ডেস্ক রিপোর্ট : সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে অসুস্থ শিশু কন্যাকে নিয়ে প্রায় আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করেও চিকিৎসার অভাবে জান্নাত (৫) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহত শিশুর পিতা শহরের মুজিতপুর এলাকার বাসিন্দা মো. জাকির হোসেন সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন।
তিনি জানান, ‘হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ডাক্তারদের অবহেলার কারণে আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে’। এ বিষয়ে তিনি সাতক্ষীরা সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ করবেন বলেও সাংবাদিকদের জানান। নিহত শিশুর পিতা জাকির হোসেন আরও জানান, ‘গত শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) আমার বড় মেয়ে জান্নাত জুবলি স্কুলের সামনের একটা দোকান থেকে নিজেই একটা ডেইরি মিল্ক চকলেট কিনে খাচ্ছিল। এ সময় আমার এক বোন জান্নাতকে বলে তোমার দাদি চলে যাচ্ছে। তখন আমার মেয়ে ছুটে আমার মায়ের কাছে যায়। জান্নাত দাঁড়িয়ে আমার মায়ের সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ মাটিতে পড়ে যায়। আমার মা জান্নাতকে কোলে তুলে দেখে তার মুখ খুলছে না। তারপর পার্শ্ববর্তী লোকজন এসে আমার মেয়ের মাথায় পানি দেয়। পরে আমার মেয়কে আমার মা ও আমার স্ত্রী এবাদুল্লাহ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। এবাদুল্লা ডাক্তারের পরামর্শে আমার মা ও স্ত্রী জান্নাতকে একটি ইজিবাইকে করে সদর হাসপাতালে রওয়ানা হয়। পথিমধ্যে আবার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় এবং একবার বমি করে’।
তিনি জানান, ‘এরপর আমার স্ত্রী আমাকে ফোন করলে আমি সোজা সদর হাসপাতালে চলে যাই। তখন হাসপাতালের জরুরী বিভাগে একটা বেডে আমার মেয়েকে শোয়ানো অবস্থায় দেখি। জরুরী বিভাগের কয়েকজন তখন কর্কট কণ্ঠে আমার মেয়েকে বেড থেকে সরিয়ে নিতে বলে। আমি তাদের কথা শুনে আমার মেয়েকে কোলে তুলে নেই। তখনও আমার মেয়ের শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল কিন্তু কেউ আমার মেয়েকে চিকিৎসা দেয়নি। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে একটা চেয়ারে বসে তাদের কাছে অনুরোধ করতে থাকলে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরে একজন এসে আমার মেয়কে দেখে বলে তিন তলায় নিয়ে যান অক্সিজেন দিতে হবে। তখন আমি মেয়েকে নিয়ে তিন তলায় অক্সিজেন দেওয়ার জন্য যাই। সেখানেও কেউ চিকিৎসা বা অক্সিজেন দিতে এগিয়ে আসেনি।
প্রায় ২০ মিনিট পরে অক্সিজেন দেয় পরে একজন ডাক্তার এসে বলে ইসিজি করতে হবে। ইসিজি করার পর সেই ডাক্তার বলে আপনার মেয়ে মারা গেছে’। তিনি আক্ষেপ করে জানান, এমন একটা ঘটনায় হাসপাতালের ডাক্তারদের অবহেলায় আমার মেয়েটা মারা গেছে। অথচ ডাক্তারদের অপকর্ম ঢাকতে গলায় চকলেট আটকে আমার মেয়ে মারা গেছে বলে প্রচার দেয়’। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ওইসব ডাক্তার ও এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান শিশু কন্যা হারানো ওই পিতা।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন সাফায়েত জানান, ‘আমি এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি। যেহেতু কেউ অভিযোগ করেনি এবং বিষয়টা আমি জানতাম না। অফিসে ক্যামেরা লাগানো আছে ফুটেজ দেখে সত্য মিথ্যা জানা যাবে। আমি কালকে ফুটেজ চেক করে ঘটনার সত্যতা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব’।