Site icon suprovatsatkhira.com

আ.লীগ নেতার নাম ভাঙিয়ে দেবহাটার সাপমারা খালপাড়ে অবৈধ স্থাপনার অভিযোগ

দেবহাটা প্রতিনিধি : দেবহাটায় সরকারি ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নব্য খনন করা পারুলিয়া সাপমারা খালের দু’ধারে জেলা আওয়ামী লীগ নেতার নাম ভাঙিয়ে চলছে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক। তবে এ বিষয়ে কিছুই জানেন না জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা। সম্প্রতি খালের দু’পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের চিরুনি অভিযান চালিয়ে খালটির পুন:খনন কার্যক্রম শেষ হয়েছে। তবে কয়েক মাস যেতে না যেতে আবারও সুকৌশলে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সাংসদ ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মুনসুর আহমেদের নাম ভাঙিয়ে প্রকাশ্যে উচ্ছেদকৃত জায়গায় একাধিক অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলছেন স্থানীয় সুবিধাভোগীরা। স্থানীয়রা জানায়, মাত্র কয়েক মাস আগেই সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ব্যাপক ঢাকঢোল পিটিয়ে পারুলিয়া-সখিপুরের সাপমারা খালের দু’পাশের এসকল অবৈধ স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভেঙে দেয়া সেসব কংক্রিটের অবৈধ স্থাপনা আবারও পুন: নির্মাণে বর্তমানে মেতে উঠেছে দখলদাররা। এসব দখলদারদের অধিকাংশরাই অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের জন্য সুকৌশলে ব্যবহার করছেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদের নামকে। স্থাপনাকারীদের কেউ বলছেন, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির পারুলিয়াতে বসার জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা প্রয়োজন, সেজন্য খালপাড়ের জমিতে অফিস বানাচ্ছি। আবার কেউবা পুরো দায়ভার জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির ওপর চাপিয়ে দিয়ে বলছেন, অবৈধ স্থাপনা আমি নই স্বয়ং মুনসুর আহমেদ সাহেব নির্মাণ করছেন, আমরা শুধু নির্মাণ কাজ দেখাশোনা করছি মাত্র।
তবে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে কিছুই জানেন না উল্লেখ করে তার নাম ভাঙিয়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ। সম্প্রতি দেবহাটার সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরীনের বদলী এবং নতুন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমা আক্তারের যোগদানের মধ্যবর্তী সময়কে সুযোগ বুঝে কাজে লাগিয়ে রাতারাতি উচ্ছেদকৃত জমিতে পুনরায় কংক্রিটের এসব অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলার মহোৎসবে মেতে উঠেছেন তারা।
এতে করে একদিকে আবারও সাপমারা খালের নাব্যতা হারানোর শঙ্কা এবং অন্যদিকে হুড়মুড়িয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির নাম ভাঙিয়ে রাতারাতি অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলার ঘটনায় সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে সাপমারা খালে দু’পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদকৃত জায়গায় গিয়ে দেখা গেছে বেজ ঢালাই দিয়ে রড-কংক্রিটের বেশ কয়েকটি অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে পুরো-দমে। যার মধ্যে সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ মহা-সড়কের পারুলিয়া পারুলিয়া ব্রিজের দক্ষিণে সখিপুর অংশে উচ্ছেদকৃত জমিতে পুনরায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কাজ করছেন সখিপুরের সাবেক চেয়ারম্যান ছালামতুল্যা গাজীর ছেলে আব্দুল আজিজ। পরে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে আব্দুল আজিজ সাংবাদিকদের বলেন, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুনসুর আহমেদের পারুলিয়াতে বসার জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা প্রয়োজন, সেজন্য খালপাড়ের জমিতে অফিস বানাচ্ছি।
পরবর্তীতে পারুলিয়া বাজারের মধ্যবর্তী ব্রিজের উত্তর পাশে মায়াজাল শপিং সেন্টারের পাশে দেখা যায় প্রায় ডজন খানেক শ্রমিক দিয়ে পুরো-দমে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় ডা. আব্দুল ওহাবের ছেলে সুচতুর আয়ুব আলী। তার অপর পাশেও উচ্ছেদকৃত বেশকিছু জমি দখল করে কংক্রিট সরঞ্জাম নিয়ে পুনরায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের আটঘাট বাঁধছেন খেজুরবাড়িয়ার আকবর হোসেনসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। এ সময় কংক্রিটের অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারী সুচতুর আয়ুব হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনিও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির দিকে আঙ্গুল তুলে বলেন, অবৈধ স্থাপনা আমি নই স্বয়ং মুনসুর আহমেদ সাহেব নির্মাণ করছেন, আমরা শুধু নির্মাণ কাজ দেখাশোনা করছি মাত্র।
এতে করে একের পর এক জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির নাম ভাঙিয়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের রীতিমতো হিড়িক পড়ায় স্থানীয়দের মনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, চলতি বছরের শুরুর দিকে দেবহাটার সাপমারা খাল দখলমুক্ত করতে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কয়েক দফায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেসব অভিযানে ছোট বড় বহু অবৈধ স্থাপনা এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে ভেঙে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া এলাকার জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধান এবং পুনরায় সাপমারা খালটির নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে দেবহাটার ভাতশালা এলাকার ইছামতি নদীর সংযোগস্থল থেকে শুরু করে আশাশুনি উপজেলার কামালকাটি পর্যন্ত খালটির ১৯ কিলোমিটার বিস্তীর্ণ এলাকা নদী খনন পর্যায়ে পুনঃ খননের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে দুটি প্যাকেজে ১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। খাল খনন কাজ শেষ হওয়ার পর পরই আবারও এসব সুচতুর দখলদারদের কবলে পড়ে বিলীন হতে বসেছে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদকৃত খালের দু’পাড়ের সরকারি জমি।
তাই সাপমারা খালকে বাঁচিয়ে রাখতে রাতারাতি নির্মিত ও নির্মাণাধীন এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে সর্বস্তরের মানুষ।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version