জাহাঙ্গীর হোসেন লিটন, কলারোয়া প্রতিনিধি: কলারোয়ায় আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড লাগিয়ে অন্যের জমিসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুর রহমান রাতের আধারে পৌর আ.লীগের ৬ নং ওয়ার্ডের কার্যালয় লেখা সাইন বোর্ডটি স্থাপন করেন বলে অভিযোগ। গত ৬ আগস্ট দিবাগত রাতে কলারোয়া সাতক্ষীরা প্রধান সড়কের পাশে উপজেলার গোপীনাথপুর মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। উপজেলার ফয়জুল্যাপুর গ্রামের মৃত নাজিম উদ্দীন দফাদারের ছেলে আকিম উদ্দীন দফাদার জানান, গত ২০১২ সালে গোপিনাথপুর মৌজায় তিনি যশোর সাতক্ষীরা সড়কের পাশে ৪০ লাখ টাকা মূল্যে সাড়ে ২২ শতক জমি ক্রয় করেন। ওই জমির উপর তিনটি দোকান ছিলো। তিনি প্রতিমাসে ভাড়াটিয়ারদের নিকট থেকে নিয়মিত ভাড়াও গ্রহণ করতেন। এরই মধ্যে জমি ক্রয় করে তিনি দায় দেনা হয়ে পড়েন। দেনা পরিশোধ দেয়ার জন্য আয় রোজগারের জন্য তিনি সে সময় মালয়েশিয়ায় যান।
কিছু দিন পর ২০১৩ সালে এলাকায় সহিংসতাসহ নাশকতা শুরু হলে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুর রহমান ভাড়াটিয়াদের হুমকি দিয়ে ২০১৪ সালের আগস্ট মাস থেকে ভাড়া আদায় করে নিজে আত্মসাত করতে থাকে। এসময় দোকানগুলো সরকারি খাস জামিতে বলে ভাড়াটিয়াদের হুমকি দেন। সেখানে নতুন করে দোকান ঘর তৈরি করতে গেলে কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলিমুর রহমানের ভাই পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুর রহমান বাঁধা দেয়। এর আগে ঝামেলা এড়াতে পৌর কমিশনার আলফাজের মাধ্যমে তাকে ১৮ হাজার টাকাও প্রদান করা হয়।
গত ৫ আগস্ট নির্মাণ শ্রমিক নিয়ে দোকান ঘরের কাজ শুরু করলে খাস খতিয়ানের জমি বলে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল আমীন হোসেন মাপ জরিপ করে জমিটি খাস খতিয়ানের নয় জানিয়ে তাকে নির্মাণ করার অনুমোতি দেন।
নির্মাণ শ্রমিক পার্শ্ববর্তী পাথরঘাটা গ্রামের লিটন হোসেন (২৬) জানায়, এসি ল্যান্ড চলে যাওয়ার পর কাজ শুরু করলে আ.লীগ নেতা আজিজুর ১৫/১৬ জন লোক নিয়ে এসে তাকে লাথি মেরে ফেলে দেয়। এসময় কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামাদি ও কয়েক বস্তা সিমেন্টসহ ঘরের টিন নিয়ে যায় তারা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী শেখ রবিউল ইসলাম, সাবদুল আলীসহ অনেকেই জানান, জমিটির প্রকৃত মালিক আকিম উদ্দীন। গত ৬ তারিখে দুপুরে আ.লীগ নেতা আজিজুর রহমান ১৫/১৬ জন সন্ত্রাসী নিয়ে এসে জমির মালিককে খুন করে ফেলার জন্য খুঁজতে থাকে। এসময় তারা অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করে বলে ওই জমিতে ঘর করার চেষ্টা করলে আগামী ১৫ তারিখের মধ্যে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া হবে। আর যারা ঘর করার পক্ষে থাকবে তাদেরকেও একই কায়দায় শায়েস্তা করা হবে।
ভাড়াটিয়া চায়ের দোকানের মালিক শুভ, সাইকেল মিস্ত্রি মোহাসিন ও সেলুনের দোকান শ্যামল জানায় তাদের নিকট থেকে ১৪ সালের আগস্ট থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত আ.লীগ নেতা মাসিক ভাড়া নিয়ে আসছেন। তিনি ওই ঘরগুলো খাস জমিতে বলে তাদের জানিয়েছিল।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ৬ নং ওয়ার্ড আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম খোকন বলেন, রাতের আঁধারে অন্যের জমিতে পৌর কমিটির সভাপতি আজিজুর রহমান জমিসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে সাইন বোর্ড লাগিয়েছেন বলে লোকমুখে জানাতে পারেন। তবে তিনি জমির মালিকের পক্ষে। আওয়ামী লীগের সাইন বোর্ড দিয়ে ৬ নং ওয়ার্ডে কাউকে অন্যায় করতে দেয়া হবে না।
৬ নং ওয়ার্ড সভাপতি আলফাজ হোসেন বলেন, মাপ জরিপ হওয়ার পর জানা গেছে, জমির প্রকৃত মালিকই নির্মাণ কাজ করছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড দিয়ে কারা ওই জমিটি দখল করতে চাইছে তা তিনি জানেন না বলে জানান।
দলীয় সাইনবোর্ড দিয়ে জমি দখলের অভিযোগ ওঠা আ.লীগ নেতা আজিজুর রহমান বলেন, বিগত ২০ বছর ধরে সেখানে ওয়ার্ড আ.লীগের অফিস ছিলো। সম্প্রতি মাপ জরিপে অফিসটি সরকারি জমিতে পড়েছে। তাছাড়া কারোর ব্যক্তি মালিকানার জমিতে আমার যাওয়ার ইচ্ছে নেই। আমার দ্বারা কারোর কোন ক্ষতি হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলীমুর রহমান বলেন, ওই জমির মালিক জামায়াত করে। গত ২০১৩ সালে জামায়াত শিবির ওই মোড়ে একটি দোকানসহ বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। সেখানে গত ৩০ বছর ধরে ওয়ার্ড আ.লীগের অফিস আছে। ওই অফিসটি এখন সরকারি খাস জমির উপরই পড়েছে।
তবে, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামসহ অনেকেই জানান, ১৩ সালে নাশকতার পর সেখানে ওয়ার্ড আ.লীগের কার্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। সে সময় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ কার্যালয় করার জন্য ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। কার্যালয়ের ভিত নির্মাণ হওয়ার পর তিনি জানতে পারেন ওই জমিটি ব্যক্তি মালিকানাধীন। এসময় তিনি আর বরাদ্দ না বাড়িয়ে কাজটি বন্ধ রাখতে বলেন। ফলে সেখানে আর দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করা হয়নি।