Site icon suprovatsatkhira.com

খেঁজুরের রস সংগ্রহে গাছিদের পাশাপাশি ভাড় তৈরীতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা

আব্দুস সালাম : শীতকালে খেজুরের রস সংগ্রহ আর গুড় উৎপাদনের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাতক্ষীরার গাছিরা। গাছিদের সাথে তাল মিলিয়ে খেজুরের রস আর গুড় সংরক্ষণে পোড়া মাটির পাত্র ভাঁড় তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন জেলার মৃৎ শিল্পীরা। শীত মৌসুমে খেজুরের রসে গুড় উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত গাছিরা। কিন্তু সকলের নজরের বাইরে থেকেও মৃৎ শিল্পীরা সরাসরি খেজুর রস আর গুড় সংরক্ষণের পাত্র তৈরির কাজে যুক্ত থাকেন। সাধারণত পাল সম্প্রদায়ের লোকেরা এই পোড়া মাটির পাত্র বা ভাঁড় তৈরির কাজ করে থাকেন। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা সহ জেলার প্রত্যেক উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের মৃৎশিল্পীরা ভাঁড় তৈরি করেন। সরজমিনে সদর উপজেলার কুশখালী ইউনিয়নের সাতানী এলাকায় দেখা গেছে, পাল সম্প্রদায়ের লোকেরা পোড়া মাটির ভাঁড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বংশ পরম্পরায় এ আদি পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছেন উপজেলার কুশখালী, আগরদাড়ী সহ কয়েকটি গ্রামের মৃৎশিল্পীরা। এছাড়া কলারোয়া উপজেলার সবচেয়ে বড় মৃৎশিল্প এলাকা। যেখান থেকে জেলা ছাড়িয়ে জেলার বাইরেও সরবরাহ করা হয় পোড়া মাটির পাত্র ভাঁড়সহ মাটির বিভিন্ন নান্দনিক পণ্য। সদর উপজেলার সাতানী গ্রামের পালপাড়ায় অশোক পাল ও তার স্ত্রী সুমিত্রা পাল এক মনে হাতের কারু কার্যের নিখুঁত ছোঁয়ায় ভাঁড় তৈরি করেতে দেখা গেছে। ছাঁচে ভাঁড় তৈরির দৃশ্যটি খুবই নান্দনিক, মনোমুগ্ধকর। ভাঁড় বানানোর দৃশ্য অবলোকনের জন্য যে-কেউ থমকে দাঁড়াবে। ওই এলাকা ছাড়াও কুশখালীর পালপাড়ায় গিয়েও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই ভাঁড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। এমনকি কারো সঙ্গে কথা বলার মত বাড়তি সময় তাদের নেই। ভাঁড় তৈরির কাজে শুধু পুরুষ আর বাড়ির গৃহিণী নয় বয়োজ্যেষ্ঠ্যরাও সাধ্য মত সহযোগিতা করে চলেছেন। মৃৎশিল্পী অশোক কুমার পাল জানান, ‘ভাঁড় তৈরির প্রধান উপকরণ এঁটেল মাটি, যা দূরের মাঠ থেকে সংগ্রহ করতে হয়। এই মাটি বাড়িতে এনে পানি দিয়ে ভিজিয়ে কোদাল দিয়ে কয়েকবার ঝুরঝুরে করা হয়। তারপর পা দিয়ে ছেনে মোলায়েম করা হয়। মোলায়েম করা মাটি বোলে দিয়ে বালির সংমিশ্রণে চাপড় বানানো হয়। এরপর ছাঁচে দিয়ে হাতের কারু কার্যে ভাঁড়ের কানাসহ উপরিভাগ তৈরি করা হয়’। তিনি আরও জানান, ‘এই ছাঁচে ভাঁড়ের নীচের অংশ তৈরির পর দুটি অংশকে জোড়া লাগানো হয়। তারপর দুই দিন রোদে শুকানো হয়। রোদে শুকানো ভাঁড়ে রং লাগিয়ে পাঁজায় (আগুনে) দেওয়া হয়। পাঁচ ঘণ্টার মতো পোড়ানোর পর ভাঁড় ব্যবহারের উপযুক্ত হয়। গাছিরা কেনার পর ভাঁড়ের গলায় দড়ি বেঁধে খেজুরগাছে রস আহরণের জন্য ব্যবহার করে থাকেন’। ওই এলাকার সুমিত্রা পাল জানান, ‘প্রতিদিন তিনি ও তার স্বামী মিলে ৫০ থেকে ৬০টি ভাঁড় তৈরি করতে পারেন। প্রতিটি ভাঁড় ১৫ টাকা করে বিক্রি করা হয়। এভাবে শ’ খানেক ভাঁড় বিক্রি করে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা লাভ করতে পারেন তারা’। তবে শীতকালে খেজুরের রসের উপর ভিত্তি করে গাছিদের আর মৃৎশিল্পীদের কর্ম ব্যস্ততা বাড়লেও কালের বিবর্তনে খেজুর রস আর মৃৎ শিল্প বিলুপ্তির পথে। এই দুটি পেশার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা আগামীর কোন সম্ভাবনা আর দেখতে পাচ্ছে না। কলারোয়া পাল পাড়ার সুধীর পাল জানান, ‘দিন দিন যে হারে খেজুরগাছ কমছে, তাতে খেজুরের রসের গুড়ভিত্তিক অর্থনীতি প্রায় বিলুপ্তির পথে। খেজুরগাছ সংরক্ষণ ও নতুন করে রোপণ করার উদ্যোগ না নিলে গাছিও থাকবে না, খোঁজও মিলবে না মৃৎশিল্পীদের। এ ব্যাপারে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ নিলে দুটি পেশাকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতে পারে’।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version