কাদের মহিউদ্দীন : শারদীয় দুর্গোৎসবে বিজয়া দশমীতে ছিল না সেই চিরচেনা আনন্দ উৎসব। এমনকি কোনো শোভাযাত্রাও চোখে পড়েনি। ঢাকের বাদ্য ও অশ্রæভেজা ভালোবাসায় দুর্গতিনাশিনী মা দুর্গাকে বিদায় জানিয়েছেন ভক্তরা। বিশ্ববাসীর করোনা মুক্তিই ছিলো এবারের পূজায় ভক্তদের প্রধান প্রার্থনা।
সোমবার সকালে বিজয়া দশমীর ‘বিহিত পূজায়’ ষোড়শ প্রচার পূজার পাশাপাশি দেবী প্রতিমার হাতে জরা, পান ও শাপলা ডালা দিয়ে আরাধনা করা হয়। বিজয়া দশমীর পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে সিঁদুর খেলায় মত্ত ভক্তরা।
প্রতিমা বিসর্জন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
দেবহাটা উপজেলার ইছামতি নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বিজয়া দশমী পালন করা হয়েছে। সনাতন ধর্মের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা সোমবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে ইছামতি নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। এবার করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে প্রতিমা বিসর্জনে মানতে হয়েছে অধিক নিয়মকানুন। তবে এবছর নদীতে কোন নৌকা না চললেও সীমান্ত পারে সমবেত হয়েছিল অসংখ্য ভক্তানুরাগী। এছাড়া প্রতিমা বিসর্জনের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত পারে কিছু নৌকা দেখা মিললেও তা ছিল খুবই সীমিত এবং বিজিবি ও বিএসএফের কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে কোন নৌকা নিজেদের সীমারেখা অতিক্রম করতে পারেনি। দর্শণার্থীরা জানান, দেশ বিভাগের অনেক আগে থেকেই বিজয়া দশমীতে উভয় পারের মানুষেরা আয়োজন করে আসছিল মিলন মেলার। দেশ বিভাগের পরেও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি ইছামতি নদীর এই জল-সীমা রেখা। বিভিন্ন সময়ে নানা প্রতিক‚লতা সত্তে¡ও বন্ধ হয়নি মিলন মেলা। প্রতি বছর শুধুমাত্র উভয় পারের মানুষ নয়, বরং বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন মানুষ এই এলাকায় হাজির হতো শুধুমাত্র ভেদাভেদ ভুলে দিনটিতে আনন্দ উপভোগ করার মানসে। উভয় দেশের মানুষ আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা করে কিছুটা শান্তি নিয়ে ফিরে যেতো আপন আপন ঠিকানায়। সম্প্রতি কয়েক বছর পূর্বে সেই দুই বাংলার মিলন মেলার বিলুপ্তি ঘটলেও নদীতে নৌকা ট্রলার নিয়ে নির্দিষ্ট সীমানায় দূর থেকে আপন জনদের দেখা মিলতো। কিন্তু এবারের মিলনমেলায় ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যার কারণে এক দেশের মানুষ অন্য দেশে যেতে যাওয়াতো দুরে থাক কোন নৌকাও ইছামতি নদীতে নামতে পারেনি। করোনা পরিস্থিতিসহ সীমান্ত সুরক্ষার স্বার্থে এই নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্র জানায়। উল্লেখ্য, গত ২৩ অক্টোবর ২০২০ ইং তারিখ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টায় দেবহাটার টাউনশ্রীপুরস্থ ইছামতি নদীর মাঝ বরাবর বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে এক পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে দেবহাটার টাউনশ্রীপুর বিজিবির সুবেদার সাহেব আলী, দেবহাটা থানার এসআই মিজানুর রহমান, ভারতের পক্ষে সোদপুর ৮৫ বিএসএফ ক্যাম্পের অ্যাসিসটেন্ট কমান্ডার নিরাশ দাশ, টাকি পৌরসভার মেয়র সোমনাথ মূখার্জী, পুলিশের ডিএসপি মোহতা সিং আকতার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে প্রতিমা বিসর্জন ছাড়া কোন নৌকা নদীতে নামতে না দেয়া, কোন নৌকা সীমানা অতিক্রম না করাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সে জন্য ইছামতি নদীর মাঝ বরাবর ছিল বিজিবি ও বিএসএফের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও কঠোর নজরদারি। ভারতের টাকি আর বাংলাদেশের দেবহাটার মাঝ বরাবর ইছামতি নদীর ৫ থেকে ৬ কি. মি. এলাকায় সীমান্ত। সূত্র মতে, উপজেলার টাউনশ্রীপুর সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় দুর্গা পূজার বিজয়া দশমীর দিনে দুই দেশের মানুষের মিলনমেলা বসে আসছে দীর্ঘকাল ধরে। এসময় অবাধে এক দেশের মানুষ অন্য দেশে যেতে পারতো। আর এই সুযোগে কতিপয় সুযোগ সন্ধানী দুষ্কৃতকারী চোরাচালান, হুন্ডি ব্যবসা, জাল টাকার ব্যবসা, মানুষ পাচার সহ নানারকম অপরাধ কর্মকান্ড ঘটাতো। এছাড়া গত ৫-৬ বছর আগে এক মর্মান্তিক নৌকা দুর্ঘটনায় ভারতের কলকাতার যাদবপুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজির জুনিয়র রিসার্স ফেলো সুজয় দাশ (২৮) মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় সে সময় ভারতের মিডিয়ায় মিলন মেলা সম্পর্কে অনেক নেতিবাচক কথা তুলে ধরা হয়। সেজন্য সব দিক বিশ্লেষন করে গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের পক্ষ থেকে সকল ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অপরাধ নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
ইছামতিতে মিলনমেলা ছাড়াই কঠোর নিরাপত্তায় প্রতিমা বিসর্জন
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/