লাঙ্গালঝাড়া (কলারোয়া) প্রতিনিধি: প্রতিবছর দেশের গন্ডি পেরিয়ে সাতক্ষীরা কলারোয়া উপজেলা থেকে বিভিন্ন জাতের সুস্বাদু আম ইউরোপীয় উপমহাদেশের ইতালি, যুক্তরাজ্য, গ্রীস, সুইডেন, জার্মানসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। আম চাষিদের থেকে জানা গেছে ২বছর ক্রেতা সংকট ও প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তান্ডবে প্রায় ৭০শতাংশ রপ্তানিযোগ্য আম নষ্ট হয়। এ কারণে দেশসহ বহির্বিশ্বে রপ্তানি করতে না পেরে বিপুল পরিমাণ গাছ ভেঙে ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয় চাষিরা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আম্পানের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নতুন ভাবে গাছ ও মাটির পরিচর্যা করে সফলতা পেতে কলারোয়া উপজেলায় এবছর ৬শত ৫০ হেক্টর জমিতে আম আবাদ করেছে চাষিরা। চলতি মৌসুমে অনেক গাছেই আশানুরূপ নেই আমের ধরন।
ডালে ফলন বেশী হলেও অনাবৃষ্টির কারণে গুটি ঝরে নষ্ট হওয়ায় স্বপ্ন পূরণে বিপাকে রয়েছে আম চাষিরা। উপজেলা কৃষি বিভাগ আমের বাম্পার ফলনের লক্ষ্যে চাষিদের স্বপ্ন পূরণে পরামর্শ দিচ্ছেন। আম্পানের ক্ষতি পুষিয়ে উপজেলায় বিভিন্ন জাতের নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে এবার বিদেশে রপ্তানিও করা যাবে বলে মনে করেছেন কৃষি অধিদপ্তর। উপজেলার বৃহৎ আম আবাদের অঞ্চল কেরালকাতা ইউনিয়নের ইলিশপুরের আম চাষি কবিরুল ইসলাম ডাবলু বলেন, কয়েক বছর যাবত কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শ ও সহযোগিতায় বাইরের দেশে আম বিক্রি করে সফলতা পেয়েছি। প্রতিবছর ১৮ বিঘার বাগান থেকে প্রায় ১৬-১৮ লক্ষ টাকার মতো আম বেচা-বিক্রি হয়। কিন্তু গত বছর ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তান্ডবে মাত্র ২ লক্ষ টাকা বিক্রি করতে পেরেছিলাম। আর্থিক ক্ষতির থেকেও গাছের ক্ষতি বেশি হওয়ায় এবার প্রতি গাছে ফলন ভালো হয়নি। কিছু ডালে অত্যন্ত ভালো ফলন এসেছে কিন্তু অনাবৃষ্টিতে প্রখর তাপে আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে। একদিকে করোনা অন্যদিকে অনাবৃষ্টিতে আমের গুটি ঝরে পড়া এ দ্বিমুখী প্রভাবে আম্পানের ক্ষতির রেশ কাটিয়ে লাভবান হওয়াটা অনেকটা আশায় বুক বাধার মত প্রতিক‚ল অবস্থা দেখেছি।
তবুও কৃষি অধিদপ্তরে সার্বিক পরামর্শে হিমসাগর, আম্প্রপালি, লেংরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির আম বেশ কয়েক বছর ধরেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছি। তবে গত ২ বছর আম রপ্তানি বন্ধ আছে। কৃষি অধিদপ্তর জানিয়েছেন এ বছর আম বিদেশে পাঠাতে পারবো। আশা করছি আমের গুটি ঝরা রোধ করতে পারলে কিছুটা সফলতা সম্ভব হবে। কেরালকাতা ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষিকর্ম কর্তা মৃণাল কান্তি জানান, করোনা ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রাদুর্ভাবের কারণে আম বিদেশে রপ্তানি বন্ধ থাকলেও দেশের মধ্যে থেমে নেই আম চাষিরা। এবারও ভাল ফলনের আশায় হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করছেন তারা। পোকার সংক্রমণ রোধ ও আমের গুটি যেন ঝরে না পড়ে সে লক্ষে গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। চলতি মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় প্রতিটি বাগানে আমের গুটি ঝরছে। তবে হতাশ না হয়ে চাষিদের ইউরিয়া স্প্রে ও সঠিক জৈব সার ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাহলে আমের গুটি ঝরা তুলনামূলক কম হবে। উপজেলার বিভিন্ন জাতের আমের মধ্যে বেশি আবাদ হয়, হিম সাগর, ল্যাংড়া, গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, মল্লিকা, আম্পগ্রপালি, বোম্বায়, লতা, দেশীয় লতাসহ নানান জাতের আম।উপজেলা গোয়ালচাতর গ্রামের নয়ন নামে এক আম চাষি জানিয়েছেন, কৃষি সম্পগ্রসারণ অধিদফতরের পরামর্শে গাছে মুকুল আসার ১৫ থেকে ২০ দিন আগেই পুরো গাছ সাইপারম্যাক্রিন ও কার্বারিল গ্রুপের কীটনাশক দিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করে গাছ ধুয়ে দিয়েছেন। এতে গাছে থেকে শোষক জাতীয় পোকা নিধন হয়েছে। তবে প্রখর সূর্যের তাপে পরিণত আম ঝরছে। এভাবে ঝরতে থাকলে প্রায় ৪৫ শতাংশ ক্ষতি হয়ে যাবে। উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অন্য ফসলের মত আম উৎপাদনের জন্য কলারোয়া একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চল। আম চাষে সফলতা পাওয়ায় উপজেলা ও দেশের গন্ডি পেরিয়ে এ অঞ্চলের আম ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৮ মেট্রিক টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১০ মেট্রিক টন নিরাপদ বিষ মুক্ত আম বিদেশের বাজারে যায়।
ক্রেতা সংকট আম্পান ও করোনার প্রাদুর্ভাবের জন্য ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিষ মুক্ত আম বিদেশে পাঠানো সম্ভব হয়নি। এ বছর আদর্শ ভাবে পোকা দমনের জন্য ফেরামন ট্রাফ ব্যবহার করে উপজেলায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে আম আবাদ হয়েছে। ৯ হাজার ১‘শ মেট্রিকটন লক্ষ মাত্রায় হেক্টরপ্রতি ৩৫ থেকে ৪০ মন আমের ফলন ধারণা করা হচ্ছে। সকল প্রতিক‚লতা কাটিয়ে আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে এবছর ৪৫-৫০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানি করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।