মাজহারুল ইসলাম : অষ্টম শ্রেণি পাশ। ডাক্তার না হয়েও নামের আগে লেখেন ডাক্তার। প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও ব্যক্তিবর্গের ছবি এডিট করে তাদের ছবির পাশে নিজের ছবি লাগিয়ে নিজেকে উচ্চ পর্যায়ের নেতা হিসেবে জাহির করেন সাধারণ মানুষের কাছে। সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারাও তার এই অভিনব প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তিনি সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল মধুমল্যারডাঙ্গী এলাকার বাসিন্দা বাদশা মিয়া ওরফে ডা. এসএম বাদশা মিয়া ও হাতুড়ে ডা: নুর ইসলামের ছেলে। শনিবার (০১ মে) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তাকে শহরের কামালনগর বাইপাস সড়ক থেকে অস্ত্র ও গুলিসহ আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
শনিবার বিকেলে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার) সাংবাদিকদের সাথে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
পুলিশ সুপার বলেন, বাদশা মিয়া একজন ভয়ংকর প্রতারক। তিনি ডাক্তার না হয়েও নিজেকে ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দেন। এছাড়া বাদশা মিয়া অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন বলে মৌখিকভাবে স্বীকার করেছে।
পুলিশ সুপার বলেন, বাদশা মিয়ার কোন বৈধ পেশা নেই। প্রতারণা করে মানুষের নিকট থেকে অর্থ আদায় করাই তার মূল ব্যবসা ও পেশা। সে নিজেকে ডা. এসএম বাদশা মিয়া, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্র-মন্ত্রীর পিএস, প্রধানমন্ত্রীর মামলা পরিচালনাকারী, এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের ডাইরেক্টর, ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতা, বিভিন্ন মন্ত্রী ও এমপিদের পরিচয় দিয়ে তাদের সিল, প্যাড, ডিও লেটার, বাণী ইত্যাদি ব্যবহার করে নিরীহ মানুষকে চাকুরি পাইয়ে দেয়া, চাকুরিতে পদোন্নতি, চাকুরির বদলি, মামলার রায় পাইয়ে দেয়া, জমিজমা উদ্ধার ও দখল ইত্যাদির প্রলোভন দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই মহা-প্রতারক। সে এসকল কাজের জন্য দেশি ও বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী, এমপিসহ অনেকের) ছবি সংগ্রহ করে তাদের ছবির সাথে নিজের ছবি লাগিয়ে (এডিটকরে) নিরীহ মানুষের নিকট নিজেকে বিশ্বাস যোগ্য ও প্রভাবশালী হিসেবে উপস্থাপন করে থাকে। সরকারের প্রভাবশালী আমলা, প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তাদের নিকট মিথ্যা পরিচয়ে তদবির করে থাকে এবং তদবির না শুনলে বদলি বা চাকুরি চ্যুত করার হুমকি ধামকি দিয়ে থাকে। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পরিচয় দিয়ে দেশের প্রতিটি জেলায় ও উপজেলায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগারের কমিটি গঠন করে তাদের নিকট থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।
পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার) প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, ভয়ংকর প্রতারক বাদশা মিয়া ওরফে ডা. এসএম বাদশা মিয়াকে তার প্রধান সহযোগী কথিত পিএস জাহানুর হোসেন সাগরকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সুপার জানান, শনিবার ভোর রাতে বাদশা মিয়াকে আটককালে তার নিকট থেকে ১টি পিস্তল সদৃশ ওয়ান শুটারগান, ২ রাউন্ড তাজা গুলি তার কোমরে পাওয়া যায়। এছাড়া তার দেওয়া তথ্য মতে শেখ ফজলুর করিম সেলিম এমপি ২১৬, গোপালগঞ্জ-২, সভাপতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এর সিল, ডা. এস.এম বাদশা মিয়া প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতিপাঠাগার কেন্দ্রীয় কমিটি এর সিল, ডা. মোস্তফা জামান সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু স্মৃতিসংসদ ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতিপাঠাগার কেন্দ্রীয় কমিটি এর সিল উদ্ধার করা হয়। এছাড়া শেখ সালাউদ্দীন জুয়েল সংসদ সদস্য-১০০, খুলনা-২, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ এর অফিসিয়াল প্যাডে পুলিশ প্রধানকে (আইজিপি) লেখা ডিও লেটার-১ টি, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব লেখা অফিসিয়াল নোট প্যাড-১টি, মানবাধিকার প্রতিদিন পত্রিকার স্টিকার-১টি, ভুয়া ওয়ারেন্ট-২৫ টি, মসজিদের চাঁদা আদায়ের রশিদ বই-২০ টি (প্রতিটি ১০০ পাতা), আদায়কৃত চাঁদার ৬৮ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার) প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, এ ঘটনার সাথে জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অস্ত্র আইনের একটি মামলা (সাতক্ষীরা থানার মামলা নং-৩, তারিখ ০১/০৫/২০২১খ্রিঃ ধারা-১৮৭৮ সালে অস্ত্র আইনে ১৯-এ) রুজু করা হয়েছে। জাল জালিয়াতি করে প্রতারণা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পৃথক পৃথক মামলা দায়ের করা হচ্ছে। এ চক্রের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ দায়ের করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।