মাজহারুল ইসলাম : মাদকের জিরো টলারেন্স বাস্তবায়ন ও যুব সমাজকে মাদকের গ্রাস থেকে রক্ষা করতে অভিনব কায়দায় ডোপ টেস্টের মাধ্যমে মাদকসেবী ধরতে মাঠে নেমেছে জেলা পুলিশ। দুটি অভিযানে ৩১ জন মাদক সেবী পাকড়াও করা হলেও বয়সে এরা সবাই যুবক। এদিকে আসন্ন দূর্গা পূজাকে সামনে রেখে মাদকের মজুদ গড়তে তৎপর সীমান্তের মাদক ব্যবসায়ীরাও। সীমান্ত রক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে হাত ঘুরে রাতের আধারে আসছে মাদক। অন্যদিকে জেলা পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানকে জেলাবাসী সাধুবাদ জানালেও সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠছে সীমান্ত দিয়ে কীভাবে আসছে মাদক?
সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার) এর দিকনির্দেশনায় সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মির্জা সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে জেলা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা শাখার সহযোগিতায় মাদকসেবীদের ধরতে এ ডোপ টেস্ট অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। গত বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) কলারোয়া থানার সীমান্তবর্তী এলাকায় কলারোয়া থানা পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা শাখা এবং পুলিশ লাইন্স এর চৌকস সদস্যেদের সমন্বয়ে মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়। এদিন সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন থানা, পার্শ্ববর্তী জেলা যশোর ও খুলনার মাদক সেবীরা কলারোয়া থানার সীমান্তবর্তী এলাকা কেড়াগাছী, সোনাবাড়িয়া, চন্দনপুর সহ জালালাবাদ ও ঝিকড়া এলাকায় এসে মাদক সেবন করছে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় বাহ্যিক লক্ষণ বিবেচনায় এবং উপস্থিত ডাক্তারের পরামর্শে মোট ২৬ জনকে মাদকসেবী সন্দেহে ডোপ টেস্ট এর জন্য সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। ডোপ টেস্ট শেষে ১৫ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এবং ১১ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। মাদকাসক্ত প্রমাণিত ১৫ জনের বিরুদ্ধে কলারোয়া থানায় ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮’ এ মামলা হয় এবং তাদের নিকট যে সমস্ত মাদক ব্যবসায়ী মাদক বিক্রি করেছিল, তাদেরকে শনাক্তের কাজ চলমান আছে।
এর আগে ১৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে সাতক্ষীরা সদরের ভোমরার সীমান্তবর্তী এলাকায় মোট ৩৮ জনকে মাদকসেবী সন্দেহে ডোপ টেস্ট এর জন্য সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। ডোপ টেস্ট শেষে ১৬ জনের রিপোর্ট পজিটিভ আসে এবং ২২ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। এ সংক্রান্তে ডোপ টেস্ট পজিটিভ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮’ তে মামলা হয়।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মির্জা সালাহউদ্দিন জানান, ‘প্রথম দিনের অভিযানে ধৃত মাদকসেবীদের দেয়া তথ্য মতে যে সকল মাদক ব্যবসায়ীর থেকে তারা মাদক সংগ্রহ করে সেবন করেছে তাদের মধ্যে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীকে ইতিমধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় নেয়ার প্রক্রিয়া চলমান আছে’। তিনি আরও জানান, ‘মাদক নির্মূলে অভিযান অব্যাহত থাকবে’।
তবে পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযানকে জেলার সচেতন মহল সাধুবাদ জানালেও দেখা দিয়েছে নানাবিধ প্রশ্ন। জেলার সচেতন মহল বলছেন, এসব মাদকের উৎস কোথায়? কোথা থেকে এবং কীভাবে আমদানি হচ্ছে এসব মাদক?
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা বিজিবি ৩৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. গোলাম মহিউদ্দিন খন্দকার জানান, ‘সীমান্ত দিয়ে মাদক প্রবেশের কোন সুযোগ নেই। তাছাড়া ডোপ টেস্টের মাধ্যমে যে সকল মাদকসেবীদের শনাক্ত করা হয়েছে সেক্ষেত্রে আগে জানতে হবে তারা কোন ধরনের মাদক সেবন করেছে। কিছু কিছু মাদক আছে যা মাদক ব্যবসায়ীরা দেশেই উৎপাদন করতে পারে’। তবে ভারতীয় ফেন্সিডিল ও ইয়াবা জেলায় কীভাবে আসছে সে বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য তিনি দেননি।