাকে। দিনদিন বাড়ছে ভ্রমণপিপাসু দর্শনার্থীদের আনাগোনা। প্রতিদিন বিকেল হলেই মানুষের ভিড় জমে এখানে। মিনি সুন্দরবনকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে এটি হয়ে উঠতে পারে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাময় একটি খাত।

বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য ও কালিগঞ্জ সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সাহিত্যিক গাজী আজিজুর রহমান বলেন, কালিগঞ্জ একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা। নানান দিক দিয়ে কালিগঞ্জের অনেক সুনাম রয়েছে। এই সুনামের মূলে খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ’র বিশাল প্রভাব, রাজা প্রতাপাদিত্য’র উঁচু উঁচু গড়, এখানে আছে নবরতœ মন্দির, বসন্তরায়ের স্মৃতি, সব চাইতে বড় সম্পদ কাঁকশিয়ালী নদী। সবমিলিয়ে রয়েছে ব্যাপক ঐতিহ্য। তবে দুঃখের বিষয় সেই ঐতিহ্যকে আমরা ধরে রাখতে পারিনি। তবে নতুনভাবে সৃষ্টি ঐতিহ্য গুলোকে আমাদের ধরে রাখতে হবে এবং ধরে রাখা উচিত। সেজন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ছত্রছায়ায় ও স্থানীয় সবাইকে নিয়ে এই উপজেলাকে আরও উন্নত, আরও আকর্ষণীয় করার জন্য কিছু নিদর্শন আমরা সৃষ্টি করে যাবো।
তিনি আরও বলেন, বাঁশঝাড়িয়া বন দেশের সীমানার মধ্যে ঐতিহ্য’র সৃষ্টি করেছে। তবে সেই ঐতিহ্য টাকে আমরা এখনও আকর্ষণীয় করতে পারিনি।
এটাকে উন্নত করার জন্য প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের সহযোগিতায় সবাইকে নিয়ে এখানে দর্শনীয় একটি স্থান গড়ে তুলতে চাই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলাম বলেন, কালিগঞ্জের বাঁশঝাড়িয়ায় যে একটি মিনিসুন্দরবন আছে সেটি আমার জানা নেই। আপনার মাধ্যমে প্রথম শুনলাম। আমার বক্তব্য দেওয়ার দরকার নেই। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পর্যটন নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। উপজেলার বিভিন্ন খাল খনন ও বসন্তপুর পার্কের কাজ চলমান।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version