Site icon suprovatsatkhira.com

শ্যামনগরে সাবেক মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিনিধি : শ্যামনগরের আবাদ চন্ডীপুর দারুস সুন্নাত আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক সুপার ও বর্তমান শ্যামনগর কেন্দ্রীয় দারুল উলুম ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল এএএম ওজায়েরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি সকল দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত ও কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনার বিচারের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী।
সরেজমিন আবাদ চন্ডিপুর এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে আলাপকালে জানা গেছে, ১৯৮১-৮২ সালে ফাজিল (ডিগ্রি) এর ছাত্র থাকা অবস্থায় আবাদ চন্ডিপুর দারুস সুন্নাত আলিয়া মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এএএম ওজায়েরুল ইসলাম। সরকারি বিধি বিধান লঙ্ঘন করে নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে পড়ালেখার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানে ভুয়া উপস্থিতি দেখিয়ে অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে বেতন উত্তোলন করতে থাকেন। দুর্নীতির মাধ্যমে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যাত্রা শুরু হওয়া সেই এএএম ওজায়েরুল ইসলাম পরবর্তীতে ওই মাদ্রাসার সুপার পদটি কৌশলে দখল করেন। এরই মাঝে তিনি জড়িয়ে পড়েন গৃহ-পরিচারিকা হত্যা মামলায়। কিছুদিন কারাবাসের পর বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় ও কৌশল প্রয়োগ করে রেহাই পেয়েছেন সেই মামলা থেকে। অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও ছল-চাতুরীতে তথাকথিত সাফল্য দেখানো এএএম ওজায়েরুল ইসলাম এখন শ্যামনগর কেন্দ্রীয় দারুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল। একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতি করে যে সফলতা অর্জন করা যায় তা সকলকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন তিনি। এএএম ওজায়েরুল ইসলাম এলাকার ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সাধারণ মানুষের কাছে রীতিমতো দুর্নীতির আইকনে পরিণত হয়েছেন।
এলাকাবাসী জানান, পৈতৃক সম্পত্তি ২/৩ বিঘার বেশি না জুটলেও তিনি এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। তার দুই স্ত্রী বসবাস করেন আবাদ চন্ডিপুর ও শ্যামনগরের হায়বাতপুর এলাকায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দু’টি আলীসান বাড়িতে। তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী ভগ্নীপতি মিজানুর রহমান মোল্যাকে সুকৌশলে মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন সভাপতি হিসেবে রেখে বাঁধাহীন ভাবে সরকারি বেসরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও নিয়োগ বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। অথচ সেই আবাদ চন্ডিপুর দারুস সুন্নাত আলিয়া মাদ্রাসার মাত্র দুটি টিনশেড ভবনের করুণ দশা দেখলে যে কারোরই চোখে জল চলে আসবে। প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষা কার্যক্রম কোনরকমে চলছে একটি আশ্রয় কেন্দ্রে। প্রতিষ্ঠানটির হাল-হকিকত দেখলে মনে হয় না সেটি ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের নামে ২৬ বিঘা জমি রয়েছে। এত জমি থাকা সত্তে¡ও শুধুমাত্র ওজায়েরুল ইসলামের সীমাহীন দুর্নীতি ও লুট-পাটের কারণে সীমানা প্রাচীর ও প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষ তৈরি করা সম্ভব হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি যারা গড়ে তুলেছিলেন সেই সব ব্যক্তিবর্গ কিংবা দাতা ও প্রতিষ্ঠানের একান্ত শুভাকাক্সক্ষীদের ওজায়েরুল ইসলাম কৌশলে দুরে সরিয়ে দিয়েছেন নিজ স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে। মাদ্রাসার দাতা সদস্য খাগড়াঘাট গ্রামের হাজী আব্দুর রশিদ গাইনের ছেলে মাহমুদুর রহমান (৩২), আবাদ চন্ডিপুর গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে প্রতিষ্ঠানের দাতা সদস্য আশরাফুজ্জামান (৬৪), মৃত মোখছেদুর রহমানের ছেলে মাও. মোখলেছুর রহমান (৫৪), মৃত আমানুল্যাহর ছেলে ইকবাল হোসেন মোল্যা (৬৪) সহ বেশ কয়েকজন অভিভাবক ও সচেতন এলাকাবাসী মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) তাদের এলাকার প্রাচীন প্রতিষ্ঠানটি বাঁচাতে মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এক মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেন। মানববন্ধন কর্মসূচির চলাকালে তারা গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, ধুরন্ধর ওয়াজেরুল ইসলাম আবাদ চন্ডিপুর দারুস সুন্নাত দাখিল মাদ্রাসায় সুপার হওয়ার পর তারই শিক্ষাগুরু মাও. মুজিবর রহমান, মাস্টার মেহের উল্যাহ, ক্বারী দীন মোহাম্মদ, ক্বারী হাফিজুর রহমান এর অবসর ভাতার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তাদের অগ্রিম অবসর দেখিয়ে ওই পদে নিয়োগ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। মাদ্রাসা সংলগ্ন পুকুর ও মাদ্রাসার জমি লিজ/বন্ধক রেখে অর্জিত টাকা মাদ্রাসার কাজে ব্যয় না করে আত্মসাৎ করেছেন। এমনকি ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে মাদ্রাসার এফডিআর’র সংরক্ষিত তহবিলের বিপরীতে নিজের প্রয়োজনে ঋণ উত্তোলন করে নিয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি ভাই, ভাগ্নেসহ অনেক অযোগ্য নিকট আত্মীয়কে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিয়েছেন। আবার নিয়োগ দেয়ার আশ্বাসে অনেকের নিকট থেকে টাকা নিয়েছেন। এমনকি শ্যামনগর কেন্দ্রীয় দারুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার যোগদানের পূর্বেই সুপার পদে নিয়োগ দেয়ার আশ্বাস প্রদান করে মাদ্রাসায় কর্মরত শিক্ষক মাও. মুজিবর রহমানের নিকট থেকে ৭ লক্ষ টাকা গ্রহণ করেছেন। নিজে ০১/১০/২০১৮ তারিখে শ্যামনগর কেন্দ্রীয় দারুল উলুম ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার যোগদানের পূর্বে নিজের ভাগ্নে ও মাদ্রাসার এবতেদায়ী শাখার শিক্ষক শরিফুল ইসলামকে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ভারপ্রাপ্ত সুপার পদে দায়িত্ব দিয়েছেন। সুষ্ঠু তদন্ত হলে এমন অসংখ্য অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসবে। এধরণের চিহ্নিত অসৎ দুর্নীতিবাজ মানুষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বহাল তবিয়তে টিকে থাকে কীভাবে এমন প্রশ্ন উত্থাপন করে এলাকাবাসী বলেন, শ্যামনগর বসবাসকারী মাও. ওজায়েরুল ইসলাম মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। তার হাত নাকি অনেক লম্বা। মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে তার অনেক কাছের লোক। তাই কেউই তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুললেও কোন কাজে আসবে না। এদেশে তার দুর্নীতির প্রতিকার করবে এমন কারও জন্মই হয়নি। দুর্নীতির মহারাজ হিসেবে পরিচিত ওজায়েরুল ইসলামের হুমকি ধামকিমূলক কথাবার্তা ও আস্ফালনের পরও গত ২৯/০৭/২০১৯ তারিখে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন দু’জন দাতা সদস্য। স্থানীয় সংসদ সদস্য, মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের মহাপরিচালক, জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে উক্ত অভিযোগের অনুলিপি প্রদান করা হয়েছে। এরপর প্রায় ১ বছর পেরিয়ে গেলেও কোন প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তেমনটা চোখে পড়েনি। তাই এলাকাবাসী অনেকটা হতাশ। এর মধ্যেই উল্টো শ্যামনগর কেন্দ্রীয় দারুল উলুম ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হিসেবে যোগদানকারী ওজায়েরুল ইসলাম আবাদ চন্ডিপুর দারুস সুন্নাত আলিয়া মাদ্রাসায় শূন্যপদে সুপার নিয়োগসহ আরও কয়েকটি পদে নিয়োগ বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে সিস্টেম (!) করে নিজেকে অবৈধ প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে দেখিয়ে কমিটি অনুমোদন করিয়ে নিয়েছেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৬২ সালে। মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন আবাদ চন্ডিপুর গ্রামের মাও. গোলাম মোস্তফা। অথচ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ৫ বছর পর ১০/১১/১৯৬৭ তারিখে জন্মগ্রহণকারী এএএম ওজায়েরুল ইসলাম নিজেকে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে দেখিয়ে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হয়েছেন। করোনাকালীন সময়ে গত ২৩/০৬/২০২০ তারিখে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা’র রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত বামাশিবো/প্রশা/৩৪০১৯১১৮৯৬০১/২২৯৩৫/নথি নং ১১২ নং স্মারকের এক পত্রে সভাপতি মনোনীত হয়েছেন। ওই কমিটিতে ভুয়া তথ্যে অবৈধ ভাবে মুজিবর রহমান সরদারকে দাতা সদস্য, জেলা প্রশাসক মনোনীত সদস্য হিসেবে শাহনাজ পারভীন ও আলমগীর হোসেনকে সদস্য করা হয়েছে। আর সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত সুপার শরিফুল ইসলাম। অভিযোগের ব্যাপারে জানার জন্য এএএম ওজায়েরুল ইসলামের সাথে মুঠো-ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, দুর্নীতির বিষয়টি সত্য নয়। আমার বিরুদ্ধে কিছু ব্যক্তি যেসব অভিযোগ করেছে তা কোনো তদন্তে প্রমাণ করতে পারবে বলে মনে হয় না।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version