রাকিবুল ইসলাম : মহা-ষষ্ঠীর মধ্যে দিয়ে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। জেলার মন্ডপগুলো বর্ণিল আলোক সজ্জায় অত্যাধুনিক আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে। ঢাকের বোল, কাঁসর ঘণ্টা ও শাঁখের ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠবে পূজামন্ডপ। তবে এ বছর নভেল করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি কালেই শুরু হতে যাচ্ছে দেবীপক্ষের সূচনা। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই হবে মাতৃ বন্দনা। দেবী দুর্গার আগমন ধ্বনি শুনতে পাওয়া মহালয়ার দিনটি ঘিরে ব্যস্ত সব পূজা মÐপের সঙ্গে জড়িত আয়োজকরা। জেলার সব মন্দিরে মহালয়া উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে বিশেষ আয়োজন। পুরোহিত শ্রী তাপস কুমার চক্রবর্তী জানান, মহালয়ার মাসে দুটি অমাবস্যাই একই মাসে পড়েছে। আর সেজন্যই এবার পূজা এক মাস পিছিয়ে আশ্বিনের বদলে কার্তিকে হবে। শাস্ত্রমতে, ‘মল’ মাসে কোনও পূজা হয় না। শুধু পূজাই নয়, কোনও শুভ অনুষ্ঠানও ‘মল’ মাসে করা যায় না। তাই এ বছর মা দুর্গা আসছেন কার্তিক মাসে। তিনি আরো বলেন, দুটি অমাবস্যা থাকায় বাংলা ১৪২৭ সালের আশ্বিন মাস মল মাস। তাই পূজা এবার শরতে নয়, হেমন্তে। তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও একই কারণে মহালয়া ও দুর্গা পূজা শুরুর ব্যবধান প্রায় এক মাস হয়েছিল। তিনি আরো জানান, প্রতি তিন বছর অন্তর একটি ‘অধিক-মাস’ আসে। সূর্য ও চন্দ্র মাসের গণনার ওপর ভিত্তি করে হিন্দু ক্যালেন্ডার চলে। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী একটি সূর্য বর্ষ ৩৬৫ দিন ও প্রায় ৬ ঘণ্টার হয়ে থাকে। আবার চন্দ্র বর্ষ ৩৫৪ দিনের হয়। এই দুইয়ের মধ্যে ১১ দিনের পার্থক্য থাকে। টানা তিন বছরে এটি এক মাসের সমান হয়ে যায়। এই অতিরিক্ত মাসের পার্থক্য দূর করার জন্যই প্রতি তিন বছরে একবার অতিরিক্ত মাস আসে। একেই অধিক-মাস বলা হয়। এ বছর আশ্বিন সেই অধিক-মাস। আজ ২২ অক্টোবর ষষ্ঠী, ২৩ অক্টোবর সপ্তমী, ২৪ অক্টোবর অষ্টমী, ২৫ অক্টোবর নবমী, ২৬ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে ৬ দিন ব্যাপী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা পরিসমাপ্তি ঘটবে।
জেলা পূজা উদযাপন কমিটির তথ্য মতে, জেলায় ৫শ’ ৬৯টি মÐপে এবার দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। তবে আগের তুলনায় এবার মÐপের সংখ্যা কম। এর মধ্যে সদর থানায় ৯৮টি মÐপে, আশাশুনি থানায় ১শ’ ৫টি মÐপে, দেবহাটা থানায় ২১টি মÐপে, কালিগঞ্জ থানায় ৫২টি মন্ডপে, পাটকেলঘাটা ও তালা থানায় ১শ’ ৮৫টি, শ্যামনগর থানায় ৬৭ টি মন্ডপে ও কলারোয়া থানায় ৪১ টি মÐপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। জেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার শীল জানান, ‘এবারের পূজায় স্বাস্থ্যবিধির ওপরে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এজন্য পূজার ব্যবস্থাপনায় কিছু পরিবর্তন হতে পারে। জেলায় প্রায় ৫শ’ ৬৯ টি মÐপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে আমাদের কাছে তথ্য এসেছে’। তিনি আরো জানান, ‘করোনা ভাইরাসের কারণে জেলা প্রশাসন ও পূজা কমিটির সিন্ধান্ত মোতাবেক পূজা মÐপে প্রবেশে ২৬ টি শর্ত দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে পূজা মÐপে মাক্স ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। এছাড়া মন্ডপে প্রবেশের জন্য পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা আলাদা গেট থাকবে। পূজা মন্ডপে রাত ১০ টার পর কোন দর্শনার্থী প্রবেশ করতে পারবে না। শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে থানা পুলিশের পাশাপাশি থাকবে আনসার ও গ্রাম পুলিশ স্বেচ্ছাসেবী সদস্য’।
মহা-ষষ্ঠীর মধ্যে দিয়ে শুরু হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/