নুরুল ইসলাম, খাজরা (আশাশুনি) প্রতিনিধি: আশাশুনির খাজরায় প্রত্যন্ত দুর্গম অঞ্চল ফটিকখালীতে ধান ও মাছের সাথে সম্বনিত পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন ছোট বড় বর্গা চাষি। ফলে আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ায় অনেক চাষির মুখে হাসি ফুটেছে।
শুক্রবার (২০ আগস্ট) সকালে ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ফটিকখালী গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে চোখে পড়ে ক্ষেতের পরে ক্ষেত সবজি বাগান। বেগুন,আগাম জাতের টমেটো,শশা,করলা প্রভৃতির সবজি ক্ষেতে হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে।
নেট জাল দিয়ে বানানো মাচায় ঝুলছে লাউ,ধুন্দল। প্রান্তিক চাষি বলাই সানার মাচায় ঝুলছে পরীক্ষামূলক রোপণ করা তরমুজ ফল। এক ফসলি ধান চাষের এলাকা হওয়ায় অধিকাংশ কৃষকই ধান চাষ করত। যে বছর ফসল ভাল না হত সে বছর কৃষকের দুঃখের শেষ থাকত না। এমনকি কোন কোন বছর ভাল ধান না হওয়ায় ফসলি জমি বিক্রি করে দেওয়া হত এমন নজিরও আছে। সেখানে এখন ভেড়ি বাধ দিয়ে ধান,মাছ ও ভেড়ির আইলে সবজি চাষ করা হচ্ছে। স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে পাশ্ববর্তী বাজার গুলোতে এখন ফটিকখালীর সবজি ভরপুর।
স্থানীয় কৃষক রব্বানী সরদার,লিয়াকত সরদার,সুখলাল সানা,বলাই সানা,কালিপদ সানা,সঞ্জয় মাস্টারসহ একাধিক কৃষকের ক্ষেতে ইতিমধ্যে আগাম জাতের টমেটো,বেগুন,করলা,শশা,লাউ,ধন্দল,লাল শাক,কচু,বরবটি,মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির মৌসুমি ও বারমাসী সবজি উৎপাদন,বিক্রি করে সফলতা পেয়েছেন।
বর্গা চাষি ফটিকখালী গ্রামের তারক বিশ^াসের পুত্র কালিপদ বিশ^াস (৩৫) জানান, তিন মেয়ে আর বাবা মা নিয়ে আমার সংসারের চাকা যেন ঘুরছিল না। এবছর ৪ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ১ লক্ষ টাকার মত খরচ করে সবজি চাষ শুরু করেছি। ৭০হাজার টাকার মত কেনাবেচা হয়েছে। আবহাওয়া প্রতিকুলে থাকলে লাভবান হব। আমার পরিবার সুখের মুখ দেখবে। তিনি আরও জানান,ফটিকখালী একটি দুর্গম এলাকা হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না। ফলে আমাদের সবজি বাজারজাত করার সময় খুব দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পরি বহন ব্যবস্থা ভাল না থাকায় বেশি ভাড়া দিয়ে অথবা গায়ের ঘাম ঝরিয়ে বাজারে নিতে হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হলে সবজি সময় মত বাজারে নিয়ে বেশি দাম পাওয়া যাবে বলে স্থানীয় অনেক কৃষক অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
ইউপি সদস্য রামপদ সানা জানান,আমার নিজেরও একটি সবজি বাগান আছে। এই এলাকায় সবজির চাষ এর আগে হয়নি। সবজি চাষে অনেক পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। তবে দুঃখের বিষয় গত ২৭জুলাই থেকে অতিবৃষ্টির কারণে অনেক সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। আবার নতুন করে তারা ক্ষেত গুছানোর কাজ করছে। কৃষি অফিসের সহযোগিতা সাধারণ কৃষকরা যাতে পেতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন,পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা জোরদার করা হলে এক ফসলি জমি থেকে বহুমুখী সুবিধা পাবে বলে স্থানীয়রা জানান। তারা এই অঞ্চলের রাস্তাঘাট নির্মাণ ও দ্রæত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার,ইউপি চেয়ারম্যানের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।