নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুরে ভূমি সংস্কার কমিটির বরাদ্দকৃত পশুপতি সাহার জমি জবরদখল করে সাইনবোর্ডে ১৯৭৩ সালে স্থাপিত লিখে ক্লাব নির্মাণ করা হয়েছে। একইভাবে ভূমিহীন স্বপন সাহার দখলীয় আড়াই শতক সরকারি খাস জমি তাকে ডিসিআর না দিয়ে ভূমিদস্যু জিএম ফজলুল করিমের নামে ডিসিআর দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ স্থানীয় সাংসদের প্রভাব, দলীয় প্রভাব ও আর্থিক সুবিধার মাধ্যমে জিএম বজলুল করিম ডিসিআর নিয়ে তড়িঘড়ি করে ঘেরা দিয়েছেন। প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে গত ১৯ নভেম্বর আবেদন জানানো হয়েছে।
ঈশ্বরীপুর গ্রামের স্বপন কুমার সাহা জানান, ঈশ্বরীপুর মৌজার হাল ২০ দাগে সাত শতক জমি তার জ্যেঠামহাশয় পশুপতি সাহাকে উপজেলা ভূমি সংস্কার কমিটি দেখভাল করার জন্য ১৯৯১ সালের ২০ মার্চ এর সভায় অনুমোদন দেন। এরপর থেকে তারা ওই জমি ভোগদখল করে আসছিলেন। ওই জমি নিয়ে ডিক্রী পেয়েছেন দাবি করে জনৈক আব্দুর রাজ্জাক দাবি করলেও তার বৈধতা না থাকায় সরকারি খাস খতিয়ানে রয়ে যায়। একপর্যায়ে এক মাস আগে ওই জমিতে ঈশ্বরীপুর উত্তরপাড়া আবাহনী ক্রীড়া চক্রের সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে ১৯৭৩ সালে স্থাপিত লিখে সেখানে ক্লাব নির্মাণ করা হয়। এর পরপরই তার পুকুরের সঙ্গে পানি নিষ্কাশনের পাইপ লাইনের মুখ ইট দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া হাল ১৮ দাগের ১০ শতক জমি তিনি দীর্ঘকাল ধরে ভোগদখল করে আসছিলেন। গত ৪ আগষ্ট তিনি ওই জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য শ্যামনগর সহকারি ভূমি কমিশনারের কাছে আবেদন করেন। আট শতক জমির মালিক হয়ে একজন ভূমিহীন হিসেবে তিনি ওই জমি বন্দোবস্ত চান। অথচ সাংসদ জগলুল হায়দারের খালাতো ভাই ও ঈশ্বরীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিএম বজলুল করিমের ভাই হওয়ার সুবাদে প্রভাব খাটিয়ে ও আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে সাত বিঘা জমির মালিক হওয়ার পরও গত ২৮ অক্টোবর আড়াই শতক জমির ডিসিআর দিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশীলদার সঞ্জয় চ্যাটার্জী। নিয়ম বহির্ভুতভাবে ওই জমি ডিসিআর নিয়ে গত বুধবার বাঁশের চটা দিয়ে বেড়া দিয়ে দখল দেখানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন ফজলুল করিম। প্রতিবাদ করায় তিনি ও তার পরিবারের লোকজন হুমকিতে রয়েছেন।
সরেজমিনে শনিবার ঈশ্বরীপুর গ্রামে গেলে পরিতোষ সাহা, নির্মল সাহা , সাহেব আলীমহ কয়েকজন জানান, সাহা পরিবারের দখলে থাকা দীর্ঘদিনের খাস জমি ভূমিহীন হিসেবে স্বপন সাহাকে না দিয়ে বিত্তশালী জিএম ফজলুল করিমকে ডিসিআর দেওয়াসহ ক্লাব নির্মাণ করা হয়েছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গ্রামবাসি বলেন, জিএম ফজলুল করিমের বড় ভাই কামরুল ইসলাম নিয়ম বহির্ভুতভাবে মুণ্ডা স¤প্রদায়ের বেশ কিছু জমি লিখে নিয়েছেন।
সাবেক সাংসদ ফজলুল হক বলেন, ১৯৯১ সালের ২০ মার্চ এর সভায় তিনি সভাপতি হিসেবে ঈশ্বরীপুর মৌজার ২০ দাগের জমি পশুপতি সাহার অনুকুলে দেখাশুনা ও ভোগ দখলের দায়িত্ব দিয়ে রেজুলেশন করা হয়। ওই জমিতে ক্লাব নির্মাণ করা দূঃখজনক। একইসাথে ভূমিহীন স্বপর সাহাকে বন্দোবস্ত না দিয়ে বিত্তশালীর নামে একসনা ডিসিআর দেওয়া দূঃখজনক।
এ ব্যাপারে জিএম ফজলুল করিম বলেন, ১৮ দাগের খাস জমির নীচের সাত বিঘা তাদের কেনা। এ কারণে যাতায়াতের জন্য তারা ওই জমি ব্যবসহার করতেন। কোন প্রভাব বা আর্থিক সুবিধা নয়, আবেদন করায় তাকে ডিসিআর দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি আট বিঘা সম্পত্তির মালিক সেটা খুব জোরে সোরে উচ্চারন করে বলে সাংসদ জগলুল হায়দার তার খালাত ভাই ও ঈশ্বরীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিএম বজলুল হক তার মেঝ ভাই।
ঈশ্বরীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশীলদার সঞ্জয় চ্যাটার্জী বলেন, সহকারি ভূমি কমিশনারের পরামর্শ নিয়েই তিনি জিএম ফজলুল করিমকে আড়াই শতক জমি ডিসিআর দিয়েছেন। তবে ওই জমি দীর্ঘদিন স্বপন সাহার দখলে ছিল তা অস্বীকার করেননি তিনি।
শ্যামনগরে ভূমিহীনের দখলীয় খাস জমিতে ক্লাব নির্মাণ, বিত্তশালীকে ডিসিআর
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/