নিজস্ব প্রতিনিধি: কালিগঞ্জের মথুরেশপুর ইউপি’র চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান গাইনের বিরুদ্ধে বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ’র তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার (৪ অক্টোবর) বেলা ১১ টার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের নির্দেশনা মোতাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলাম এ তদন্ত সম্পন্ন করেন।
জানা গেছে, উপজেলার মথুরেশপুর ইউপি’র চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান গাইন ২০১৬-১৭ অর্থ বছর ও অন্যান্য অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওয়ায় মথুরেশপুর ইউনিয়নের অনুকূলে বিভিন্ন প্রকল্প আত্মসাৎ করে। যার প্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম গত ১ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। এরপর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্ত সম্পন্ন করেন।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, আমি জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে তদন্তে এসেছি। তদন্ত শেষ করে অতিদ্রæত রিপোর্ট স্যারের কাছে পাঠাবো। আপাতত এর বেশি বলতে পারবো না।
প্রসঙ্গত: গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে এ অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডর আব্দুল হাকিম লিখিত বক্তব্যে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান গাইনের বিরুদ্ধে সীমাহিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, আমি তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ এর ২৪ অনু (আপিল নিষ্পত্তি, ইত্যাদি) ৩ এর ‘ক’ ধারা মোতাবেক ইউনিয়নের ২০১৬-২০১৭ ও অন্যান্য অর্থ বছরের প্রকল্পের তালিকা পেতে আবেদন করি। কিছুদিন পর তালিকা পেয়ে সরেজমিন তদন্তকালে ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড হতে ৯ নম্বর ওয়ার্ড পর্যন্ত কিছু জায়গায় দেখতে পাই প্রকল্পের তালিকা মোতাবেক কাগজে-কলমে কাজ আছে তবে বাস্তবে কোন কাজ নেই।
ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান গাইন সরকারি প্রকল্পের কাজ না করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে উল্লেখ্য করে তিনি আরও বলেন, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মনোরঞ্জন ঘোষের বাড়ি হতে নীল কোমল ঘোষের বাড়ির অভিমুখ পর্যন্ত ১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ইট সোলিং রাস্তা নির্মাণ। তবে বাস্তবে কোন কাজ হয়নি।
১ নম্বর ওয়ার্ডের বসন্তপুর গ্রামের হবি মোল্লার বাড়ির মুখ হতে সাইফুল মেম্বারের বাড়ির অভিমুখ পর্যন্ত ২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পানি নিষ্কাশনের জন্য আউট ড্রেন নির্মাণ। তবে বাস্তবে কাজ কোন কাজ হয়নি।
২ নম্বর ওয়ার্ডের হাড়দ্দহা কলগেট হতে ঘূর্ণিঝড় আইলার পানি প্লাবন হতে রক্ষার জন্য রমিজ পুটের বাড়ির অভিমুখ পর্যন্ত ২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মাটির রাস্তা নির্মাণ। তবে বাস্তবে কোন কাজ হয়নি।
৭ নম্বর ওয়ার্ডের উজয়মারি জয়দেব এর বাড়ি হতে উজয়মারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত ৭৯ হাজার ৮শ’ টাকায় রাস্তা সংস্কার। বাস্তবে রাস্তায় এক ফোটা ‘খ’ পড়েনি কখনও।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের দেয়া পিচের মুখ হতে পুরাতন ইট সোলিং পর্যন্ত ও ইটের মুখ হতে বজলু সরদারের বাড়ির অভিমুখ পর্যন্ত নতুন ১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ইট সোলিং রাস্তা। তবে বাস্তবে কোন কাজ নেই।
১ নম্বর ওয়ার্ডের বসন্তপুর বায়তুল মামুর জামে মসজিদ সংস্কারের জন্য ৫০ হাজার ১শ’ টাকা বাজেট হয় অথচ কোন কাজ হয়নি মসজিদে।
৯ নম্বর ওয়ার্ডের নিজদেবপুর জসীমুদ্দিনের বাড়ির অভিমুখ হতে মুজিবর ঢালীর বাড়ির অভিমুখ পর্যন্ত ৭ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে মাটি নিয়ে রাস্তা পুণঃ নির্মাণ। তবে বাস্তবে এক ফোটা মাটিও পড়েনি।
৬ নম্বর মুকুন্দপুর রায়ের হাট হতে প্রশান্ত ঘোষের বাড়ির অভিমুখে রফিকুলের বাড়ি হতে নিমাই অধিকারির বাড়ির অভিমুখে ৮২ হাজার টাকা ব্যয়ে নতুন ইট সোলিং রাস্তা। কাজ না করে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে চেয়ারম্যান।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের দেয়া বজলু সরদারের বাড়ির মুখ হতে কোমলের বাড়ির অভিমুখে ৪১ হাজার টাকা ব্যয়ে নতুন ইট সোলিং । বাস্তবে কোন কাজ হয়নি।
৭ নম্বর ওয়ার্ডের অমল সরকারের বাড়ি হতে নিরোধের বাড়ির অভিমুখ পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ। একই ওয়ার্ডের আশিকের বাড়ি হতে জগন্নাথের বাড়ির অভিমুখে ২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ইট সোলিং রাস্তা। তবে এই দুই জায়গায় কোন কাজ হয়নি।
৬ নম্বর ওয়ার্ডের সেকেন্দারনগর গ্রামের পিয়ারের বাড়ির ইট সোলিং এর মুখ হতে রাজ্জাকের বাড়ির অভিমুখে ইট সোলিং। বাস্তবে একটি ইটও বসেনি।
৪৩ হাজার ৩শ’ টাকা ব্যয়ে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মুকুন্দপুর পুরাতন শিব মন্দির সংস্কার। কাজ না করে সে টাকাও আত্মসাৎ করেছে চেয়ারম্যান।
০৫ ওয়ার্ডের দেয়া সামছুর সরদারের বাড়ির মুখ হতে ফরমান সরদারের বাড়ির অভিমুখে রাস্তা নির্মাণ। একই ওয়ার্ডের দেয়া ভুলনাথ কাকার বাড়ির মুখ হতে হায়দারের বাড়ির মুখ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার। অথচ বাস্তবে এই দুই জায়গায় কোন কাজ হয়নি।
১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নিজদেবপুর পিচের মুখ হতে ইউপি মহিলা মেম্বারের বাড়ির অভিমুখে নতুন ইট সোলিং রাস্তা নির্মাণ। একই ওয়ার্ডের মসজিদের সামনে থেকে মথুরেশপুর ইউনিয়নের ৭,৮ ও ৯ নম্বর সংরক্ষিত মহিলা সদস্য’র বাড়ির অভিমুখ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৮ মে. টন। দুই জায়গায় বাস্তবে কোন কাজ নেই।
১ নম্বর ওয়ার্ডের পোর্ট প্রাথমিক স্কুলের সামনে হতে মুনজুর গাজীর বাড়ি পর্যন্ত নতুন ইটের রাস্তা নির্মাণ (পাকা রাস্তা) তবে ইট বসানোর পরে ইট অন্যত্র উঠিয়ে নিয়ে যায়।
এছাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান গাইন ভিন্ন ভিন্ন নাম পরিবর্তন করে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করেছে বলে জানান তিনি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন নাজিমগঞ্জ বাজার কমিটির সাবেক সভাপতি ফিরোজ করিব কাজল, স্থানীয় আবু তালেবসহ ইউনিয়নের শতাধিক গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
এদিকে এসব ব্যাপারে চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান গাইনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ গুলো তোলা হচ্ছে সেগুলো মিথ্যা। আমার প্রতিপক্ষরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।