গাজী আল ইমরান, নিজস্ব প্রতিনিধি : শ্যামনগর উপক‚ল জুড়ে নদীতে প্রতিনিয়ত মাছ ধরা হচ্ছে নেট জাল দিয়ে। দেখা গেছে উপজেলার খোলপেটুয়া নদীতে নেট জাল ব্যবহার করে মাছ স্বীকারে ব্যস্ত মৎস্য শিকারিরা। একেবারেই কর্তৃপক্ষের সামনে এমন ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষ রয়েছে নীরব দর্শকের ভূমিকায়। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ীরা নদীতে অবাধে অবৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরায় বিভিন্ন মৎস্য বৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে, দেখা দিচ্ছে দেশীয় মাছের সংকট। এমনই অভিযোগ করছেন শ্যামনগর উপজেলার উপক‚লীয় এলাকার সচেতন মহল। এলাকাবাসী জানান, ‘খোলপেটুয়া নদীর বুক জুড়ে নেট জাল ব্যবহার করে মাছ ধরা হচ্ছে। এই জালে ক্ষুদ্রাকৃতির মাছও ধরা পড়ে। ফলে পোনা মাছগুলো বড় হতে পারে না। সারাদিন জাল পাতা থাকে। ভোররাতে জাল থেকে মাছ তুলে বাজারে বিক্রি করা হয়। এছাড়া মাছের রেণু ধরতে সারাদিন রাত নেট জাল ব্যবহার করা হয় নদীর তীরে। নেট জালে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের রেণু ধরা পড়লেও শুধুমাত্র বাগদার বা গলদার রেণু বাছাই করে বাকি প্রজাতি গুলো মাটিতে ফেলে দিয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে। এতে একাধিক প্রজাতির মাছের রেণু ধ্বংস হচ্ছে প্রতিনিয়ত’। তারা আরও জানান, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন ধরনের মাছের বৈচিত্র্য হারাচ্ছে উপক‚লবাসী। তাছাড়া এভাবে নেট দিয়ে মাছ বৈচিত্র্য ধ্বংস হতে থাকলে বৈচিত্র্য শূন্য হতে পারে উপক‚লের নদী গুলো’।
স্থানীয় প্রবীণ জয়দেব সরকার বলেন, ‘নেট জাল দিয়ে ধরা রেণুর সাথে দেশীয় মাছের পোনা ও ছোট কাঁকড়াও উঠে আসে। নদী থেকে নেট ডাঙায় তুলে আনার পর রেণুগুলো বাছাই করে নেওয়া হয়। এ সময় জালে জড়িয়ে থাকা অন্যান্য সাধারণ মাছের বাচ্চা ও ছোট কাঁকড়া মরে যায়। এতে করে নদীতে দেশীয় মাছ কমে যাচ্ছে। কাঁকড়াও কমে যাচ্ছে দিন দিন। অপরিকল্পিত ভাবে নদীতে রেণু ধারায় কমে যাচ্ছে মাছের উৎপাদন’।
এ ব্যাপারে শ্যামনগর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তুষার মজুমদার জানান, ‘আমি সম্প্রতি এই উপজেলায় যোগদান করেছি। ইতিপূর্বে অবৈধ জালের বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযান চালিয়েছি। তবে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের সহযোগিতা প্রয়োজন’।
এ ব্যাপারে পশ্চিম সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম এ হাসান বলেন, ‘আমরা সব সময় নেট পাটার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। এরপরেও কিছু অসাধু ব্যক্তি নেট জাল দিয়ে মাছ ধরা অব্যাহত রেখেছে’।
নদীতে ছোট ফাঁসের জালের অবাধ ব্যবহারে মাছের স্বাভাবিক প্রজনন, বংশবিস্তার ও বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। এর প্রভাবে নদ-নদী ও সাগরে এরই মধ্যে মাছের প্রাচুর্য কমে গেছে। অচিরেই এসব জাল বন্ধ না হলে দেশের মৎস্য ভান্ডারে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে এমনটা মনে করেন উপক‚লের মানুষেরা।
উপকূল জুড়ে নদীতে নেট জাল: ঝুঁকির মুখে মৎস্য বৈচিত্র্য
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/