শেখ শাওন আহমেদ সোহাগ: করোনা আতঙ্কে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। শনিবার (১২ জুন) সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিন গেলে দেখা যায় রোগীর সংখ্যা মাত্র ৪১ জন যারা ওই দিনই ভর্তি হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে ২ জন জ্বর, ১ জন এ্যাজমা আর বাদবাকি প্রায় সব গুলো জমিজমা, পারিবারিক বিরোধের জেরধরে মারামারি এই জাতীয় বলে জানা গেছে। এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে হাসপাতালে যেয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বেডে শুধু মাত্র একজন রোগী রয়েছে বাদবাকি খালি পড়ে আছে। আগে হাসপাতালের সিট পাওয়া অনেক কষ্টের ব্যাপার ছিল। অনেক রোগীকে হাসপাতালের মেঝে ও করিডরে থেকে চিকিৎসা নিতে হতো। কিন্তু করোনা আতঙ্কে সেই চিত্র অনেকটা পাল্টে গেছে। তবে ডাক্তার স্বল্পতার কারণে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে যেয়ে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে কর্মরত চিকিৎসকগণ। অপর দিকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরাও ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে।
হাসপাতালের বেডে থাকা কয়েকজন রোগীর সাথে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালের খাওয়া ও থাকার মান ভালো তবে চিকিৎসা সেবা নিতে একটু সমস্যা হচ্ছে বলে জানান তারা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গোলাম মোস্তফা জানান, হাসপাতালের টিএইচও স্যার, আমি আর আমিনুল ইসলাম এমবিবিএস ডাক্তার রয়েছি। আর উপ-সহকারী ডাক্তার রয়েছে মাত্র তিন জন। তাদের মধ্যে ডা. মাহাতাব উদ্দিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। যার ফলে রোগীর সেবা দিতে যেয়ে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শেখ তৈয়েবুর রহমান জানান, গত মে মাসে ১৫৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তাদের মধ্যে করোনা পজেটিভ এসেছে ৪৬ জনের আর মৃত্যুবরণ করেছে ৪ জন। জুন মাসের ৩ তারিখ থেকে এ পর্যন্ত ১৩৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬৩ জনের পজেটিভ এসেছে বলে জানান তিনি। এদিকে লকডাউন বাস্তবায়নে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সব ধরণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শপিংমল, বিপণিবিতান, দোকান বন্ধ রয়েছে।
তবে ওষুধ, কাঁচাবাজার, চিকিৎসাসেবা ও মৃতদের দাফন বা সৎকারের সাথে জড়িতদের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠান গুলো এই লকডাউনের আওতাবহির্র্ভূত রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলাম ও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা লকডাউন বাস্তবায়নে সার্বক্ষণিক মাঠে রয়েছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় চোরপুলিশ খেলা হচ্ছে। পুলিশ আসলেই দৌঁড়ে যে যার মত পালাচ্ছে আবার পুলিশ চলে গেলে ধুমছে ঘুরে বেড়াচ্ছে কিছু কিছু জনগণ। মাস্ক ব্যবহারে অনিহাও রয়েছে অনেক মানুষের মধ্যে। থানার উপ-পরিদর্শক সিহাবুল ইসলাম জানান, অনেক মানুষ বিনা প্রয়োজনে বাহিরে বের হয়ে ঘোরাফেরা করছে। তারা লকডাউনে কেন বাহিরে এসেছে জানতে চাইলে বলে ওষুধ নিতে এসেছিলাম, মা অসুস্থ, হাসপাতালে রোগী আছে ইত্যাদি এসব অজুহাত দেখাতেই থাকে। অনেকে পকেটে কিছু গ্যাসের ওষুধ রেখে দেয়। আমরা জিজ্ঞাসা করলেই ওষুধ বের করে বলে ওষুধ নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। এমতাবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার সংকট নিরসনসহ লকডাউন বাস্তবায়নে প্রশাসনকে আরও বেশি নজরদারির দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।