শেখ শাওন আহমেদ সোহাগ: দখলদার চক্রের জবর দখল এবং নেট-পাটায় কালিগঞ্জের রতনপুর ইউনিয়নের ১০ টি গ্রামের হাজারো মানুষ পানিতে বসবাস করছে। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, মাছের ঘের আর ফসলের জমি পানিতে একাকার হয়ে গেছে। এলাকায় ব্যাপকহারে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ। ফলে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে উপজেলার মাছরাংগা, চকপরানপুর, দত্তনগর, সৈয়দালীপুর, চকরামগোবিন্দপুর, নাটুয়ারবেড়, খড়িতলা, টুপদিয়া, কাটুনিয়া, সুবর্ণগাছী, তেরুলিয়াসহ আরও কয়েকটি গ্রামের সাধারণ মানুষ।
দখল আর নেট-পাটায় শ্বাসরুদ্ধ ও গতিহীন হয়ে পড়েছে এই এলাকার প্রবাহিত সরকারি খাল গুলো। বিশেষ করে বাইনতলা খাল। একসময়ে এই বাইনতলা খালের পানি নিয়ে ফসলের চাষাবাদ, গোসল, মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় কাজে ও বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের কাজে ব্যবহার হতো। তবে দু:খের বিষয় কয়েক বছর যাবত স্থানীয় রতনপুর ইউনিয়নের সৈয়দালীপুর গ্রামের আব্দুল বারী মোড়লের ছেলে শহিদুল ইসলাম (৪৫) ওরফে খাল শহীদের নেতৃত্বে কতিপয় খাল খাদক ১২ একরের সামান্য বেশি খাল ইজারা নিয়ে নেট-পাটা বসিয়ে ও বিভিন্ন স্থানে বেঁড়িবাধ নিয়ে খাল দখলের মহোৎসবে মেতে উঠেছে।
যার কারণে খালে পানির প্রবাহ না থাকায় খালের তলদেশ ভরাট হয়ে নাব্যতা হারানোর সাথে সাথে গতিহীন হয়ে পড়ায় এলাকা ভিত্তিক ক্রমশ বাড়ছে জলাবদ্ধতা। সামান্য বর্ষা হলেই প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম।
সরেজমিন এসব এলাকায় গেলে, স্থানীয় নেছার গাজী, আবু মুছা, নুরুজ্জামান, হাবিবুল্ল্যাহ, আবুর হাসান, আবুল কালাম, রবিউল ইসলামসহ শতাধিক ব্যক্তি জানান, কয়েক বছর যাবত শহিদুল ইসলাম (৪৫) ওরফে খাল শহীদের নেতৃত্বে কতিপয় খাল খাদক প্রায় ১০ কিলোমিটারের অধিক লম্বা বাইনতলা খালের মধ্যে মাত্র ১২ একরের সামান্য বেশি খাল ইজারা নিয়ে ৫ কিলোমিটারের বেশি এলাকা জবর দখল করে মাছ চাষ করছে।
খাল ইজারা নিয়ে সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে টোনা জাল ও পাটাতন নেটের বেড়া দিয়ে পানি নিষ্কাশনে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এতে কৃষিকাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এলাকায় পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। গতবারও প্রতিকারের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ করেও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে কোন লাভ হয়নি।
তারা আরও বলেন, খালে নদীর লোনা পানি তোলা হয়। যার কারণে এলাকার গাছ-পালা, ফসলের জমি, খাবার পানি সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। বর্ষা মৌসুমে নেট-পাটা নিয়ে পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি করায় গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে যাচ্ছে। অথচ খাল শহীদ দিদারছে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতা ছত্র-ছায়ায় থাকা খাল শহীদ দিন দিন খাল দখলের মহোৎসবে মেতে উঠেছে বলে জানান তারা।
এব্যাপারে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলামের কাছে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি বরাবরের মত রিসিভ করেননি। তবে জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির বলেন, আমি এখনি খোঁজ নিচ্ছি। ওই ইউনিয়নের জলাবন্ধতা দূর করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনাও দিচ্ছি।
এদিকে অভিযুক্ত শহিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চুনাখালি মৎস্যজিবি সমিতি ৬.১২ একর জমি ও চক-সন্তোষপুর মৎস্যজিবি সমবায় সমিতির নামে ৬.২৩ একর জমি ইজারা দিয়েছে সরকার। আমি এই দুই ক্লাবের উপদেষ্টা ও সদস্য। আমরা বৈধভাবে ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করছি। এমতাবস্থায় রতনপুর ইউনিয়নের ১০ গ্রামের মানুষ পানি নিষ্কাশনে জেলা প্রশাসকসহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।