Site icon suprovatsatkhira.com

সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির

রাকিবুল ইসলাম : সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে ৮ মাসেরও বেশি সময় আগে। এরপর থেকে যোগ্য নেতৃত্বের অভাব ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি বলে বলছেন নেতারা। ফলে সংগঠনটির স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। গত ৮ মাসে জেলা ছাত্রলীগের বড় কোন কর্মকান্ড লক্ষ্য করা যায়নি। তবে করোনা মহামারি ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানে কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা জেলার কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে জেলার সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে বেশ কিছু কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১৭ সালের ২৯ নভেম্বর। সম্মেলনের পর সভাপতি পদে রেজাউল ইসলাম রেজা ও সাধারণ সম্পাদক পদে সৈয়দ সাদেকুর রহমান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসিফ শাহাবাজ খানের নাম ঘোষণা করা হয়। এক বছর মেয়াদি কমিটি দুই বছর তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করেও পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি করতে ব্যর্থ হয়। এরপর ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর চাঁদাবাজিসহ সংগঠন বিরোধী কর্মকান্ডের অভিযোগে সাধারণ সম্পাদক সাদিকুর রহমান সাদিক কে বহিষ্কার ও মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। একই সাথে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে জন্য বায়োডাটা আহ্বান করা হয়। এর পর থেকে জেলা ছাত্রলীগর নেতৃত্ব শূন্য রয়েছে। তবে নতুন নেতার জন্য নির্ধারিত সময়ে ৬৪টি আবেদন জমা পড়েছে। ইতোমধ্যে আবেদনগুলো যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা।

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এহসান হাবিব অয়ন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না থাকার কারণে দলীয় কর্মকান্ড নেই। এতে দলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ বা অন্য সংগঠনের ব্যানারে কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের কেউ কেউ অংশ নিচ্ছেন। এ ছাড়া ছাত্রদল শিবির থেকে বিভিন্ন অনুপ্রবেশকারীও ছাত্রলীগের নামে ঢুকে পড়ছে। দ্রুত ত্যাগী ও যোগ্য চলতি বর্ষের ছাত্রদের সমন্বয়ে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে। বিগত সময়ের মত ছাত্র নয় এমন কেউ যেন নেতৃত্বে না আসতে পারে সে বিষয়টিও কেন্দ্রীয় নেতাদের খেয়াল রাখতে অনুরোধ করেন তিনি হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংগঠনের এক সাবেক নেতা বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা না থাকায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও দ্ব›দ্ব দেখা দিয়েছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের কেউ কেউ পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন। কয়েক মাস আগে সরকারি কলেজে প্রার্থী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আশিক ও উজ্জ্বল অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উজ্বলসহ আরও দুই কর্মী আহত হন। এ ছাড়া অন্যান্য প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যেও মাঝেমধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, কমিটি না থাকায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি হচ্ছে। ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের সমন্বয়ে সাংগঠনিক কমিটি গঠনের মাধ্যমে সংগঠন আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন।

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, কমিটি না থাকায় জেলা ছাত্রলীগ অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। দলীয় নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। কেউ কেউ সংগঠন বিরোধী কর্মকাÐে জড়িয়ে পড়ছেন। জেলা কমিটি না থাকার পরও অন্য ইউনিটের নেতারা কেউ কেউ নিজেদের জেলা ছাত্রলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে ব্যানার তৈরি করে বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। এতে ঐতিহ্যবাহী ও আদর্শিক এ সংগঠনটি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। যোগ্য নেতৃত্ব ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী নেতাদের নিয়ে জেলা ছাত্রলীগের একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন জরুরি।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক নাহিদ হাসান শাহীন চলমান বৈশ্বিক এই মহামারি শেষে স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরে আসায় দ্রুত সময়ের মধ্যে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগ সহ বিভিন্ন উপজেলায় কমিটি না থাকার পরও জেলা ছাত্রলীগ সহ বিভিন্ন উপজেলার পদ প্রার্থীরা (করোনা,আম্পান) পরিস্থিতিতে যেভাবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্দেশনা মোতাবেক মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে তা প্রশংসনীয়।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, একটি অভিযোগের মধ্য দিয়ে জেলা কমিটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। কাজেই যোগ্য ও সাংগঠনিক নেতৃত্ব যাচাই-বাছাইয়ের কারণে সাতক্ষীরা জেলা কমিটি গঠনে কিছুটা সময় লাগছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দ্রæত সময়ের মধ্যে আদর্শবান ও মেধাবী ছাত্রদের নিয়ে শক্তিশালী কমিটি উপহার দেওয়া হবে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version