Site icon suprovatsatkhira.com

শর্তসাপেক্ষে চার আসামীর বাড়িতে থেকেই সাজা ভোগকরার আদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় এক কিশোরীকে গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় এক আসামীর ছয় মাস ও তিন আসামীর প্রত্যেককে এক মাস করে সশ্রম কারাদন্ড দিয়ে শর্তসাপেক্ষে প্রবেশনে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সাতক্ষীরা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ইয়াসমিন নাহার এ আদেশ দেন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার মহিষাডাঙা গ্রামের লক্ষীকান্ত গাইনের স্ত্রী মমতা গাইন, ছেলে গৌতম গাইন, বিমল গাইনের স্ত্রী উর্মিলা গাইন ও টিকেন্দ্র মন্ডলের স্ত্রী লতিকা মন্ডল।
কোন অপরাধীকে তার প্রাপ্য শাস্তি স্থগিত রেখে, কারাবদ্ধ না রেখে বা কোন প্রতিষ্ঠানে আবদ্ধ না করে সমাজে খাপ খাইয়ে চলার সুযোগ প্রদান করাকে প্রবেশন বোঝায়। প্রবেশন ব্যবস্থায় প্রথম ও লঘু অপরাধে আইনের সাথে সংঘর্ষে বা সংস্পর্শে আসা শিশু-কিশোরেরা বা অন্য কোন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিকে প্রথম ও লঘু অপরাধে দায়ে কারাগারে বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে না রেখে আদালতের নির্দেশে প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে এবং শর্ত সাপেক্ষে তার পরিবার ও সামাজিক পরিবেশে রেখে কৃত অপরাধের সংশোধন ও তাকে সামাজিকভাবে একিভূত করণের সুযোগ দেয়া হয়। প্রবেশন একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক সংশোধনী কার্যক্রম। এটি অপরাধীর বিশৃঙ্খল ও বেআইনি আচরণ সংশোধনের জন্য একটি সুনিয়ন্ত্রিত কর্ম পদ্ধতি। এখানে অপরাধীকে পুনঃঅপরাধ রোধ ও একজন আইনমান্যকারী নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠার জন্য সহায়তা করা হয়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, আশাশুনি উপজেলার মহিষাডাঙা গ্রামের সন্দীপ মন্ডলের মেয়ে বণ্যা মন্ডলকে বাড়ির পাশের রান্তা দিয়ে যাতায়াতের সময় গালিগালাজ ও অশালীন আচরন করতো একই গ্রামের উর্মিলা গাইন। ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি বিকেল তিনটার দিকে এ ঘটনাকে ঘিরে প্রতিবাদ করায়, গৌতম গাইন, তার মা মমতা গাইন, উর্মিলা গাইন ও লতিকা মন্ডল পরিকল্পিতভাপবে সন্দীপ মন্ডলের মেয়ে বণ্যা মন্ডল ও স্ত্রী নমিতা মন্ডলকে গালিগালাজ, অশালীন আচরণ ও মারপিট করে। এ ঘটনায় নমিতা মন্ডল বাদি হয়ে ওই চারজনের নাম উল্লেখ করে ওই বছরের ১৪ জানুয়ারি সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা (সিআরপি-১২/১৬ আশাশুনি) দায়ের করেন। বিচারক মোঃ আকরাম হোসেন তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক রশিদুজ্জামান ওই বছরের ৮ এপ্রিল মামলায় বর্ণিত চার আসামীর বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন (সিআর-৬৮/১৬ আশাশুনি)। ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল ওই চার আসামীর বিরুদ্ধে ৩৪১, ৩২৩, ৩৫৪ ও ৫০৬ ধারায় আদালত অভিযোগ গঠণ করা হয় (টিআর-৩১৯/১৬ আশা)। পাঁচজন সাক্ষীর জবানবন্দি ও মামলার নথি পর্যালোচনা শেষে জ্যেষ্ট বিচারিক হাকিম ইয়াসমিন নাহার ৩২৩ ও ৩৫৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে আসামী গৌতম গাইনকে পৃথক দুই ধারায় তিন মাস করে ছয় মাস কারাদন্ড দেন। একইভাবে মমতা গাইন , উর্মিলা গাইন ও লতিকা মন্ডলকে ৩২৩ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে এক মাস করে কারাদন্ড দেন।
তবে তাদেরকে জেল হাজতে না পাঠিয়ে (১) প্রবেশনকালিন সময়ে কোন আসামী কোন প্রকার অপরাধীর সঙ্গে জড়িত হবেন না বা এই ধরণের অপরাধ করবেন না, (২) শান্তি বজায় রাখবেন, ভাল ব্যবহার করবেন (৩) কোর্ট এবং আইনপ্রযোগকারি সংস্থা আসামীদের যখন যেখানে ডাকবেন তখনই তারা উপস্থিত হবেন। (৪) কোন প্রকার মাদক বা নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করা যাবে না। (৫) কোন খারাপ সঙ্গে মেশা যাবে না। (৬) প্রবেশনকালিন সময়ে আসামীরা অভিযোগকারি নমিতা মন্ডলকে তিন মাস অন্তর ১০টি করে ২০টি ফলজ গাছ দেবেন। (৭) আসামী গৌতম গাইন সপ্তাহে একদিন করেন নিজ এলাকায় মাদক বিরোধী প্রচারণা চালাবেন। (৮) আসামী মমতা, উর্মিলা ও লতিকা ১৫ দিন পরপর একদিন নিজ এলাকায় বাড়ি বাড়ি যেয়ে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে প্রচার প্রচারনা চালাবেন।
বাদিপক্ষে পক্ষে এ মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট শংকর কুমার মজুমদার। আসামী পক্ষে ছিলেন অ্যাড.একেএম রেজোয়ান উদ দৌলা সবুজ।
আদালতের এ আদেশ সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম প্রথম আদালতের পেশকার মোঃ বনি শাহাদাৎ।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version