সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১
কালিগঞ্জে ৫০ হাজার টাকায় ধামাচাপা পড়েছে স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা
নিজস্ব প্রতিনিধি: কালিগঞ্জে উপরিদোষ ভালো করানোর নামে দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে বাবু (২৩) নামে কথিত কবিরাজের বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে ঘটনাটি ধামাচাপা নিতে স্থানীয় ইউপি মেম্বার আবু বক্কার ও দফাদার তপন অর্ধলক্ষ টাকার বাণিজ্যে করেছে বলে জানা গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৮ সেপ্টেম্বর কালিগঞ্জের চাম্পাফুল ইউনিয়নে ঘুষুড়ি এলাকায়। সরেজমিন গেলে ভুক্তভোগী স্কুল ছাত্রীর বাবা ও মা জানান, উপজেলার তারালী ইউনিয়নের বরেয়া গ্রামের মৃত বয়ে গাজীর ছেলে কথিত কবিরাজ বাবু (২৩) তাদের পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে গত ১৮ সেপ্টেম্বর সকালে কবিরাজ তাদের বাড়িতে আসে। ওই সময়ে তাদের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীর উপরিদোষ আছে, এক্ষুনি ঝাডফুঁক না করালে মেয়ে বাঁচবে না বলে ভয় দেখায়। এরপর তাদের মেয়ে এবং মেয়ের ছোট আরেকটি বোনকে সাথে নিয়ে চিকিৎসা করানোর নামে মোটরসাইকেলে করে কবিরাজ তার বাড়িতে নিয়ে যায়। বাড়িতে নিয়ে ভালো-মন্দ খাবারের প্রলোভন দেখিয়ে তাদেরকে ঘুমের ওষুধ বা অন্য কোন চেতনানাশক জাতীয় ওষুধ সেবন করিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। তারা ঘুমিয়ে পড়লে বাবু কবিরাজ তাদের মেয়েকে প্রথমে ধর্ষণ প্রচেষ্টায় রক্তাক্ত হলে পরে পায়ুুপথ দিয়ে ধর্ষণ করে রক্তাক্ত জখম করে। বিকেলে মেয়ের ঘুম ভাঙলে সে প্রচন্ড যন্ত্রনায় কান্নাকাটি শুরু করলে কবিরাজ বাবু তাদের দু’জনকে দ্রæত বাড়িতে রেখে চলে যায়। ওই সময় মেয়ে বাড়িতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ে তার মাকে জানালে পরিবারের সদস্যরা দ্রæত স্থানীয় এক গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। তখন মেম্বার চেয়ারম্যান সাহেব কে না জানিয়ে দফাদার তপনকে সংবাদ দিয়ে তার পরদিন বাবুকে খবর দিয়ে আমার বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়িতে এনে মেম্বর, চৌকিদারসহ স্থানীয় একটি গ্রæপ কবিরাজ বাবুকে উত্তম-মধ্যম দিয়ে মোটরসাইকেল আটকে ৫০ হাজার টাকা না দিলে তাকে থানায় দেওয়ার ভয় দেখায়। এরপর মেম্বর এবং তপন দফাদার এসে আমাদের হাতে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে ১৫ হাজার টাকা তুলে দিয়ে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে এবং কাউকে কিছু না জানাতে বলে। এদিকে এ বিষয়টি নিয়ে দফাদার তপনের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্রীর বাবাকে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা হয়েছিল। পরে ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আমি থানার তরুণ বাবুকে জানিয়েছিলাম। তিনি কোন পদক্ষেপ নেননি। পরে আমি মেম্বরকে জানালে মেম্বর এসে মীমাংসা করে দেন। ইউপি সদস্য আবু বক্কারের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, দফাদার তপন আমাকে বিষয়টি জানালে আমি ঘটনাস্থলে গেলে তারা আমার মাধ্যমে ছাত্রীর পিতা-মাতার হাতে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে মিমাংসা হয়ে গেছে বলে আমাকে জানায়। বাকি থানা ফাঁড়ি তপন দেখবেন বলে কবিরাজকে ছেড়ে দেওয়া হয়। একটি ধর্ষণের ঘটনা ইউপি সদস্য হয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে জরিমানা দিয়ে মিমাংসা করতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি ইউপি সদস্য আবু বক্কার। চাম্পাফুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক গাইনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি প্রথম আপনাদের মুখ থেকে এই বিষয়টি জানলাম। তখন পাশে দাঁডানো দফাদার তপনকে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এতবড় একটা ঘটনা আমাকে জানালে না কেন? তখন তফাদার তপন ভুল স্বীকার করেন। বিষয়টি নিয়ে থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এঘটনায় কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 8,407,097 total views, 5,516 views today |
|
|
|