নিজস্ব প্রতিনিধি : একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে এক পরিবারের ৫ সদস্যের। লেখা পড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম দুই মেয়ের। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে নিয়তির কাছে হার মানতে হয়েছে তাদের। বিভিন্ন পত্রিকায় ও মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ হলেও চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসেনি কেউ।
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ২নং জালালাবাদ ইউনিয়নের জালালাবাদ গ্রামের দুই কিডনি বিকল হয়ে মারা যাওয়ার পর সহায় সম্বল হারিয়ে পথে বসেছে তার পরিবার। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার সময় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আব্দুল হামিদ।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৪৩ বছর এবং পাঁচ সদস্যের হতদরিদ্র পরিবারে একমাত্র আয়-উপার্জনের লোক ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে ৫ সদস্য নিয়ে খুব হতাশায় দিন পার করছে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, অসুস্থতার কারণে গত রমজান মাসে বিদেশ থেকে বাড়ি ফিরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাতক্ষীরা সংগ্রাম হাসপাতাল, যশোর কুইন্স হাসপাতাল, খুলনা কমিউনিটি সার্জিক্যাল ট্রমা সেন্টার, ইনসাফ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিতে গিয়ে প্রায় ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে আব্দুল হামিদের পরিবারের। ফলে তাঁদের আর কোনো অর্থ সম্পদ না থাকায় অনাহারে দিন পার করতে হচ্ছে।
সরেজমিনে হামিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ২ শতক জায়গার ওপর ভাঙাচোরা মাটির ঘরে ৫ সদস্য বসে আছেন। ঘরের চালে ব্যবহৃত বাঁশগুলো নষ্ট ও ঘরের ছাউনিতে দেওয়া টালিগুলো ভেঙে যাওয়ায় হালকা বৃষ্টিতে ছিদ্র দিয়ে ঘরের চারদিকে বৃষ্টি পড়ে। কেউ খাবারের জন্য সাহায্য করলে তাঁদের খাওয়া হয়। না হলে অনাহারে দিন পার করেন।
মরহুম আব্দুল হামিদের বাবা বৃদ্ধ নজির উদ্দিন (৭০) জানান, একমাত্র ছেলে আব্দুল হামিদ জীবিকার সন্ধানে পরিবারের অভাব মেটাতে গত ৬ বছর আগে মালয়েশিয়াতে কাজ করে ঋণের টাকা পরিশোধ করলেও পরিবারের জন্য কোনো সম্পদ গড়তে পারেনি। গত ৮ মাস আগে মালয়েশিয়ায় থাকা অবস্থায় অসুস্থ হলে চিকিৎসকের পরামর্শে জানতে পারে তাঁর দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। পরে দেশে ফিরে এসে যেটুকু সম্পত্তি ছিল সেটুকুও চিকিৎসার জন্য বিক্রি করে দেয়। সে মারা যাওয়াতে পরিবারের পাঁচ সদস্যকে অনাহারে দিন পার করতে হচ্ছে।
নাজির উদ্দীন আরও বলেন, বৃদ্ধ বয়সে কাজ করে অর্থ উপার্জন করার মতো শক্তি নাই। এমনকি আয় রোজগার করার একমাত্র অবলম্বন আব্দুল হামিদ ছাড়া আরও কোনো সন্তানও আমার নাই। বিদেশে থেকে যা টাকা জমিয়েছিল চিকিৎসায় সবশেষ হয়ে গেছে। এখন একমাত্র অবলম্বন ছেলের বউ ছাড়া আর আমাদের দেখার মতো কেউ নেই।
হামিদের স্ত্রী নাজমা খাতুন বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি, স্কুল পড়ুয়া দুই মেয়েকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে। কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আমার স্বামীর দুইটা কিডনি অপারেশন করে বদলানোর জন্য ১৬ লাখ টাকার মতো খরচ হবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু টাকার অভাবে আজ আমার স্বামী মারা গেছেন। বড় মেয়ে ও আমি দরজি কাজ করতে পারি। সে কাজ করে কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। কেউ সহায়তা না করলে স্কুল পড়ুয়া দুই মেয়ে ও বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। এ জন্য সহায়তা পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও হৃদয়বান মানুষের কাছে সহযোগিতা কামনা করছি।
মৃতের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে জান্নাতুন নাহার বলেন, বাবা অসুস্থ হওয়ার পর থেকে বাড়িতে কোনো চাল, বাজার খরচের টাকা না থাকাই দীর্ঘ তিন মাস যাবৎ ফুফুদের বাড়িতে থেকে বাবার কোনোরকম চিকিৎসা করিয়েছি। অর্থের অভাবে বাবাকে বাঁচাতে পারিনি। এখন আমাদের দুই বোনের লেখাপড়াটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সকলে সহযোগিতা না করলে আর হয়তো আমাদের লেখাপড়াটা চিরকাল স্বপ্ন হয়ে থাকবে।
এ বিষয়ে জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান নিশান বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে যথা সম্ভব সাহায্য করা হবে।
কলারোয়া উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা নুরে আলম নাহীদ বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আব্দুল হামিদের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। তবে তাঁদের জন্য সমাজের বিত্তবান মানুষের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। সাহায্য পেলে বৃদ্ধ মা-বাবা ভালো থাকবে এবং দুই স্কুল পড়ুয়া মেয়ে আবার আগের মতো লেখাপড়ার সুযোগ পাবে।