Site icon suprovatsatkhira.com

কালিগঞ্জের সেই কথিত ডাক্তারের পক্ষে সাফাই গেয়ে বাবার সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিনিধি: গত ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর দৈনিক সুপ্রভাত সাতক্ষীরা সহ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে অনুসন্ধানী মূলক কালিগঞ্জে এক ভূয়া ডাক্তার ও এক ভুয়া কবিরাজকে নিয়ে প্রতিবেদন ছাপা হয়। ওই প্রতিবেদন প্রচারের পর এলাকায় তুমুল আলোচনার ঝড় ওঠলে কথিত কবিরাজ এলাকা ছেড়ে পালায় এবং ভূয়া ডাক্তার রেজাউলের গাত্রদাহ শুরু হয়ে যায়।

সংবাদ কর্মীরা ভূয়া এবং টাকা দাবি করেছে এমন অপবাদ দিয়ে সম্মেলনের আয়োজন করে ভুয়া ডাক্তার রেজাউলের বাবা সামছুর রহমান তরফদার। মঙ্গলবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের আব্দুল মোতালেব মিলনায়তনে লিখিত বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, ‘আমার পুত্র মোঃ রেজাউল করীম ২০০৯ সালে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড, ঢাকার অধীনে ডিপ্লোমা ইন হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন এন্ড সার্জারী পাশ করে ২ বছর ইর্ন্টানি করে চেম্বার দেওয়ার অনুমতি পেয়ে কালিগঞ্জের প্রত্যান্ত অঞ্চল কৃষ্ণনগরে কোহিনুর হোমিও হল খুলে ১০ বছর ধরে গরীব ও অসহায় মানুষের স্বল্প মূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমার পুত্রের হোমিও চিকিৎসা করার সকল যোগ্যতা এবং সনদপত্র রয়েছে। সুতরাং সে ভূয়া নয়। যারা ভূয়া বানানোর চেষ্টা করছেন প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আদালতের স্বরনাপন্ন হবো আমি।’
এ দিকে হাইকোর্ট এর একটি রিটে বলা হয়েছে,-‘বিএমডিসি অ্যাক্ট-২০১০-এর সেকশন ২৯ অনুযায়ী বিএমডিসির নিবন্ধন ও অনুমোদন ছাড়া কোনো চিকিৎসক তার নামের আগে ডাক্তার লিখতে পারবেন না। এমনকি কোনো পদবি, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণের নামও ব্যবহার করতে পারবেন না। সম্প্রতি হাইকোর্টও একটি রিটের শুনানি করে এমন আদেশই দিয়েছেন। জনস্বার্থে করা একটি রিটের শুনানি করে এ বছরের ২০ জানুয়ারি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন।’

এ রিটের আইনজীবী মো. জে আর খান রবিন বলেন, ‘অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সধারীরাই কেবল নামের সঙ্গে ডাক্তার লিখতে পারবেন না, বিষয়টা তা না। অনুমোদনহীনরা তো পারবেনই না, স্বীকৃত কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করে বিএমডিসির নিবন্ধন ও অনুমোদন না পেলে কেউ ডাক্তার লিখতে পারবেন না।’
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে প্যারামেডিকেল, ফিজিওথেরাপি কিংবা হোমিওপ্যাথি পাস করে নামের সঙ্গে ডাক্তার লিখে সাইনবোর্ড ও প্যাড ব্যবহার করছেন। তারা কি এটা পারবেন? এমন প্রশ্নে জবাবে আইনজীবী রবিন বলেন, ‘বিএমডিসির অনুমোদন ছাড়া অর্থাৎ এমবিবিএস ও বিডিএস (ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি) পাস ছাড়া কেউ ডাক্তার পদবি ধারণ করতে পারবেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক ডাক্তারই পোস্ট-গ্রাজুয়েশন না করেও ‘বিশেষজ্ঞ’ শব্দ ব্যবহার করেন। যা জনসাধারণের সঙ্গে প্রতারণার শামিল, বিএমডিসির আইনের পরিপন্থী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অনেক ডাক্তার ওই নির্দেশ অমান্য করে তাদের ভিজিটিং কার্ড, সাইনবোর্ড এমনকি প্রেসক্রিপশন প্যাডেও এসব প্রশিক্ষণের নাম উল্লেখ করায় সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে অপ চিকিৎসারও শিকার হন।’
সারা দেশে অনুমোদন ও মানহীন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের আবেদনের বিষয়ে আইনজীবী রবিন বলে, ‘মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে দেশের সব অনুমোদন ও মানহীন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন।’

জে আর খান রবিন এ বিষয়ে আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘দ্য মেডিকেল প্রাকটিশনার অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস (রেগুলেশন) অধ্যাদেশ, ১৯৮২-এর ৮ ধারা অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া কোনো প্রাইভেট ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। ৯ ধারা অনুযায়ী, শর্তাবলী পূরণ না হলে কর্তৃপক্ষ কোনো প্রাইভেট ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার অনুমতি প্রদান করবেন না। এ বিধান থাকা সত্তে¡ও বর্তমানে ব্যাঙের ছাতা মতো বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। যার অধিকাংশই অনুমোদনহীন ও মানহীন।’

কথিত রেজাউল এবং তার স্ত্রী ‘ডাক্তার’না হয়েও কিভাবে নামের আগে ডাক্তার ব্যবহার করে সাইনবোর্ড এবং ন্যামপ্লেটে ব্যবহার করছিলো এবং মানুষকে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিচ্ছিল সেটার অনুসন্ধানী রিপোর্ট পত্রিকাতে ছাপা হয়। এদিকে এসব ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শেখ তৈয়েবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকে নামের আগে ডাক্তার লিখে চিকিৎসা সেবার নামে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করছে। যেটি খুবি দু:খ জনক। আমি সিভিল সার্জন স্যারের সাথে কথা বলে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় এসব চিকিৎসক নামধারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version