নিজস্ব প্রতিবেদক: কলারোয়ায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ৫০ জন আসামির মধ্যে ছয়জনের আপিল আবেদন না’মঞ্জুর করে সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম মোঃ হুময়ায়ুন কবীরের আদেশ বহালের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ শেখ মোঃ মফিজুর রহমান এক জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন। আপিল বহাল থাকা আসামিরা হলেন, অ্যাড. আব্দুস সামাদ, মোঃ গোলাম রসুল, জহুরুল ইসলাম, সাহাবুদ্দিন, কলারোয়ার কয়লা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রকিব ও মনিরুল ইসলাম। মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরায় মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে হাসপাতালে দেখে মাগুরা ফিরে যাবার পথে কলারোয়ায় সন্ত্রাসীদের হামলা শিকার হন।
এ ঘটনায় কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ মোসলেমউদ্দিন ২৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। এ মামলা থানায় রেকর্ড না হওয়ায় তিনি নালিশী আদালত সাতক্ষীরায় মামলাটি করেন। পরবর্তীতে এ মামলা খারিজ হয়ে গেলে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর ফের মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। এসময় তদন্তকারী কর্মকর্তা সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অবিযোগপত্র দাখিল করেন। পরবর্তীতে মামলাটি ২০১৭ সালে আবার উচ্চ আদালতে স্থগিত হয়। ২৭ জানুয়ারি যুক্তি তর্ক অনুষ্ঠিত হয়। ২০ জন সাক্ষী, চারজন সাফাই সাক্ষী ও মামলার নথি পর্যালোচনা শেষে চলতি বছরের ৪ ফেব্রæয়ারি জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলামসহ ৫০জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। এর মধ্যে বর্তমানে ৩৭ জন কারাগারে ১২ জন পলাতক রয়েছেন। কারাগারে থাকা আসামিরা মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে মোট ১৭টি আপিল মামলা করেন।
এরমধ্যে চার বছর করে সাজাপ্রাপ্ত আসামি অ্যাড. আব্দুস সাত্তারের পক্ষে গত ১৫ ফেব্রæয়ারি আপিল ২৭/২১, অ্যাড. আব্দুস সামাদের পক্ষে ১৬ ফেব্রæয়ারি আপিল ৩৩/২১, আসামী গোলাম রসুলের পক্ষে ১৪ ফেব্রæয়ারি ২৫/২১ , আসামী জহুরুল ইসলাম, সাহাবুদ্দিন, কয়লা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রকিব ও মনিরুল ইসলামের পক্ষে ৪৩/২১ আপিল মামলা দায়ের করা হয়। জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে আপিলে জামিন না পাওয়ায় ওই আসামিরা মহামান্য হাইকোর্টে গেলে জামিনাদেশ পান। ওই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল করলে মহামান্য হাইকোর্টের জামিন আদেশ বাতিল করে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওই চারটি আপিল মামলা নিষ্পত্তির জন্য সংশি¬ষ্ট জেলা ও দায়রা জজকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে আপিল মামলার সম্পর্কে জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ বলেন, এ রায় যুগান্তকারি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ শেখ মোঃ মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, এ রায় বহাল থাকায় আগামীতে যাতে শুধুমাত্র একজন বিরোধী দলীয় নেত্রী নয়, একজন সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধেও কেউ এ ধরনের হামলার সাহস দেখাতে পারবে না। আপিলকারীদের পক্ষে আইনজীবী অ্যাড. আব্দুল মজিদ(২) বলেন, এ রায় এ তারা খুশী হতে পারেননি। আদেশের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার পর পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, কলারায়ায় শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় অস্ত্র ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনে আরো দু’টি মামলার (এসটিসি ২০৭/১৫ ও এসটিসি ২০৮/১৫) নথি উচ্চ আদালত থেকে ফেরৎ না আসায় বিচার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত আসামির মধ্যে মাহাফুজুর রহমান সাবু কারান্তরীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। ইতিমধ্যেই মামলার বাদি মোসলেম কমাÐারের মৃত্যু হয়েছে।