Site icon suprovatsatkhira.com

চলছে কঠোর লকডাউন: তালার মাগুরায় ঋণ আদায়ের চাপে অতিষ্ঠ গ্রহীতারা

সুমন কর্মকার,মাগুরা(তালা)প্রতিনিধিঃ তালায় বিভিন্ন ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ঋণ আদায়ের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাপে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন সাধারণ ঋণ গ্রহিতারা। লকডাউনের কারণে ঋণ গ্রহিতারা যখন খাদ্য ও দৈনন্দিন নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা সংকটে স্বাভাবিক জীবন যাপনে নাকানি চুবানি খাচ্ছে, সেখানে এনজিও’র ক্রমাগত চাপে রীতিমত দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা থাকায় এনজিও’র মাঠ কর্মীরা সরাসরি মাঠে আদায় না করলেও ঋণ গ্রহিতার বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে কিস্তি পরিশোধের চাপ প্রয়োগ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চলমান লকডাউনে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়লেও এনজিও কর্মীদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না তারা।

জানা গেছে, চলতি বছরের ১২ এপ্রিল মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ করোনার প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেন। যেখানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সকল সরকারি, আধা সরকারি, বে-সরকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা বা কার্যক্রম বন্ধে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। পরে উল্লেখিত প্রজ্ঞাপনের সময়সীমা বাড়িয়ে পর্যায়ক্রমে ৫ মে থেকে ১৬ মে ও ৬ জুন থেকে ১০দিন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ। কিন্তু, সরকারের মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের এ নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উপজেলা পরিষদের কয়েকটি ঋণ প্রদানকারী দপ্তর সহ কয়েকটি এনজিও প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন বাজার ও পল্লী এলাকায় ঋণ পরিশোধের জন্য ক্ষুদ্র বা মাঝারি ঋণ গ্রহীতাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বা মোবাইলে গোপন চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ঋণ গ্রহীতারা।

লকডাউনের সময় ঋণ পরিশোধের কিস্তি না দিলে পরবর্তীতে সে গ্রাহকদের আর কোন ঋণের আবেদন পাশ হবে না, ঋণ গ্রহিতাদের পক্ষে জামিনদার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরিজীবিদের বেতন ভাতা বন্ধসহ নানা প্রকার ভয় ভীতি দেখানো হচ্ছে। এমন সব অজুহাত দেখিয়ে ঋণ আদায়ের কার্যক্রম সফল করা হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে ঋণ পরিশোধের পর তারা হারাবেন তাদের সদস্য পদ এমন হুমকির অভিযোগ উঠেছে ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের আদায়কারী কর্মী বা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বিরুদ্ধে। উপায় অন্ত না পেয়ে নিয়ম অনুযায়ী ঋণ পরিশোধের জন্য গ্রাম্য পর্যায়ে ব্যক্তি বিশেষের নিকট থেকে গোপনে অধিক দরে সুদে ঋণ নিয়ে কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে। তবে লেনদেন ঠিকঠাক থাকলেই তারা আবারও পাচ্ছেন নতুন ঋণ।

তালা উপজেলার মাগুরায় ভূক্তভোগীরা জানান, শুধু নবলোক এনজিও নয়, একই সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে কিস্তি আদায়ে চাপ প্রয়োগ করছে ব্র্যাক, আশা, উত্তরণ, গ্রামীণ ব্যাংক, নওয়াবেকী গনমুখি ফাউন্ডেশান, সিএসএস,সাস সহ বিভিন্ন পর্যায়ের এনজিও ও উপজেলা প্রশাসনের আওতাভূক্ত ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।

এসকল প্রতিষ্ঠানের ঋণ গ্রহীতার স্বামী মাগুরা গ্রামের ইঙিনভ্যান চালক বিশ্বজিৎ বিশ্বাস, মফিজুল সরদার,শংকর রায়,নূর ইসলাম ও সদস্যা শান্তনা রানী রহিমা বেগমসহ একাধিক বক্তি বলেন, এসকল প্রতিষ্ঠানকে কিস্তির টাকা না দিলে দফায় দফায় বাড়িতে আসছে। যেখানে দু’বেলা ভালভাবে খেতেই পারি না, সেখানে কিস্তি পরিশোধ করবো কি করে। সব মিলিয়ে চলমান লকডাউনে এনজিও কর্মীদের গোপন চাপে পিষ্ট হচ্ছেন সাধারণ ঋণ গ্রহীতারা।

এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার, ব্যবস্থাপক বা শাখা কর্মকর্তাদের চাপে ঋণ আদায়কারী মাঠ সংগঠকরাও অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। তাদেরকে এমনও চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে দিনের ঋণ সঠিকভাবে আদায় না হওয়া পর্যন্ত অফিসে আসার দরকার নেই। ঋণ আদায় না করতে পারলে অফিসে উপস্থিত হলে নিজেদের বেতন থেকে পরিশোধ করতে হবে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানের মাঠ কর্মীদের অধিক রাত পর্যন্ত দর্গম মাঠে মাঠে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পড়তে দেখা গেছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে এ সকল ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনে জেলা প্রশাসকসহ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী ঋণ গ্রহীতারা।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version