জি এম মাছুম বিল্লাহ: বনবিভাগের স্টেশন অফিসগুলোতে দালালরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, কোন অবস্থায়ই বন্ধ হচ্ছে না দালালদের দৌরাত্ম্য। পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে স্টেশনের অফিস গুলোতে দালালদের আনাগোনা রীতিমতো চোখে পড়ার মতো। দালালদের কথা না শুনলে রীতি মত হয়রানির স্বীকার হতে হয় জেলেদের। চারটি স্টেশন নিয়ে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের কার্যক্রম। স্টেশনগুলোতে দুই ডজনের মতো দালাল সব সময়ই দেন দরবার করে থাকে। যার মধ্যে খোদ রেঞ্জ অফিসে অবস্থিত বুড়িগোয়ালিনী স্টেশনে শহিদুল মোল্লা,জালাল মোল্লা, হাসান সরদার, ইসমাইল সানা, আসাদুল ও মোকলেছুর।
কোবদক স্টেশনে লুৎফর ও মাসুম। কদমতলা স্টেশনে রফিকুল মোড়ল, মতিয়ার রহমান, আজিবার ও আমজাদ আলী। কৈখালী স্টেশনে শহীদুল ইসলাম, মহাসিন গাজী, সালাউদ্দিন ও বুলবুল। এসব দালালদের কথা মতো না চললে সুন্দর বনে প্রবেশে পাশ পেতে ও নদ নদীতে মাছ ধরার কাজে প্রতিনিয়ত হয়রানি হতে হয় জেলেদের। জেলেরা জানায়, দালালদের কারণে বনবিভাগের দেওয়া সরকারি সেবা পেতে বঞ্চিত হতে হয় তাদের। সুন্দরবনে প্রবেশ সরকারি নিষিদ্ধ চলাকালে ও অভয়ারণ্য এলাকায় মাছ, কাঁকড়া আহরণে বনবিভাগের কাছ থেকে প্রবেশের অনুমতির নামে হাতিয়ে নেয় লক্ষ লক্ষ টাকা।
ভ্রমণের জন্য নতুন বি এল সি, পুরাতন বিএলসি নবায়ন, জেলেদের সরকারি নিয়ম ছাড়া অতিরিক্ত টাকা নিয়ে থাকে তারা। সুন্দরবনের অভয়ারণ্য অবৈধভাবে মাছ ধরতে সহায়তাসহ জেলেদের নিরাপদে লোকালয়ে পৌঁছে দেয়ার জন্য কাজ করে থাকে এসব দালালরা। শুধু তাতেই ক্ষান্ত নয় তারা সুন্দরবনের টহলরত সকল প্রশাসনিক সহায়তা দেয়ার নামে জেলেদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। বনবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে দালালদের সখ্যতা আছে বলে জেলেরা তাদের হাতে জিম্মি থাকে।
এই দালাল চক্রটি বনবিভাগের নামে জেলেদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে গড়ে তুলছে সম্পদের পাহাড়। ছদ্ম নামে জেলে রুবেল হোসেন বলেন, দালালদের কারণে আমরা অফিসে যেতে পারি না। বনবিভাগের কোন কাজ করতে হলে দালালদের সাথে আগে যোগাযোগ করতে হয়। যদি তাদের সাথে যোগাযোগ না করা হয় তাহলে পরবর্তীতে বিভিন্নভাবে হয়রানি করবে বলে হুমকি দেয়।
ছদ্ম নাম মজিবার রহমান বলেন, বনবিভাগ থেকে দালাল মুক্ত না করলে আমরা সরকারি যে সেবাটা পাওয়া দরকার সেটা পাই না। দালাল মুক্ত করতে বনবিভাগের কাছে আবেদন জানালে বনবিভাগের দাবি কোন দালাল স্টেশনে প্রবেশ করে না। অর্থাৎ যা লাউ তাই কদু।
দালাল শহীদুল মোল্ল্যা বলেন,আমার দাদন দেওয়া বিএলসি আছে ২০০ পিছ। তাদের বনবিভাগ সংশ্লিষ্ট কাজ আমি করে দেই। এছাড়া স্টেশনে যাওয়া আমাদের নিষেধ না।
কদমতলার দালাল আজিবার মোবাইল ফোনে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, আমি আপনার সাথে মোবাইলে কথা বলবো না। সৎক্ষাতে কথা বলব। আমি সবসময় হরিনগর বাজারে থাকি আপনি আগামীকাল হরিনগর বাজারে আসেন সেখানে কথা হবে।
তবে সরেজমিনে দেখা গেছে বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন অফিসে বন বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে বসে তাদের দালালি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন চিহ্নিত একদল দালাল। সাধারণ বি এল সি ধারী জেলেরা বলেন আমরা বি এল সি ধারী হলেও সংশ্লিষ্ট সকল কাজ করাতে হয় দালালদের মাধ্যমে।
বনবিভাগ থেকে দালাল মুক্ত করার বিষয় জানতে চাইলে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মকর্তা এম এ হাসান বলেন, আমি দায়িত্ব আসার পরে সকল স্টেশনে দালাল প্রবেশ করতে নিষেধ করে দিয়েছি। এছাড়া জেলেদেরা সরাসরি স্টেশনে এসে তাদের প্রয়োজনে কাজ করে যাবে।