আশাশুনি প্রতিনিধি: আশাশুনির তুয়ারডাঙ্গায় মেইন সড়কের কয়েক ফুট দূরে ও বহু ঘরবাড়ি বেষ্টিত পুকুর থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে ভূগর্ভের বালি উত্তোলন করা হচ্ছে।
প্রকাশ্যে সরকারি নির্দেশকে তোয়াক্কা না করে বালু উত্তোলনের ঘটনায় এলাকা বাসীর মধ্যে আইন অমান্য করার প্রবণতা সৃষ্টির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গোয়ালডাঙ্গা টু প্রতাপনগর মেইন সড়কের গা ঘেষে তুয়ারডাঙ্গা গ্রামে সরকারি পুকুর অবস্থিত। সড়ক থেকে মাত্র ১০/১৫ ফুট দূরে পুকুরে ড্রেজার মেশিন বসানো হয়েছে। পুকুরের ৩ পাশে খুবই নিকটবর্তী অনেকগুলো ঘরবাড়ি রয়েছে। রয়েছে তুয়ারডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়। একেবারে লোকালয়ের মধ্যে ভূগর্ভের বালু উত্তোলন করার দুঃসাহসিকতা এলাকা বাসীকে হতবাক করে দিয়েছে। প্রায় ১০/১৫ দিন ধরে মেশিন ফিট করে বালু উত্তোলন করে পাশের মাঠ ভরাট করার কাজ করা হচ্ছে। লক্ষাধিক টাকার বাজেট নিয়ে বালি উত্তোলনের কাজে হাত দেওয়া হয়েছে।
অবৈধ বালু উত্তোলন রোধে উপজেলা প্রশাসন ইতিপূর্বে যথেষ্ট ভ‚মিকা নেওয়ায় উপজেলার অনেক স্থানে বালু উত্তোলন বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে উপজেলার অনেক ইউনিয়নে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। লোকালয়ের পুকুর থেকে, মাছের ঘের থেকে, খালবিল থেকে, নদী থেকে এমনকি নদীর চর থেকে বালু উত্তোলনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বালু উত্তোলন করে দেওয়ার জন্য অনেকগুলো মেশিন মালিক মেশিন নিয়ে সবসময় প্রস্তুত রয়েছে। কখনো ছুটির দিনে, কখনো একটু আড়ালে মেশিন বসিয়ে, কখনো প্রকাশ্যে মেশিন বসিয়ে ভূগর্ভের বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এনিয়ে কথা বলতে গেলে কখনো ডিসি সাহেবের অনুমতি আছে, কখনো উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি আছে, আবার কখনো কারো মাধ্যমে উপরে কথা বলা হয়েছে এমন বাহনা করে মানুষকে ভুল বুঝানো হয়ে থাকে।
এলাকার কয়েকজন সচেতন ব্যক্তি জানান, যেখানে “ বালুমহল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০” রয়েছে, সেখানে এমনি ভাবে ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে লোকালয় থেকে কিভাবে বালু উত্তোলন করে পার পেয়ে যাচ্ছে বোধোদয় হচ্ছেনা তাদের।
এব্যাপারে স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুব্রত কুমার জানান, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আশীষ কুমার মন্ডল ও ইউপি সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম বালু উত্তোলনের কাজ করাচ্ছেন। তাদের কাছে শুনলে ভাল হয়। তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ইতিপূর্বে পাশের পুকুর থেকে বালু উত্তোলন করা হয়েছে, যা এই পুকুরের থেকেও স্পর্শকাতর ছিল। সেখানে কিছুই হয়নি, এখানে বাধা কেন?
স্কুলের সভাপতি আশীষ কুমার মন্ডল ও ইউপি সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম জানান, কমিটি ও গ্রামের লোকজন মিলে চাঁদা তুলে ও মাঠে মালামাল রাখার জন্য টাকা পেয়ে একাজ করা হচ্ছে। লোকালয়ের মধ্যে ভূগর্ভের বালু উত্তোলন করা অপরাধ ও নিষেধ থাকা স্বত্বেও কিভাবে অন্যায় কাজ করাচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সদুত্তর না দিতে পারলেও ইনিয়ে বিনিয়ে কারো কারো জানানো হয়েছে এমন কথা বলার চেষ্টা করেন।
এলাকা বাসীর দাবী, সরকারি নির্দেশনা মানা সকলের জন্য অবশ্য কর্তব্য। এখানে রাস্তার পাশে ও ঘরবাড়ি বেষ্টিত পুকর থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে পুকুরে ধস নিলে ঘরবাড়ি, রাস্তা ও স্কুল ভবনসহ অনেক কিছুর ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। এর দায়দায়িত্ব কে নেবে? মাঠ ভরাটের জন্য ভূগর্ভের বালু না নিয়ে বালু মহল থেকে বালু উত্তোলন না করে এহেন অপরাধ যদি প্রতিরোধ না হয় তা হলে এলাকায় অনিয়ম প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। প্রয়োজনে তারা বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন বলেও জানান।