ন্যাশনাল ডেস্ক : ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) এর সেন্টার ফর ক্রিটিক্যাল অ্যান্ড কোয়ালিটেটিভ স্টাডিজ-এর আয়োজনে “এ হিউম্যান রাইটস বেসড অ্যাপ্রোচ টু মিস ইনফরমেশন” শীর্ষক একটি অনলাইন সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত যুম অ্যাপের মাধ্যমে এ অনলাইন সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, সামাজিক মাধ্যম বিশেষজ্ঞ, মিডিয়া ব্যক্তিত্বএবং সাংবাদিকরা যোগদেন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের উপর অপতথ্যের প্রভাব সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। এছাড়া তৃণমূল পর্যায়ের ৪০টি নিউজ পোর্টাল থেকে পঞ্চাশেরও বেশি সাংবাদিক সভাটিতে অংশ নেন যারা ফেসবুকের সহায়তায় ইউল্যাব আয়োজিত বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণে ইতিপূর্বে অংশ নিয়েছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট। এছাড়া অতিথি বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফেসবুকের মিসইনফরমেশন প্রোডাক্ট পলিসি ম্যানেজার জেনা হ্যান্ড এবং ফেসবুক বাংলাদেশের পাবলিক পলিসি প্রধান সাভানাজ রশিদ দিয়া।
স্বাগত বক্তব্যে ইউল্যাবের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের বিশেষ উপদেষ্টা অধ্যাপক ইমরান রহমান বলেন, ইউল্যাব প্রতিটি মানুষের মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক সচেতনতা বিকাশে কাজ করছে। এই মিশনের অংশ হিসাবে, ফেসবুক ইউল্যাবের অন্যতম গবেষণাকেন্দ্র সিকিউএসকে ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবং একটি স্বাস্থ্যকর তথ্য ইকো-সিস্টেমও নিরাপদ সাইবার জগৎ গড়ে তুলতে তৃণমূল নিউজ পোর্টাল এবং মানবাধিকার কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদানে সহায়তা করেছে।
সভায় ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া তার মূল বক্তব্যে উল্লেখ করেন, অপতথ্য বা গুজবের সঠিক সংজ্ঞা নির্ধারণ করা খুবই কঠিন, একই সাথে আমাদের বুঝতে হবে ‘মানবাধিকার’ এর অর্থ কি। আমাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা জনিত সমস্যাও রয়েছে। ফলস্বরূপ, গুজব বা অপতথ্যের ওপর ভিত্তি করে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা উচিত নয় কারণ আমরা সব সময় নিশ্চিত হতে পারি না যে এই গুজবের উৎস কে বা কোথায়। ইতিপূর্বে অনেক নিরপরাধ মানুষ, এমনকি যাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই তাদের ও জেলে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আদালত না বলা পর্যন্ত আমরা অপতথ্যের উৎস কে তা বিচার করতেপারি না।
জেনা হ্যান্ড তার বক্তৃতায় স্পষ্ট করেছেন যে, ফেসবুক তিন ভাবে অপতথ্যকে মোকাবেলা করে, যথা: সতর্কীকরণ লেভেল দেয়া, বিস্তার কমিয়ে দেয়া এবং সরিয়ে ফেলা। তিনি বলেন, ফেসবুক এমন সব ভুল তথ্য সরিয়ে দেয় যা আসন্ন শারীরিক ক্ষতির ঝুঁকি, বিভ্রান্তিকর/বিকৃত কন্টেন্ট এবং যা মানুষকে সহিংস করে তুলতে পারে।
সাভানাজ রশিদ দিয়া বলেন, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ফেসবুক কার্যত কখনোই সত্য-মিথ্যার সালিশ কেন্দ্র হতে পারে না। ভুল তথ্য/গুজব মোকাবেলায় পুরো সমাজের সহযোগিতা প্রয়োজন। এই কারণে ফেসবুক বাংলাদেশে ভুলতথ্য মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় বিশেষজ্ঞ এবং ফ্যাক্ট-চেকারদের সাথে কাজ করে। এসময় তিনি আরও বলেন, মূলধারার মিডিয়ার উচিৎ মানুষের কাছে সঠিক তথ্য পরিবেশন করা এবং ভুল তথ্য সনাক্ত করতে সহায়তা করা।
মানবাধিকারকর্মীদের মধ্যে উক্ত সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন রেজাউর রহমান লেনিন, মুস্তাইন জহির, সাইমুম রেজা তালুকদার, সিমু নাসের এবং ফেরদৌস আরা রুমি। তাঁরা আলাদাভাবে অংশগ্রহণকারীদের সাথে ছোট ছোট দলে মতবিনিময় করেন।
প্রকল্পের প্রধান ড. সুমন রহমান বলেন,ইউল্যাব নভেম্বর ২০২০ থেকে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের অংশ হিসাবে তারা ১৯টি জেলার ৫১টি নিউজ পোর্টালের ৬৭জন সাংবাদিককে তথ্য পরিবেশনে সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজনীয়তা, মানবাধিকার লঙ্ঘনে অপতথ্যের প্রভাব, ডিজিটাল মিডিয়া সাক্ষরতা, তথ্য যাচাই এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।