আলী মুক্তাদা হৃদয় : সাতক্ষীরার তালায় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে শেখ রিয়াদ হোসেন বাবু (২৬) নামের এক ছাত্রলীগ কর্মী আতœহত্যা করেছে। নিহত বাবু তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের হরিশচন্দ্রকার্টি গ্রামের শেখ মনজুর হোসেনের ছেলে। শুক্রবার বিকাল চারটার দিকে সে বিষপান করে। সন্ধ্যা ৭ টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিপারিবারিক কলহ সহ মানসিক ভাবে বিপথগ্রস্থ হয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতে কীটনাশক পান করেন শেখ রিয়াদ।
মৃত ছত্রীগ কর্মী বাবুর চাচা শেখ মিজবাহ উদ্দীন জানান, রিয়াদ অবিবাহিত। খুলনা বিএল কলেজ থেকে এবার সে অনার্স শেষ করেছে। চাকরী না পেলে বিয়ে করবে না জানালে পরিবারের সদস্যরা তার ছোট ভাইয়ের বিয়ে করানোর জন্য তোড়জোড় শুরু করে। শুক্রবার তার মামা ও পরিবারের সদস্যরা ছোট ভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখতে পাশের গ্রামে যায়। মেয়ে দেখে ফিরে আসার পর তারা জানতে পারে বাবু বিষ পান করেছে। এসময় তাকে উদ্ধার করে তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা ৭ টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
তালা থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেহেদী রাসেল আতœহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তীব্র হতাশা থেকেই এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে। তবে এর সাথে অন্যকোন কারন আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ময়না তদন্তের জন্য মৃতের লাশ শনিবার সকালে সাতক্ষীরা সদর হাসপতাল মর্গে পাঠানো হবে।
এদিকে কীটনাশক পানের কিছুক্ষণ আগে তার নিজের দুইটি ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দেন। তা হবুহ তুলে ধরা হল- নিজের কাছেই অবাক লাগছে। আজ এক সপ্তাহ হলো… বিষের বোতল টা আমার বালিশের নিচে পড়ে আছে স্পষ্ট দেখতে পারছি। সবাই নির্বাক হয়ে গেছে। ছোটো ভাইটা পাগল প্রায়। জানি ছোট বোন টা খুব কাঁদছে। অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি হয়তো! এমন টা তো হবার কথা ছিলনা। জানেন?, সেদিন খুব কেদেছিলাম আমি। যেদিন আমার হাত টা ছেড়ে দিয়েছিলেন সোহাগ দাদা। আমার বাঁচার শেষ আশা টুকু ছিলেন ওনি। অঝরে কেঁদেছি সারা রাত এই কদিন। প্রতি রাতে বাঁলিশ ভিজিয়েছি চোঁখের জলে। একটি বারও খোজ নাওনি কেমন ছিলাম আমি। আর, দোস্ত তোদের অনেক ধন্যবাদ। ফেসবুকে আমাকে নিয়ে লেখালেখি করছিস। তবে কি জানিস? বাস্তবে এতটা সময় তোরা যদি দিতি…তাহলে,না থাক কিছুনা,জানি তোমরা খুব কাঁদছো। জানি খুব ভালবাসতে আমাকে। হয়তো ঘৃণাও করতে অনেকে। যদি আর একটু খোজ করতে, আমার সমস্যা গুলো শুনতে…যদি আমার দিকে আর একটু খেয়াল রাখতে…যদি সবকিছু নির্ভয়ে বলতে পারতাম তোমাদের…তাহলে আজ হয়তো…। ছোট বোন, কাঁদিস না লক্ষিটি। হয়তো সব থেকে বড় অন্যায় টা তোর সাথে হলো! মাফ করে দিস তোর এই অপরাধী ভাইটিকে। জানি এই ভুলের কোন ক্ষমা নেই। ভাল থাকুক ভালবাসার মানুষ গুলো। দুর থেকে না হয় দেখলাম সবার হাসি মাখা মুখ। ভাল থেকো সবাই, হয়তো ফিরার ইচ্ছা থাকলেও চাইলে পারবোনা। ক্ষমা করে দিয়ো তোমাদের সন্তানকে। এখানে খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। সবায়কে ছেড়ে থাকাটা অনেক অনেক বেশি কষ্টের। অনেক বেশি ভুল করে ফেলেছি। ইশ্ যদি আর একটু সময় পেতাম। কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব না। ভাল থেকো সবায়। দুর থেকে দেখবো সবাইকে। ভাল থাকুক ভালবাসার মানুষগুলো। ক্ষমা করে দিবেন এই বাজে ছেলেটাকে।
আমি নাকি খারাপ, হুম মানলাম বাট হয়তো এমন কাউকে পাবেন না যে প্রমান করতে পারবে আমি খারাপ। কারন আমি আজ অবদি এমন কোনো কাজ করিনি যে প্রমাণ করতে পারবেন। ছোটো বেলা থেকে আমার রক্তে মিশে আছে রাজনীতি। আমি বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে বিশ্বাসি। তার দেখানো পথেই চলে আসছি আজ অবদি। চাকরি বা বিয়ে কোনোটাই করিনি ছাত্রলীগ করবো বলে। বাট আজ দলও টাকার কাছে জিম্মি। আমার জীবনে আর কি বাকি আছে, হয়তো বেচে থাকতাম দু’মুটো ভাতের জন্যে। কিন্তু যখন অসহায় মানুষ গুলো কাঁদে আমি তাদের কান্না সয্য করতে পারি না। আমার নেতা বঙ্গবন্ধুও পারেনি। তাই তো সে নিজের জীবন দিছে তবুও হার মানেনি,লড়াই করে গেছে অন্যায় এর বিপক্ষে সারাজীবন। আমিও অন্যায় কে প্রশ্রয় দিতে পারিনি তাই আমি খারাপ। আমার জীবনে আজ অবদি যতো খারাপ সময় তার সব কিছু এই রাজনীতির জন্যে। ভবিষ্যতের কথা ভাবিনি কখনো, আজ জীবনের এই শেষ সময় ক্যানো জানি মনে হচ্ছে এই ছাত্রলীগের নেশাটাই আমাকে শেষ করে দিলো। হারিয়েছি সব, ঘর, পরিবার, ভালোবাসার মানুষ, কাছের মানুষ সব সব কিছু হারিয়েছি এই রাজনীতির জন্যে। তাই চলে গেলাম এই নিষ্ঠুর সার্থের পৃথিবী থেকে ক্ষমা করে দিবেন আমাকে……………।
ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তালায় যুবকের আত্মহত্যা
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/