Site icon suprovatsatkhira.com

দূর্গাপূজা আসন্ন তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার প্রতিমা শিল্পীরা

রাকিবুল ইসলাম : আর কিছুদিন পর শুরু হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। দুর্গা পূজাকে ঘিরে মৃৎ শিল্পীদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। চলমান প্রতিমা তৈরির কাজ জানান দিচ্ছে দেবী দুর্গার আগমনি বার্তা। দেবী দুর্গার প্রতি ভক্তি আর শ্রদ্ধায় প্রতিমা সহ বিভিন্ন ধরনের মূর্তি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাতক্ষীরা জেলার মৃৎ শিল্পীরা। সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে তাদের ব্যস্ততা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার মায়ের বাড়ি মন্দির, কাটিয়া মন্দির, বড়বাজার মন্দির, নারকেলতলা মন্দির ও জেলার বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে কাদা-মাটি, বাঁশ, খড়, সুতলি দিয়ে শৈল্পিক ছোঁয়ায় তিল-তিল করে গড়ে তোলা হচ্ছে দেবী দুর্গার প্রতিমা। এভাবেই দিন-রাত এক করে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা তৈরির কারিগররা। পূজামণ্ডপগুলোতে দেবী দুর্গা তার বাহন সিংহের প্রতিমাসহ তৈরি করা হচ্ছে যাকে বধ করার জন্য দেবীর আগমন, সেই মহিষাসুরের প্রতিমা। এছাড়াও তৈরি করা হচ্ছে দেবী লক্ষী, সরস্বতী, দেবতা কার্তিক, গণেশ, পেঁচা, হাঁস, ইঁদুর আর ময়ূর।

তবে মৃৎশিল্পীরা জানান, বৃষ্টি এবং মেঘলা আবহাওয়ার জন্য প্রতিমা শুকাতে না পেরে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তারা। তারা বলেন, গেল কয়েকদিন টানা বৃষ্টি। এরপর মেঘলা আবহাওয়া। আবহাওয়ার উন্নতি না হলে আমাদের জন্য অনেক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। প্রতিমা শিল্পী কুমার পাল বলেন, ‘শ্রাবণ নামের জগন্নাথ দেবের উৎসবের দিন থেকেই প্রতিমা তৈরিতে হাত দেন কারিগররা। মনসা পূজার পর মূল প্রতিমায় মাটির প্রলেপের কাজ শুরু করেন। কাদামাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির প্রাথমিক কাজ এখন শেষের দিকে। এরপর রং তুলির আঁচড়ে প্রতিমা পাবে দৃষ্টিনন্দন রূপ। ধরণির শক্ত মাটি নরম করে দেবী দুর্গার সাথে গড়ে তুলবেন কার্তিক, গণেশ, লক্ষী আর সরস্বতীর মূর্তি। বছরের এই সময়টায় কাজের চাপ বেশি। তাই বসে নেই ঘরের গৃহিণীরাও। মাটি দিয়ে সুনিপুণ হাতে তৈরি করছেন কারুকাজময় অলংকার। আর সেই অলংকার প্রতিমার শরীরে জড়িয়ে দিয়ে সাজিয়ে তুলবেন অনন্যা রূপে’।
দেবহাটা এলাকার প্রতিমা কারিগর (মৃৎ শিল্পী) নিমাই চন্দ্র দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে প্রতিমা তৈরি করছেন। তিনি জানান, নদীর কাঁদা মাটিই প্রতিমা তৈরির মূল উপকরণ। তারপর বাঁশ, সুতা, কাঠ, খড়, রং, কাপড় ও মুকুটও কাজে লাগানো হয়। মাটি দিয়ে প্রতিমা বানানোর পর তা রোদে শুকানো হয়। প্রতিমা বানানোর খরচের বিষয়ে তিনি জানান, ‘৪ হাতের একটি প্রতিমা বানাতে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। এর বাইরে আবার লাখ টাকার ওপরেও খরচ ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে প্রতিমা তৈরির নানা ধরনের উপকরণ ও শ্রমের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় এর খরচও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে’। তিনি আরও জানান, ‘প্রতিমা সর্বনিম্ন ৪ হাত ও সর্বোচ্চ চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করা যায়’।

শ্রীপুরের প্রতিমা শিল্পী নিসিকান্ত পাল জানান, ‘অনেক প্রতিমা তৈরির কারিগর চুক্তি অনুযায়ী মন্ডপে মন্ডপে গিয়ে কাজ করেন। আমরা ৪ জনে মিলে প্রতিমা তৈরি করছি। প্রতিবছরের এই সময়ে দুর্গা প্রতিমাসহ অন্যান্য প্রতিমার অর্ডার একটু বেশি থাকে। এ বছর আমি পাঁচটি দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছি। প্রতিমা তৈরিতে ২০-৩০ হাজার টাকা শুরু করে এক লাখ টাকা পর্যন্ত মজুরি নিয়ে থাকি’।
কলারোয়ার কয়লা পূজা মন্ডপের মৃৎ শিল্পী কার্তিক পাল বলেন, ‘এবার আমরা নৌকা, রথ, ঘোড়া, বানর, ইঁদুর, সিংহ, সাফ ও পেঁচা প্রতিমা তৈরি করছি। প্রতিমা তৈরি করতে মাটি থেকে শুরু করে সাজসজ্জা যা লাগে সব কিছু পূজা কমিটি বহন করে। আমরা শুধু মজুরি হিসাবে কাজ করি।
শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে প্রতিমা কারিগরদের ব্যস্ততা চোখে পড়লেও পাড়া-মহল্লায় বা হাটে বাজারে পূজার আমেজ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তাছাড়া এ বছর মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করে কিছুটা সীমাবদ্ধতায় শারদীয় দুর্গা উৎসব পালন করতে হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সাতক্ষীরা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার শীল জানান, ‘এবারের পূজায় স্বাস্থ্যবিধির ওপরে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এজন্য পূজার ব্যবস্থাপনায় কিছু পরিবর্তন হতে পারে। সরকারের ও পূজা কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী এবারের পূজা সম্পূর্ণ করা হবে। তবে জেলায় কতগুলো পূজা মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে তা ২/১ দিনের ভিতর জানান যাবে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version