Site icon suprovatsatkhira.com

দেবহাটায় ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব

মীর খায়রুল আলম: বৈশাখী ঝড়-বৃষ্টি আর বজ্রপাত ঘটার আগেই চাষিরা বোরো ধান কেটে বাড়ি তুলে ঝেঁড়ে রৌদে শুকাতে ব্যাস্ত সময় পার করছে। যে কারণে তাড়া হুড়া করে ধানকাটা ও মাড়াই করেছে কৃষকেরা। মুসলমানদের পবিত্র ঈদুল ফিতর আগত। আর এই ঈদকে সামনে আগত থাকায় রৌদ্র ও মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়াতেও চলছে সোনালি ধান ঘরে তোলার কাজ। এপ্রিল মাসের শুরুতেই আরম্ভ হয় ঝড়-বৃষ্টি। জমিতে পাকা ফসল থাকলেও ধান কাটার জন্য দেখা দেয় শ্রমিক সংকট। অনেক কষ্ট করে জমি থেকে কাটা ধান বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এরপর গাছ থেকে ধান মাড়াই করে গাছ আলাদা করা হয়। এরপর সিদ্ধ করা ধান শুকাতে লাগে ২-৩ দিন। তারপরে সেই ধান ভেনে চাল বের হয়। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষ হতে বেশ আনন্দ ও কষ্ট করতে হয় বাংলার কৃষককে। কিন্তু নতুন ফসল ঘরে ওঠায় আনন্দ বইছে কৃষকের মনে। নতুন ফসল ঘরে তুলতে পিছনের ফেরার সময় পাচ্ছেন না তারা।

দেবহাটার বেশির ভাগ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে চলছে ধান তোলার কাজ। আর এই কাজে এখন যুক্ত হয়েছে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলে, মেয়েসহ পরিবারের সদস্যরাও। কোঁড়া গ্রামের হোসেন সরদার বলেন, গাছ এখনো কাঁচা। কিন্তু ঝড় বর্ষার আগে কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে হবে। না হলে চাষের খরচ ও সংসার চলবে কি করে। তাই বাড়ির সবাই মিলে কাজ করছি। তিনি আরো বলেন এবার অনেক ভালো ফসল হয়েছে। বেচাকেনা করে তিনি লাভবান হব । এদিকে মাঘরী বিলের ধান চাষি মোশারফ হোসেন মন্টু জানান, বোরো চাষে বিগত বছরের তুলনায় খরচ কম হয়েছে। আর ধানের ধরনও আগের চেয়ে বেশি। শেষ পর্যন্ত গুছিয়ে উঠতে পারলে তার ঋণ শোধ হবে। ভালো ফলন পেয়ে তিনি অনেকটাই খুশি। তবে মাঠ ঘুরে দেখা গেছে অনেকে খেত থেকে ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে আসছেন। অনেকে মাঠে ধান ঝেঁড়ে নিচ্ছেন। সামনে ঈদ আগত। তাই ঈদের আগেই ধানের ফসল ঘরে তুলতে পারলে কৃষক ধর্মীয় বিধান ভালো ভাবে পালন করতে পারবে। আর ধান ঘরে তুলতে না পারলে ব্যাপক দূর্ভোগে পড়তে হবে কৃষককে।

উপজেলা কৃষি দপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার ইব্রাহিম খলিল জানান, বোরো মৌসুমের শুরু থেকে ধান তোলা পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে কৃষি বিভাগ সরাসরি মাঠে কাজ করেছে। কৃষকের সুবিধা অসুবিধায় সব সময় কৃষকের পাশে থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবার ধানের ক্ষয়ক্ষতি কম। যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় তাহলে কৃষক তার প্রাপ্ত ধান বা চাউল বিক্রি করে লাভবান হবে। উপজেলা কৃষি অফিসার শরীফ মোহাম্মাদ তিতু মীর জানান, এবছর দেবহাটায় ৬ হাজার হেক্টর বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে হাইব্রিড জাতের ২৮শত এবং উফসি ৩২ শত হেক্টর আবাদ করা হয়েছে। সবমিলে আমরা এ মৌসুমে হাইব্রিড ৭.৫ মেট্রিকটন ও উফসি হেক্টর প্রতি ৬.৩ মেট্রিকটন ফলন পাওয়া যাবে। করোনা মহামারির মধ্যে কৃষক তার জমিতে ফসল ফলিয়ে দেশের মানুষের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। আমরাও চেষ্টা করছি কৃষকদের উন্নয়ন করার। তাছাড়া আমার দপ্তরে কৃষক সরাসরি সেবা নিতে পারবে। কৃষকদের সেবা দেওয়ার লক্ষে কৃষি অফিস ৩য় তলা থেকে নীচের তলায় নিয়ে আসা হয়েছে। কৃষকদের উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। সে লক্ষে আমার দপ্তরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছে। এছাড়া প্রকৃত কৃষকদের তালিকা করে সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া তালিকাভুক্ত কৃষকরা সরাসরি সরকারকে ধান ও চাউল বিক্রয় করতে পারবেন।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version