বিভিন্ন সূত্র ও ইউকিপিডিয়া থেকে জানা যায়, কাঁকশিয়ালী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি অন্যতম নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৮ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৮০ মিটার এব প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা ‘‘পাউবো’’ কর্তৃক কাকশিয়ালী নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং- ১৬।
কালিন্দীকে কলাগাছিয়ার সাথে যোগ করার আগে কালিগঞ্জের যমুনা থেকে একটি খাল কেটে পূর্ব দিকে উজিরপুরের নিকটে গলঘেসিয়ার সাথে যুক্ত করা হয়। বৃটিশ ইঞ্জিনিয়ার উইনিয়াম ককশাল এই খাল খনন করেন। ককশিয়াল সাহেবের নামানুসারে খালটি কাঁকশিয়ালী নদী নামে পরিচিত লাভ করে।
সরেজমিন কালিগঞ্জের নাজিমগঞ্জ, উত্তর কালিগঞ্জ বাজার, গোলখালি, উত্তর শ্রীপুর, ঘোজাডাঙা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীর চর দখল করে প্রভাবশালীরা মৎস্যঘের তৈরি করেছে। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে ইটের ভাটা আর বাড়িঘর। এছাড়া নদীর দু’পাশ দিয়ে অসংখ্য ভাসমান টয়লেট। উত্তর কালিগঞ্জ বাজারের পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা মুরগির বজ্র সরাসরি নদীতে ফেলছে। নাজিমগঞ্জ বাজারের কয়েকটি চাউলের মিলের অপ্রয়োজনীয় ময়লা আবজর্না ফেলা হয় নদীতে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় টয়লেট বানিয়ে তার পাইপ সরাসরি নদীতে ফেলা হয়েছে।
যমুনা বাঁচাও আন্দোলনের কালিগঞ্জ উপজেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাফরুল্লাহ ইব্রাহিম বলেন, একসময় কাঁকশিয়ালী নদীর ভরা যৌবন ছিলো। এক কালের প্রমত্তা কাঁকশিয়ালী নদী দূষণ আর দখলের কারণে নাব্যতা হারিয়েছে। নদীর দু’পাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইটের ভাটা, প্রভাবশালীরা নদীর চর দখল করে মৎস্যঘের তৈরি করেছে। এছাড়া নদীর চর দখল করে অসংখ্য বাড়ি-ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। সরকারিভাবে দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় নদী লুটে খাচ্ছে দখলদাররা।
স্থানীয় শফিউল্লাহ, আব্দুর রহমান, মামুন হোসেন, রেজাউল ইসলাম, ওমর ফারুকসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, কাঁকশিয়ালী নদী দিন দিন মরে যাচ্ছে। এইভাবে চলতে থাকলে নদীর অস্তিত্ব এক সময় হারিয়ে যাবে। কতিপয় স্বার্থানেশী ভূমিদস্যু নদী দখলের উৎসবে মেতে উঠেছে। জনগুরুত্ব¡পূর্ণ এই নদী দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করায় পানি প্রবাহ চরমভাবে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। এর ফলে এই অঞ্চলের মানুষ চরম ক্ষতির সম্মুখিন হলেও সংশ্লিষ্ট্ কর্তৃপক্ষ রয়েছে নীরব দর্শকের ভূমিকায়। অবৈধ দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তারা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছে।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কালিগঞ্জে নদী ও খাল দখল করে যেসব প্রতিষ্ঠান বা বসতঘর নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলোকে তালিকা করে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জন্য সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা বরাবর পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক স্যারের অনুমতি পেলে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।