Site icon suprovatsatkhira.com

সাতক্ষীরা আহ্ছানিয়া মিশন নিয়ে চক্রান্ত চলছে

স্টাফ রিপোর্টার: সাতক্ষীরা আহ্ছানিয়া মিশনে বানিজ্য বন্ধ হওয়ায় একটি মহল তাদের বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। আহছানিয়া মিশনের সার্বিক বিষয় অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি দায়িত্বে আসার পর কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের দিকনির্দেশনায় পীর কেবলার আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত করতে বর্তমান কার্যনিবাহী কমিটির নেতৃবৃন্দকে পদে পদে বাঁধাগ্রস্ত ও হয়রানি করে আসছে চিহ্নিত ওই মহলটি।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা আহ্্ছানিয়া মিশনের কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভার সিদ্ধান্তে আবু শোয়েব এবেল মিশনের চারতলা বিশিষ্ট মাল্টি কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তার মূল উদ্দেশ্য ছিলো, সেখানে দ্বিতল বিশিষ্ট (১ হাজার ৬৬১ দশমিক ৪৯ স্কয়ার ফুট) ৩টি বৃহৎ দোকান ঘর নিয়ে সেখানে নিজের ব্যবসা করা। নির্মাণ কাজে ব্যাপক, অনিয়ম ও দূর্ণীতি করায় ২০১৮ সালের ১৭ মার্চ জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দায়ের হয়। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সভাপতিও জেলা প্রশাসকের নিকট আলাদা একটি পত্র দেয়া হয়।
এরমধ্যে ২০১৮ সালের ৫ মে মিশনের নির্বাচনে মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল-আলহাজ্জ কাজী মনিরুজ্জামান মুকুল, আলহাজ্জ গোলাম মোস্তফা, আলহাজ্জ মামুনার রশীদ এর নেতৃত্বাধিন প্যানেলের ২৩ জন সদস্য ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করেন। এর প্রায় এক মাস পর ২০১৮ সালের ৩ জুন তাদের দায়িত্ব দেন।
অন্যদের দোকান প্রস্তুত না করে, মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু না করে মিশনের অংশ সম্পূর্ণ ফাঁকা রেখে তড়িঘড়ি করে নিজের ব্যবসার জন্য বরাদ্দ নেয়া অংশে দুইতলা বিল্ডিংয়ের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে প্রেসের মেশিনপত্র কিনে নিজের ব্যবসা শুরু করেন আবু শোয়েব এবেল।
এ অবস্থায় আবু শোয়েব এবেল সাদা কাগজে ১ কোটি ৪৮ লাখ ৮২ হাজার ৩০৪ টাকা এ পর্যন্ত নির্মাণ খরচ হয়েছে দাবি কওে মিশনের বর্তমান কার্যনির্বাহী কর্মকর্তাদের সাথে বিরোধ শুরু করেন। কয়েক দফা আলোচনার পর জেলা প্রশাসক স্বহস্তে ১ কোটি ৪১ লাখ টাকায় রফা করেন। সেখানে তিনি আবু শোয়েব এবেলের অনুকূলে থাকা দ্বিতল বিশিষ্ট দোকানের পজেশন মূল্য বাবদ মাত্র ৫০ লাখ টাকা ১২ হাজার টাকায় র্নিধারণ করেন। সেটি তিনি মেনে নিয়ে তিন লাখ টাকার চেক গ্রহণ করেন। এভাবে তিনি মিশন থেকে ৯০ লাখ ৮০ হাজার নগদ টাকা গ্রহণ করেছেন। এর বাইরেও বিভিন্ন সময়ে মিশনের কাছ থেকে ঋণও নিয়েছেন। যা আজও পরিশোধ করেননি। তার পজেশনে রাখা দোকানগুলি দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করলেও কোনো ভাড়া দেননি।
ভাড়া পরিশোধের জন্য তাকে কয়েক দফা নোটিশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি সেই নোটিশ অগ্রাহ্য করে অদ্যবধি ভাড়া না দিয়ে, চুক্তি না করে উল্টো মিশন কর্তৃপক্ষের নামে গত ২৭ অক্টোবর সাতক্ষীরা যুগ্ম জেলা জজ-১নং আদালতে (দেওয়ানী-১৫৬/২০ ও মানিস্যুট ৮/২০২০নং) ২টি মিথ্যা, বানোয়াট গল্প তৈরি করে মামলা দায়ের করেছেন।
এমন অবস্থায় সাতক্ষীরা আহ্ছানিয়া মিশনের কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ গত ৩ জুন শেষ হয়। মেয়াদ শেষের আগে বিষয়টি মিশনের সভাপতি ও জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়। বৈশ্বিক মহামারী করোনা পরিস্থিতির কারনে দেশে তখন সাধারণ ছুটি। তখন গঠনতন্ত্রের আলোকে কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সভাপতি ও সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আ ফ ম রুহুল হক, সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি ও কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ সাহেবের সাথে আলোচনাপূর্বক গত নির্বাচনে পরাজিত ৬ জনসহ নতুন ৮ জনকে নিয়ে কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করেন।
মিশনের একাধিক কর্মকর্তা ও সদস্য জানান, পূর্বের কমিটি মসজিদের নূন্যতম কোনো অবকাঠামো করে যাননি। তারা গত ১৮/০১/২০১৮ তারিখের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেন, দোতলার পুরো অংশ দোকানঘর ভাড়া দিয়ে তিনতলায় মসজিদ স্থাপন করা হবে। মিশনের সদস্যদের দাবীর প্রেক্ষিতে বর্তমান কমিটি দোতলায় মসজিদ স্থাপন করেন।
তৎকালীন জেলা প্রশাসক ২৬/০৫/২০১৮ তারিখে বিভিন্ন আলেমগণকে নিয়ে এক সভা করেন। সেখানে আলেমগন বলেন, মসজিদ ভবন বহুতল স্থাপনের শর্ত হচ্ছে মসজিদের ওপর মসজিদই স্থাপিত হবে। এরপর জেলা প্রশাসক ০২/০৭/২০১৮ তারিখে গঠনতন্ত্রে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কথা মাথায় রেখে একটি নকশা তৈরি করে দেন। সেই নকশা মোতাবেক কমিটি মিশনের নিজস্ব অর্থায়নে এক বছর আগে দ্বিতীয় তলায় ২ হাজার ৩৭৬ বর্গফুট আয়তন বিশিষ্ট মসজিদ স্থাপন করেছেন এবং এই মসজিদের সমপরিমাণ জায়গা তৃতীয় তলা ও চতুর্থ তলায় বরাদ্দ রেখেছেন। যার সর্বমোট আয়তন হবে ৭ হাজার ১২১ বর্গফুট। ইতিমধ্যে তৃতীয় তলায়ও মসজিদের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করে ওই মহলটি ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন।
সাতক্ষীরা আহ্ছানিয়া মিশন এর সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল এসব প্রসঙ্গে জানান, মুলত: খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:) এঁর মিশন প্রতিষ্ঠার লক্ষ উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করতে একটি বিশেষ মহল পরিকল্পিতভাবে চক্রান্ত করছে। এনিয়ে সকল মিশন প্রেমিক তথা সাতক্ষীরাবাসিকে সজাগ থাকতে অনুরোধ জানিয়েছেন।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version