নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় বিতর্কিত ও অবৈধ ফেসবুক বেইজড সংগঠন বেস্ট টিমের কথিত অ্যাডমিন মাদকাসক্ত মোস্তাফিজুর রহমান (বস পাগল) ও তার স্ত্রী সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট শাহনাজ পারভীন মিলির বিরুদ্ধে আইসিটি অ্যাক্টে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সদস্য মাহফুজা সুলতানা রুবি বাদী হয়ে বেস্ট টিমের অ্যাডমিন মাদকাসক্ত মোস্তাফিজুর রহমান ও তার স্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহনাজ পারভীন মিলিসহ আরো তিনজনকে আসামি করে সাতক্ষীরা সদর থানায় মামলাটি (নং-০১) দায়ের করেন। তাছাড়া ডোপ টেস্টে মোস্তাফিজুরের উচ্চ মাত্রায় মাদকাসক্তির প্রমাণ পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আরো একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে সাতক্ষীরা শহরের নিউ মার্কেট মোড় সংলগ্ন বাসা থেকে যৌথ অভিযান চালিয়ে মোস্তাফিজুর ও মিলিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত শুক্রবার দুপুরে বিতর্কিত ও অবৈধ ওই ফেসবুক বেইজড সংগঠন বেস্ট টিমের কথিত অ্যাডমিন মাদকাসক্ত মোস্তাফিজুর রহমান ও তার স্ত্রী অ্যাড. শাহনাজ পারভীন মিলির নেতৃত্বে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পরানদহা গ্রামে দিনমজুর ও ট্রলি চালক আলমগীরের বাড়িতে তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী ও স্বজনদের নিয়ে হামলা চালিয়ে ঘরের তালা ভেঙে নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার, জমির বন্দকী দলিলসহ মূল্যবান কাগজ ও জিনিসপত্র লুট-পাট করা হলে সোমবার ভুক্তভোগী আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে মোস্তাফিজুর রহমান, তার স্ত্রী অ্যাড. শাহনাজ পারভীন মিলি ও কুলিয়ার সাবেক ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেনসহ মোট ৫ জনের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা সদর থানায় মামলা (নং-৭৮) দায়ের করেন।
মামলা দায়ের পরবর্তী সোমবার সকালে হামলাকারী ও মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে পরানদহা বাজারে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী। একইসাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বেস্ট টিমের বিরুদ্ধে একের পর এক ভুক্তভোগী ও সাধারণ মানুষের পোস্টসহ বেস্ট টিমের কথিত অ্যাডমিন মাদকাসক্ত মোস্তাফিজুর রহমানের ইয়াবা সেবনের ভিডিও ভাইরাল হতে থাকলে রাতেই যৌথ অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সদর থানার এসআই হাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘হামলা ও লুট-পাটের ঘটনায় ভুক্তভোগী আলমগীর হোসেনের দায়েরকৃত মামলার আসামি হিসেবে বেস্ট টিমের অ্যাডমিন মোস্তাফিজুর রহমান ও তার স্ত্রী অ্যাড. শাহনাজ পারভীনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে’।
তদন্তকারী কর্মকর্তা আরো বলেন, বেস্ট টিমের অ্যাডমিন মোস্তাফিজুর রহমান ও তার স্ত্রী শাহনাজ পারভীন মিলিসহ আরো তিনজনকে আসামি করে মঙ্গলবার সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সদস্য মাহফুজা সুলতানা রুবি বাদী হয়ে আইসিটি অ্যাক্টে একটি মামলা (নং-০১) দায়ের করেছেন। তাছাড়া মোস্তাফিজুরের মাদকাসক্তির বিষয়ে নিশ্চিত হতে তার ডোপ টেস্ট করা হয়েছে। ওই টেস্টের রিপোর্টে মোস্তাফিজুর উচ্চ মাত্রায় মাদকাসক্ত প্রমাণিত হয়েছে। এ বিষয়েও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আরেকটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে এবং তাদের দুজনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তবে আদালতের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, আদালতে নেয়ার সময় মহা-প্রতারক রিজেন্ট সাহেদের মতো নিজেকে বাঁচাতে অসুস্থতার নাটক করেন শাহনাজ পারভীন মিলি। এ সময় তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হলে তিনি সুস্থ আছেন বলে জানান চিকিৎসকরা। এক পর্যায়ে তাদের দুজনকে আদালতে নেয় পুলিশ।
এদিকে বিতর্কিত বেস্ট টিম সাতক্ষীরার কথিত অ্যাডমিন মোস্তাফিজুর রহমান ও তার স্ত্রী অ্যাড. শাহনাজ পারভীন মিলিকে গ্রেপ্তার করায় জেলার সর্বস্তরের মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। এমনকি সদর উপজেলার শিবপুর, পরানদহা, দেবহাটার সখিপুরসহ সাতক্ষীরার কলারোয়া, তালা, দেবহাটা, কালিগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে তাদের গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে খুশিতে মিষ্টি বিতরণ করেন বেস্ট টিমের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ ভুক্তভোগী এলাকাবাসীরা। পাশাপাশি তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশের প্রশংসিত ভূমিকাকে সাধুবাদ ও সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জেলার সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষ।
অন্যদিকে কলারোয়ার জয়নগর, জলালাবাদ, কুশোডাঙ্গা, চন্দুড়িয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে বেষ্ট টিমের সদস্যরা বেআইনীভাবে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে চাঁদা আদায় করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কলারোয়া টিমের প্রধান ও তার সাঙ্গ পাঙ্গরা মানুষকে এ্যডভোকেট মিলি ও তার স্বমী মোস্তাফিজুরকে সাথে নিয়ে এলাকায় ফেসবুক লাইভে জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষের সাথে অসাদারন করে সম্মান হানিও করে। টিমের অনেক সদস্যরাই মাদকাসক্ত। ভ‚ক্তভোগীরা জেলা পুলিশের কাছে কলারোয়া টিমের সদস্যদেরও আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাতক্ষীরা জজকোর্টের এক আইনজীবি প্রশ্ন রেখে বলেন, বেষ্ট টিম কি মানবাধিকার সুরক্ষা এবং নিশ্চিত করার জন্য সামাজিক সংগঠন? ফেসবুক লাইভে তারা সাংবাদিকের মতো কথা বলেছে, কখনও তারা নাগরিক ও ফৌজদারি বিষয়ে মধ্যস্থতার মতো কাজ করে যা আইন দ্বারা অনুমোদিত নয়।
এটি একটি ভয়াবহ বিষয় যেখানে আইন ও অধিকার প্রয়োগের জন্য আইনানুগভাবে অনেক আইনী সংস্থা এবং স্থানীয় সরকার রয়েছে। তারা সকলের সামনে অবৈধভাবে এসব কাজ করেছে। বেষ্ট টিম ডিজিটাল নিরপত্তা আইন ভঙ্গ করে অনুমোতি ছাড়াই ফেসবুকে লাইভে নাগরিকের মানহানি ঘটিয়েছে। তিনি এসব বিষয় আইন আমলে এনে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মির্জা সালাউদ্দীন জানান, গ্রেপ্তার মোস্তাফিজের ডোপ টেস্ট রিপোর্টে উচ্চ মাত্রায় মাদকাসক্তির প্রমাণ মিলেছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে ডিজিটাল মাধ্যমে সাধারণ সম্মানহানির ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজীসহ নানা ধরনের অপকর্মে লিপ্ত ছিল। এসব বিষয়ে তদন্ত চলছে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুক বেইজড বেস্ট টিম সাতক্ষীরা নামের ভুঁইফোঁড় ও অবৈধ সংগঠন বানিয়ে পারিবারিক কলহ, নারী নির্যাতন, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ, জমিজমা সংক্রান্ত গোলযোগ মীমাংসার নামে মানুষকে জিম্মি করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পাশাপাশি সাতক্ষীরা জেলাব্যাপী দাপিয়ে বেড়িয়ে সাধারণ মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল মাদকাসক্ত মোস্তাফিজুর রহমান ও তার স্ত্রী শাহনেওয়াজ পারভীন মিলি। এছাড়া সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ফেসবুক লাইভে সালিশ বিচারের নামে প্রতিনিয়ত মানুষের সম্মানহানি ও আইন হাতে তুলে নেয়ার বহু অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।