নিজস্ব প্রতিনিধি : দেবহাটায় প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমাণ মিনি ক্যাসিনো চালিয়ে যাচ্ছে ভোমরা ভোমরা বন্দরের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও ছাত্রদল নেতা আলিউল আজিম রোকন। সে দেবহাটার ঘলঘলিয়া গ্রামের আকবর আলীর ছেলে। বর্তমান সরকারের শাসনামলে সাম্প্রতিক সময়ে দেশ জুড়ে যখন জুয়া, মাদক সহ নানা অপরাধ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান চলছে, ঠিক তখনই দেবহাটার ঘলঘলিয়া, চরশ্রীপুর, ভাতশালা, রহিমপুর, পাঁচপোতা, রতেœশ্বরপুর সহ আশপাশের এলাকায় ছাত্রদল নেতা রোকনের নেতৃত্বে প্রতিরাতেই চালানো হচ্ছে অবৈধ জুয়ার আসর। এই জুয়ার আসরে আসক্ত হয়ে প্রতিরাতেই সর্বশান্ত হচ্ছে এলাকার যুবসমাজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। পাশাপাশি এসব নব্য জুয়াড়িরা জুয়ার টাকা জোগাড় করতে প্রতিনিয়ত জড়িয়ে পড়ছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ডে। জুয়ার আসরের মূল আয়োজক ঘলঘলিয়ার আলিউল আজিম রোকন ছাত্রদলের একজন চিহ্নিত ও সক্রিয় ক্যাডার বলেও জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ২০১৩ সাল থেকে শুরু করে তৎপরবর্তী সময়ে প্রকাশ্যে নাশকতামূলক কর্মকান্ডে নেতৃত্ব দিয়ে ব্যাপক তান্ডব চালায় বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী। তারা জানান, আলিউল আজিম রোকন প্রতিদিন এলাকার উঠতি বয়সের যুবকদের এক লাফে অর্থসম্পদের মালিক বনে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের নিয়ে জুয়ার আসর বসিয়ে সর্বশান্ত করছে। তারা আরো জানান, রোকন প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এলাকার বিভিন্ন ঘরের মধ্যে ও মৎস্য ঘেরের বাসায় ভ্রাম্যমাণ জুয়ার আসর বসিয়ে আসছে। কোন যুবক জুয়ার আসরে প্রথম দিন হেরে সর্বশান্ত হওয়ার পর দ্বিতীয় দিন খেলতে না চাইলে তাদেরকে নানা ধরনের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক জুয়ার আসরে বসতে বাধ্য করে বিএনপি ক্যাডার রোকন। ছক করে জুয়ার আসরে বসিয়ে এলাকার সহজ সরল যুবকদের পরিকল্পিতভাবে হারিয়ে তাদের সেই অর্থে ছাত্রদল ক্যাডার রোকন রাতারাতি বনে গেছেন সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী। ভোমরা স্থলবন্দর সংলগ্ন আমিনিয়া মার্কেটের একটি কক্ষে খুলে বসেছেন জমজমাট সিএন্ডএফ ব্যবসা। মূলত ওই সিএন্ডএফ ব্যবসার আড়ালে ভোমরা এলাকাতেও বিভিন্ন সময়ে রোকন জুয়ার আসর বসিয়ে আসছে বলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে। প্রতিরাতে রোকনের জুয়ার আসরে থাকে তাসসহ জুয়া খেলার নানান বোর্ড ও সরঞ্জামাদি। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত আইপিএল সহ উল্লেখযোগ্য খেলা গুলোতেও রোকনের সাজানো জুয়ার আসরে জুয়াড়িরা লাখ লাখ টাকার বাজি ধরে সর্বশান্ত হচ্ছেন। প্রতি রাতের খেলা গুলোতে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ, দশ এমনকি পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত বাজি ধরেন জুয়াড়িরা। জুয়ার আসরে কোনো টিমে খেলোয়াড় কম থাকলে, জুয়ার আসর সচল রাখতে নিজেই জুয়াড়ি হিসেবে আসরে বসে পড়েন ওই রোকন। স্থানীয়রা জানান, ২০১৩ সালে সহিংসতাকালীন সময়ে ওই ছাত্রদল ক্যাডার রোকন ঘলঘলিয়া, গোপাখালী, টাউনশ্রীপুর, চরশ্রীপুর, ভাতশালা, রহিমপুর, পাঁচপোতা, রতেœশ্বরপুর সহ আশপাশের এলাকায় প্রকাশ্যে সরকারি গাছ ও রাস্তা কাটা, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর সশস্ত্র হামলা, দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসত ঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, মিছিল-পিকেটিংসহ সরকার বিরোধী কর্মকান্ড চালিয়েও মামলার আসামি না হয়ে বরং বহাল তবিয়তে থাকায় এলাকার মানুষ ভয়ে তার বিরুদ্ধে কথা বলেতে পারেন না। প্রভাবশালী হওয়ায় ক্ষমতা ও অর্থের দাপট দেখিয়ে এলাকায় জুয়ার আসর বসানো সহ নানা অপরাধের রামরাজত্ব কায়েম করে চলেছে।
তার জুয়ার আসরের সত্যতার বিষয়ে খোঁজ নিতে ঘলঘলিয়ার একটি জুয়ার আসরে যায় এ সাংবাদিক। সেখানে সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে আলিউল আজিম রোকন সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা টাকায় জুয়া খেলি না’।
এলাকার যুবসমাজকে জুয়া ও মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন থেকে রক্ষার জন্য অবিলম্বে ওই জুয়ার আসরের মূল হোতা ছাত্রদল ক্যাডার রোকনকে গ্রেপ্তারসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দেবহাটা থানার ওসি বিপ্লব কুমার সাহা, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শেখ ইয়াছিন আলী ও সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী অভিভাবক সহ এলাকার সকল শ্রেণি পেশার মানুষ।
