Site icon suprovatsatkhira.com

দেবহাটার পল্লীতে তৈরি হচ্ছে বিদেশে রপ্তানিযোগ্য সিটিগোল্ডের রুলি

কাদের মহিউদ্দীন : টুং টাং শব্দে মুখরিত দেবহাটা উপজেলার উত্তর সখিপুর পল্লীগুলো। সকাল না হতেই বাড়ির মহিলা-পুরুষেরা তৈরি করছে চোখ ধাঁধানো সব হাতের রুলি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দেবহাটার উত্তর সখিপুর গ্রামের মোহাম্মাদ আলীর পুত্র, মিজানুর রহমান (৩৫) প্রথমে সাতক্ষীরার এক সোনার দোকানে কাজ করতেন। সেখানে সে প্রশিক্ষণ শেষে নিজ বাড়ি উত্তর সখিপুর গ্রামে স্বল্প পরিসরে ঢাকার নওয়াবপুর থেকে ৯ শত টাকায় কেজিতে কাষ্টিং কাসা ক্রয় করে রুলি তৈরি শুরু করেন। শুরুতে ব্যবসাটি লাভজনক হওয়ায় আস্তে আস্তে উত্তর সখিপুর গ্রামের অধিকাংশ মহিলারা রুলির উপর নকশা কাজে জড়িয়ে পড়েন। বর্তমান প্রায় ৪০-৫০টি পরিবারের লোকজন এ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। গ্রামে ৫টি বড় কারখানা আছে। কারখানা থেকে এলাকার মহিলারা কাজ নিয়ে বাড়িতে বসে রুলির উপর নকশা করে থাকেন। প্রতি জোড়া রুলি মজুরি হিসাবে ৬০-৮০টাকা পায়। এক জোড়া রুলি নাকশা করতে প্রায় ১ঘন্টা সময় লাগে। এভাবে মহিলা কারিগররা প্রতিদিন ৫-৬ জোড়া রুলি তৈরি করেন। যা তারা মজুরি হিসাবে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা পর্যন্ত আয় করেন। প্রথমে কাসা থেকে হাতের মাপ অনুযায়ী বিভিন্ন মাপের রুলির ডিজাইন দেওয়া হয়। এরপর এর উপর নকশা তৈরি জন্য কারিগরদের নিকট পাঠানো হয়। কারিগররা নকশা শেষ করলে কারখানায় এটি ভাল করে পরিষ্কার করা হয়। এর উপর স্বর্ণ রঙের প্রলেপের তাপ দিয়ে শুকানো হয়, তারপর এটি বাজারজাত করা হয়। ঢাকা, যশোর, খুলনা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের অর্ডার অনুযায়ী এই রুলি সরাসরি অথবা কুরিয়ার মাধ্যমে পাঠানো হয়ে থাকে। উল্লেখ্য ১ কেজি কাষ্টিং পিতল থেকে ৫০ জোড়া রুলি তৈরি করা হয়। প্রতি রুলির উৎপাদন খরচ ১শ’ ৮০ টাকা এবং বাজারে বিক্রি মূল্য ২শ’ ৩০ টাকা থেকে ২শ’ ৫০ টাকা। বর্তমানে উত্তর সখিপুরে ৬-৭ টি এ জাতীয় কারখানা আছে। যার সাথে এলাকার ১শ’ ৫০ থেকে ২শ’ জন কারিগর কাজ করে থাকে। যার উপরে ভর করে এলাকার বেকার যুবক ও মহিলারা স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। রুলি ব্যবসায়ী মৃত গোলাপদি মোল্ল্যার পুত্র সেলিম হোসেন প্রতিবেদককে জানান, ‘আমি এখানে ২০১০ সালে এ কাজ শুরু করি। বর্তমানে বিভিন্ন বাজারে এ সকল পণ্য বিক্রয় করে আমার সংসার যাত্রা নির্বাহ করছি। এর সাথে এলাকার অনেক মানুষ এ পেশায় নিয়োজিত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছে। সরকার যদি আমাদের স্বল্প সুদে আর্থিক ঋণ প্রদান করে থাকেন তাহলে আমরা আরো বেশি রুলি তৈরি করতে সক্ষম হব এবং এলাকার অসংখ্য বেকার যুবক-যুবতি তাদের কর্মসংস্থান খুঁজে পাবে’। তিনি আরো বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা এ কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ পুরস্কারও পেয়েছি’।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version