বি. এম. জুলফিকার রায়হান, তালা: মো. মুজাহিদুল ইসলাম সরদার, বয়স মাত্র ২৫ বছর, পিতার আশরাফ আলী মোড়ল। বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার নর্নিয়া গ্রামে। এই বয়সের একটি ছেলে কখনও নিজেকে এনএসআই’র অফিসার, কখনও পুলিশের ইন্টেলিজেন্সি ব্রাঞ্চের বিভাগীয় অফিসার, কখনও দুদক কর্মকর্তা, কখনও প্রধানমন্ত্রীর প্রোটোকল অফিসারের ভাগ্নে আবার কখনও বিদেশি ডোনারদের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল। খাকি পোশাক পরে, প্রাইভেট কারে সরকারি লোগো লাগিয়ে এবং সংশ্লিষ্ট পরিচয় পত্র প্রদর্শন করে সে সহজ সরল মানুষদের নানান প্রলোভন দেখিয়ে পাতানো ফাঁদে ফেলা তার পেশা। প্রতারণা করে নিরীহ মানুষদের কাছ থেকে এপর্যন্ত সে কোটি টাকার উপর হাতিয়ে নিয়েছে। এসব টাকা সে দেশী-বিদেশি প্রতারক চক্রের সদস্যদের সাথে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছে। দরিদ্র পরিবারের ছেলে মুজাহিদ প্রতারণার টাকা দিয়ে গড়ে তুলেছে ২তলার আলি শান বাড়ি। অভিযোগ উঠেছে, মুজাহিদের এই প্রতারণার ব্যবসার সাথে তার পিতা আশরাফ আলী সার্বিক সহযোগীতা রয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ মে) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মুজাহিদ তালা উপজেলার ইসলামকাটি গ্রামের নিছার সরদারের ছেলে আলতাফ হোসেন সরদারের কাছ থেকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পুনরায় টাকা নিতে আসে। এসময় স্থানীয় জনতার সহায়তায় সুজনসাহা বাজার থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এনএসআই সাতক্ষীরা অফিসের ডিডি মো. জাকির হোসেন’র নেতৃত্বে এনএসআই’র একটি টিম প্রতারক মুজাহিদকে আটক করেন। এসময় তালা থানা পুলিশ আটক অভিযানে সহযোগীতা করেন। পরে সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশের একটি টিম প্রতারক মুজাহিদকে তালা থানায় নিয়ে আসেন।
থানায়- মুজাহিদকে এনএসআই, থানা পুলিশ এবং সাতক্ষীরা ডিবি যৌথভাবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এসময় মুজাহিদ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়ে সেই টাকা ২জন বিদেশি সহ দেশি প্রতারকদের সাথে ভাগাভাগি করার কথা স্বীকার করে। এছাড়া সে ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ’র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এজেন্ট বলে দাবী করে। তবে, পুলিশ তার এই দাবী মিথ্যা এবং অগ্রহনযোগ্য বলে জানান।
প্রতারণার শিকার তালার ইসলামকাটি সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের নকল নবিশ আলতাফ হোসেন জানান, এনএসআই এবং পরবর্তীতে ইন্টেলিজেন্সি ব্রাঞ্চের বিভাগীয় কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রায় ২ বছর আগে মুজাহিদ তার সাথে কথা বলে। ওই সময় সে রেজিষ্ট্রি অফিসের সহকারী পদে স্থানীয় নিয়োগ করিয়ে দেবার কথা বলে ১৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। দীর্ঘদিনেও সে চাকরি বা টাকা ফেরত দেয়নি। মঙ্গলবার সকালে সে আরও টাকা নিতে আসলে প্রশাসনের লোকজন তাকে গ্রেফতার করেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, এভাবে সে বিভিন্ন দপ্তরে চাকরী দেয়া, জমি কিনে দেয়া, ফ্লাট বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া, ব্যাংক থেকে ঋণ পাশ করে দেয়া, হজ্জ্বে পাঠানো এবং বিদেশী ডোনারদের কাছ থেকে সহযোগীতা নিয়ে দেয়ার কথা বলে ইসলামকাটি গ্রামের শফিকুল ইসলামের সাড়ে ৩লক্ষ টাকা, ডুমুরিয়ার রোস্তমপুর গ্রামের হালিম মোল্যার ২৮ লক্ষ টাকাসহ কুলবাড়িয়া গ্রামের মোস্তফা কামাল, একই গ্রামের গণি মোল্যার নিকট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাছাড়া, ৯০ লক্ষ টাকার একটি চেক দেখিয়ে সে শিক্ষা বোর্ড’র অনুদান দেবার কথা বলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
কুলবাড়িয়া গ্রামের ভুক্তভোগী গোফুর শেখ জানান, করোনা প্রাদুর্ভাবের সময় প্রতারক মুজাহিদ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহ এলাকার গরিব মানুষদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করে। এরফলে সে বড় অফিসার- এটা মানুষ সহজে বিশ্বাস করে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মুজাহিদ নিরীহ মানুষদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা- এনএসআই এর ডিডি (সাতক্ষীরা অফিস) মো. জাকির হোসেন জানান, অল্প বয়সেই মুজাহিদ বড় মাপের প্রতারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সময়ের আলোচিত প্রতারক সাহেদ করিম বা সাতক্ষীরার বাদশা মিয়ার পথেই তার অবস্থান ছিল।
এব্যপারে তালা থানার ওসি মো. মেহেদী রাসেল বলেন, প্রতারণা করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া মুজাহিদুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী আলতাফ হোসেন আজ (মঙ্গলবার) তালা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়া ডুমুরিয়া ও সাতক্ষীরা সদর থানায় তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা রয়েছে এবং সে আটক হওয়ার সংবাদ প্রচার হওয়ায় অনেক ভুক্তভোগী বিভিন্ন থানায় মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
গ্রেপ্তারের পর ভুক্তভোগীদের মাঝে স্বস্তি
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/