জি এম মাছুম বিল্লাহ: সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন নদীগুলোতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অবৈধভাবে অবাধে চলছে গলদা-বাগদা চিংড়ির রেনু আহরণ। এ রেনু আহরণ করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই ধ্বংস হচ্ছে হাজারো প্রজাতির মৎস্য ও জলজ প্রাণীর পোনা। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন গুলোর নাকের ডগায় চলছে এই ধ্বংস যজ্ঞ তবুও নীরব ভূমিকায় তারা। যারা জীববৈচিত্র ধ্বংস করছেন তাদের বিরুদ্ধে কোন রকম প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিয়ে দর্শকের ভূমিকায় থাকায় নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। সুন্দরবন সংলগ্ন উপক‚লের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, নিষিদ্ধ নেট জাল, ঠেলা জাল ও ইঞ্জিন চালিত নৌকার দুই পাশে নেট জাল দিয়ে জেলেরা লাখ লাখ চিংড়ি রেনু আহরণ করে বিক্রি করছে স্থানীয় ব্যাপারীদের কাছে। ব্যাপারীরা সেগুলো দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছে দেবহাটা,পারুলিয়া,বদরতলা,খুলনা ও যশোরসহ দেশের বিভিন্ন চিংড়ি ঘের মালিকদের কাছে। কালিগঞ্জের তারালী থেকে আসা আসলাম সহ কয়েকজন জানান, তিনি প্রতি বছরই এপ্রিল থেকে জুন তিন মাসের জন্য এলাকায় চিংড়ির রেনু পোনা আহরণের জন্য আসেন।
স্থানীয় সামাদ মহাজনের মাধ্যমে তিনি পোনাগুলো বিক্রি করেন। একই এলাকা থেকে আসা আকছেদ জানান, তারা নদী থেকে নেট জাল দিয়ে অন্য পোনাসহ চিংড়ির পোনাগুলো আহরণ করেন। পরে চিংড়িটা রেখে অন্যগুলো ফেলে দেন। সদ্য বন বিভাগ ঘোষিত পহেলা জুন থেকে আগামী তিন মাস পর্যন্ত সুন্দরবনের সকল ধরনের পারমিশন বন্ধ থাকার পরও বুড়িগোয়ালিনী রেঞ্জ অফিসের ৩০০ গজ দূর থেকে যতদূর চোখ যায় শুধু নদীতে অবৈধ নেট জাল দেখা যায়। বিষয়টি নিয়ে কর্মকর্তাদের সাথে একান্ত বৈঠকের পরেও অবৈধ নেট জাল বন্ধের জন্য কোনরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। বিষয়টি নিয়ে বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মকর্তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জনপ্রতিনিধি বলেন, ছোট কাঁকড়া,রেনু ও গলদা পোনা আহরণকে কেন্দ্র করে মোটা অঙ্কের একটা বাণিজ্য হয়, না হলে বনবিভাগ ও নৌ পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা দিনে অবৈধ নেট জালের অভিযান, গলদা ও রেনু ব্যবসায়ীদের আটক ও রাতে হাজার কেজি ছোট কাঁকড়া আটক করতে পারতো।কিন্তু আজ পর্যন্ত দেখলাম না এধরণের কোন ঘটনা ঘটেছে । সাধারণ মানুষ এটা স্বাভাবিকভাবেই বুঝে নিয়েছে যে, যারা অনিষ্টকারী এবং যারা রক্ষাকারী তাদের আঁতাতের ভিত্তিতেই চলে এই ধ্বংস লীলা।
শ্যামনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুষার কান্তি মজুমদার বলেন, জুন মাস থাকায় যথেষ্ট ইচ্ছে থাকলেও অভিযান দিতে পারছি না। খুব তাড়াতাড়ি অবৈধ নেট জালের বিরুদ্ধে বুড়িগোয়ালিনী নৌ থানাকে সাথে নিয়ে একটি সফল অভিযান চালাবো। এর ফলে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদ দিনকে দিন মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, একটি গলদা বা বাড়দা চিংড়ির রেণু পোনা আহরণ করতে গিয়ে অন্য ৪৬৩ প্রজাতির মাছের রেনু পোনা ধ্বংস হয়। আর সাথে নদীর পানিতে বাস করা ক্ষুদ্র জীব কনা ধরা হয় তাহলে তার সংখ্যা দাড়ায় ১৭৬৩টি। এটা সার্বিকভাবে বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের জন্য বিশাল ক্ষতির কারণ। এটা কঠিনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বাংলাদেশের নদীগুলো ধীরে ধীরে মাছ শূন্য হয়ে যাবে। আর নিয়ন্ত্রণ করা গেলে বাংলাদেশের মৎস সম্পদ বাড়বে দিনকে দিন।