Site icon suprovatsatkhira.com

দেবহাটার আ.লীগ নেতা রায়হান হত্যার ৭ বছর

এমএ মামুন, দেবহাটা : সহিংসতাকালীন জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নির্মম ও নারকীয় হত্যা-যজ্ঞের শিকার দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদ আবু রায়হানের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী কাল (২১ নভেম্বর) শনিবার। ২০১৩ সালে মানবতা-বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় ঘোষণার পর সরকার বিরোধী আন্দোলনের নামে সারা দেশের ন্যায় সাতক্ষীরার দেবহাটাতেও নারকীয় তান্ডব চালায় বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। সে সময়ে ধর্মান্ধ জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা একের পর এক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর সশস্ত্র হামলা, দলীয় কার্যালয় ও নেতা-কর্মীদের বাড়ি ঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুট-পাট, মিছিল-পিকেটিংয়ের নামে গাছ কেটে সড়ক অবরোধ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল করে দেয়া, গণ-পরিবহণ ভাঙচুর এমনকি রাস্তার ওপর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রতীকী কবরও রচনা করে।
তৎকালীন সময়ে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কাছে মূর্তিমান এক আতঙ্ক ছিলেন দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু রায়হান। সরকারের উচ্চ পদস্থ মন্ত্রী-এমপি এবং প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথেও আবু রায়হানের ছিল ব্যাপক সখ্যতা। ফলে দেবহাটাতে আবু রায়হানের কারণে একের পর এক ভন্ডুল হতে থাকে বিএনপি ও ও জামায়াত-শিবিরের নাশকতার পরিকল্পনা। এককথায় আওয়ামী লীগের ঢাল হিসেবে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নাশকতা কর্মকান্ডে অন্যতম বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আবু রায়হান। এতে করে নিজেদের পথের কাঁটাকে সরাতে আবু রায়হানকে হত্যার পরিকল্পনা শুরু করে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির। পরিকল্পনার এক পর্যায়ে ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর সন্ধ্যায় পারুলিয়া বাস স্ট্যান্ডের পাশে উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের সাথে অবস্থানকালে অতর্কিত হামলা চালিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রভাবশালী নেতা আবু রায়হানকে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে নির্মম ও নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে বিএনপি ও জামায়াত শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডাররা। নির্মম ও নৃশংস এ হত্যা-যজ্ঞের ঘটনার ৭ বছর অতিবাহিত হলেও হত্যাকান্ডের নানা বিষয় এখনও আঁধারেই রয়ে গেছে। এমনকি হত্যাকান্ড কিংবা মূল পরিকল্পনাকারী ও কিলিং মিশনে অংশ নেয়া সন্ত্রাসীদের সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন ক্লু উদ্ঘাটিত হয়নি বলে দাবি নিহত আওয়ামী লীগ নেতা শহীদ আবু রায়হানের পরিবারের। শহীদ আবু রায়হানের স্বজনরা জানান, হত্যাকান্ডের একদিন পর আবু রায়হানের মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে দেবহাটা থানায় পেনাল কোডের ৩০২/৩৪ ধারায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ০৫, তাং- ২৩/১১/১৩। হত্যার পর প্রায় মাসব্যাপী দেবহাটাতে চিরুনী অভিযান চালিয়ে বহু জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এসকল গ্রেপ্তারকৃত ছাড়াও হত্যাকান্ডের পর থেকে মামলার তদন্ত শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত নাশকতায় সংশ্লিষ্ট ও কিলিং মিশনের সন্ধিগ্ধ বহু আসামিকে রায়হান হত্যা মামলার আসামি দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়। ফলে গ্রেপ্তারকৃত লম্বা লিস্টের আসামিদের কারণে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের প্রকৃত মোটিভ, পরিকল্পনাকারী ও কিলিং মিশনে অংশ নেয়া হত্যাকারীদের চিহ্নিতের বিষয়টি দিনদিন ঝাপসা হয়ে ওঠে। এমনকি আবু রায়হান হত্যাকান্ডের অন্যতম মাস্টার মাইন্ড হিসেবে দেবহাটার কয়েক ডজন মামলার পলাতক আসামি এবং সর্বোচ্চ হিং ও উগ্রপন্থী সশস্ত্র জামায়াত নেতা জিয়াউর রহমান ওরফে আফগান জিয়ার নাম বারবার সামনে উঠে আসলেও চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির চার্জশিটে সেই আলোচিত আফগান জিয়াসহ শীর্ষ জামায়াত-শিবির ক্যাডারদের নাম লিস্টের শেষের দিকে রেখে দায়সারা অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে বলেও দাবি আবু রায়হানের পরিবারের। গেল সাত বছরে তদন্ত চলাকালে দেবহাটা থানার এক তদন্ত কর্মকর্তার হাত থেকে অপর কর্মকর্তার হাতে বদল হয় রায়হান হত্যার ফাইল।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের শেষের দিকে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলাটির তদন্ত শেষ হয়েছে দাবি করে প্রায় ১শ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। এরপর থেকে অদ্যাবধি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে রায়হান হত্যা মামলাটি। রায়হান হত্যার পর থেকে সেই আফগান জিয়াসহ তার নিকটতম হাতে গোনা কয়েকজন শীর্ষ জামায়াত ও শিবির ক্যাডার এখনও পলাতক থাকলেও, চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলাটির অন্যান্য অধিকাংশ আসামিরাই বর্তমানে জামিনে থেকে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শহীদ আবু রায়হানের পরিবার। একই সাথে এ হত্যা-যজ্ঞের মূল মোটিভ উদ্ঘাটন করে হত্যার পরিকল্পনা ও কিলিং মিশনের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন আবু রায়হানের পুত্র ছাত্রলীগ নেতা তন্ময়সহ পরিবারের সদস্যরা। এদিকে প্রতিবছরের মতো এবারও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি ও আবু রায়হানের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রয়াত এ নেতার রুহের মাগফিরাত কামনায় পৃথকভাবে মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version