মে ২৭, ২০২১
শ্যামনগরে ৪৭৬৫ টি বাড়ী, ১৬৫০ হেক্টর চিংড়ী ঘেরসহ ১১ কি:মি: বাঁধের ক্ষতি
শ্যামনগর প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস/যশ এর প্রভাবে সৃষ্ট অতি জোয়ারের চাপে উপকুলবর্তী এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ২৭ মে (বৃহস্পতিবার) শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ.ন.ম আবুজর গিফারী ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: শাহিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত শ্যামনগরে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর ক্ষয়ক্ষতির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, গত ২৬ মে (বুধবার) শ্যামনগর উপজেলায় ১২টি ইউনিয়নে প্রাণিসম্পদ, মৎস্য, কৃষি, ঘরবাড়ী, রাস্তা/বাঁধের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ইয়াস এর প্রভাবে শ্যামনগরে ১৬৫০ হেক্টর চিংড়ীঘের, ৯০ হেক্টর ফসলিক্ষেত, ২৬৫ টি সম্পন্ন ঘরবাড়ী, ৪৫০০টি আংশিক ঘরবাড়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এদিকে পাউবোর বেড়ীবাঁধ ১৯০ মিটার ভেঙে যায় এবং ১১ কিলোমিটার বাঁধের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। ফলে এসওএস ফরমে আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতি এবং জরুরী চাহিদা হিসেবে দুর্যোগ কবলিত ইউনিয়ন ১২টি দুর্গত মানুষ ৫০ হাজার ৮ শত জন বিদ্ধস্ত ঘরবাড়ী ৪৭৬৫ নিরুপন করা হয়েছে। সাতক্ষীরা সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এম এ হাসান বলেন, সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতায় ৫টি বন ষ্টেশন অফিস ও ১২টি টহল ফাড়িতে নির্মিত মিষ্টি পানির পুকুর লোনা পানিতে তলিয়ে একাকার হয়ে গেছে। শ্যামনগর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তুষার কান্তি মজুমদার জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপক‚লীয় বিভিন্ন নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৭/৮ ফুট বৃদ্ধি পেলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেঁড়িবাধ ভেঙে ও উপচিয়ে লোনা পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে মৎস্যখাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়। পানিবন্দী প্রায় ৬০ হাজার মানুষ, তলিয়ে গেছে হাজার হাজার বিঘা চিংড়ি ঘের ও ঘরবাড়ি। উপজেলার গাবুরা,পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী ও কৈখালী ইউনিয়ন সম্পুর্নভাবে প্লাবিত হয়েছে। আটুলিয়া, কাশিমাড়ী, নুরনগর, রমজাননগর, শ্যামনগর ও মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন আংশিক প্লাবিত হয়েছে। শ্যামনগর উপজেলার প্রায় ৭০টি গ্রামে জোয়ারের নদীর পানি প্রবেশ করেছে মর্মে জানা গেছে। খোলপেটুয়া, কপোতাক্ষ, কালিন্দি, চুনকুড়িসহ অপরাপর নদীতে জোয়ারের ৫/৬ ফুট পানি বৃদ্ধির ফলে ২৬ মে (বুধবার) দুপুর ১২ টার দিক উপকূলীয় রক্ষা বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। শুরুতে বাঁধের উপর মাটি দিয়ে পানির প্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টা করলেও জোয়ারের তীব্রতার কারনে অল্প সময়ের মধ্যে স্থানীয়রা ‘আশা’ ছেড়ে দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুড়তে থাকে। স্থানীয়রা জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের খামখেয়ালীপনায় বাঁধের যথাযথ রক্ষনাবেক্ষন না করায় লবনাক্তপানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানাযায়, ইয়াস প্রভাবের কারণে চিড়া, চিনি, বিস্কুট, শিশু খাদ্য ও গো খাদ্য বিতরন করা হয়েছিল। শ্যামনগরের অধিকাংশ এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সাতক্ষীরা ৪ আসনের এমপি এস এম জগলুল হায়দার, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল, শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলন, ইউএনও আ ন ম আবুজর গিফারী, উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মোঃ শহিদুল্লাহ, শ্যামনগর থানা অফিসার ইনচার্জ আলহাজ্জ্ব নাজমুল হুদা, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক সাঈদ-উজ-জামান সাঈদ ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহিনুল ইসলাম ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা এলাকাবাসীর সহযোগিতায় স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বাঁধগুলো মেরামতের কাজ অব্যাহত রেখেছেন। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর প্রভাবে সৃষ্ট অতি জোয়ারের চাপে উপকুলবর্তী গাবুরা,পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন সহ কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ায় ৬০ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। খাবার পানির সংকটে পড়েছে তারা। শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ ন ম আবুজার গিফারী বলেন, সরকারী সাহায্যে প্রদানে অব্যাহত প্রচেষ্টা রয়েছে।
8,642,233 total views, 7,232 views today |
|
|
|