নিজস্ব প্রতিনিধি : আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলায় নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় রিং বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে লোনা পানি। এতে ওই দুই উপজেলার কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আরও কিছু গ্রামের মানুষ শঙ্কায় রয়েছেন। জানা গেছে, আশাশুনি সদরের দয়ারঘাট গ্রামের রিং বাঁধের কমপক্ষে ৫ টি পয়েন্টে ভেঙে লোকালয়ে ফের পানি ঢুকেছে। বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) দুপুরে সাগরে নিন্মচাপের প্রভাবে টানা বর্ষণ, অমাবস্যা গোন ও পুবালি ঝড়ও বাতাসের ফলে খোলপেটুয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদের পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। এতে তিন মাস আগে আম্পানে ভেঙে যাওয়া সদরের দয়ারঘাট গ্রামের খোলপেটুয়া নদীর পানি আটকানোর জন্য নির্মিত রিং বাঁধটির বিভিন্ন স্থান ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দয়ারঘাট স্কুলের সামনে, দয়ারঘাট মাছের সেটে, আব্দুস সবুরের বাড়ির সামনে, স্বপন মুহুরির বাড়ির পিছনে ও কাই কাউচের বাড়ির সামনে দিয়ে ছাপিয়ে এবং ধস নেমে ভেতরে পানি ঢুকতে শুরু করে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বা উপজেলা প্রশাসনের কোন লোকজন না আসায় স্থানীয় লোকজন তড়িৎগতিতে বাঁধে এসে দয়ারঘাট স্কুলের সামনের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ দিয়ে প্রবল বেগে আসা পানি তিনটি স্তরে মানব বর্ম তৈরি করে আটকে রাখেন। এতে ভাঙনের পরিধি অপেক্ষাকৃত কম হয়ে যায়। ভাটা নামতে শুরু করলে ব্রাইট স্পোর্টিং ক্লাবের সদস্য, মেম্বর প্রার্থী আশীষ কুমার মÐল, শিক্ষক সুদেব বিশ্বাস, দেবাশীষ মÐল, সমাজসেবক পঞ্চানন বিশ্বাসসহ স্থানীয় লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধটি মেরামত শুরু করেন। খবর পেয়ে সদর ইউপি চেয়ারম্যান স ম সেলিম রেজা মিলন ঘটনাস্থলে এসে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করা লোকজনের খাওয়ার ব্যবস্থা করে বাঁধ মেরামতের জন্য শ্রমিক নিয়োগ করেন। ভাটা নামার পরে শ্রমিকরা কাজ শুরু করলেও পিচের রাস্তার উপর দিয়ে নির্মিত সরু মাটির রিং বাঁধটির প্রায় সব খানেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও গোলাম রাব্বি হাসান জানান- সাগরে নিন্মচাপের প্রভাবে টানা বর্ষণ, অমাবস্যা গোন ও পুবালি ঝড়ও বাতাসের ফলে সব এলাকার নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলা সদরের দয়ারঘাট গ্রামের রিং বাঁধ মেরামতের জন্য আমরা ২০০ জিও ব্যাগ ও ৫০০ পলিথিনের ব্যাগ দিয়েছি। স্থানীয় চেয়ারম্যান মিলনের নেতৃত্বে সেখানে কাজ চলছে। এছাড়া জোয়ারে প্রতাপনগরের রুইয়ারবিল, সুভদ্রাকাটি, নাকনাসহ আরও কিছু স্থানের ভাঙনের খবর পেয়েছি। প্রতাপনগরে যাতায়াতের রাস্তাটি ভেঙে সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হলে চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেনের মাধ্যমে বালির বস্তা ফেলে কোনরকমে লোকজন পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে আমাদের কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিবৃন্দ অবস্থান করছেন।
আশাশুনি সদরের ইউপি চেয়ারম্যান বলেন- রিং বাঁধটি মেরামতের জন্য শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছি। তবে মূল বাঁধটি ছোট হলেও এখনও পর্যন্ত বাঁধার কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় আমরা হতাশ হয়েছি। খবর পাচ্ছি সেনাবাহিনীর সদস্যরা এ বাঁধটি টেকসই করে নির্মাণ করবেন তবে সেটা কবে শুরু হবে তা এখনও জানতে পারিনি। এখন প্রতি গোণ মুখে রাত জেগে আমারে বাঁধ পাহারা দিতে হয়। আবার রিং বাঁধের বাইরে রয়েছে প্রায় ২৫ টি পরিবার। তাদের বসতবাড়িতে প্রতিদিনই জোয়ারভাটা চলছে। প্রতাপনগর ও শ্রীউলার মত তারাও মানবেতর জীবন যাপন করছেন। টেঁকসই মজবুত বাঁধটির কাজ অতিদ্রæত যাতে শুরু হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এদিকে শ্যামনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী, গাবুরা, মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় নাজুক বেড়ি-বাঁধের উপর দিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছে জোয়ারের পানি। ইতিমধ্যে গাবুরা লেবুবুনিয়া ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা এবং মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মধ্যে আছে গাবুরা চকবারা, হরিশখালি, মুন্সিগঞ্জের কদমতলা, চুনকুড়ি ও বুড়িগোয়ালিনীর চুনার ¯øুইজগেট সংলগ্ন চুনার জেলে কল্যাণ সমিতির পাশে ঈদগাহ ময়দানের সামনের, দাতিনাখালি, বুড়িগোয়ালিনী, কলবাড়ি। বুড়িগোয়ালিনীর চুনার ¯øুইজগেটের পাশে, চুনার আশ্রয়ণ প্রকল্প ও দাতিনাখালির আব্দুল আজিজের বাড়ির সামনে দিয়ে পানি লোকালয় প্রবেশ করছে। প্রাথমিকভাবে উপচে পড়া পানি ঠেকানো সম্ভব না হলে বড় ধরনের ভাঙনের সম্ভাবনা আছে। সাধারণ জনগণ ইতিমধ্যে বেড়ি-বাঁধ সংস্কার করার জন্য এগিয়ে এসেছে।
অমাবস্যার গোন থাকায় বেড়ি-বাঁধ ভাঙনের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। তাদের দাবি আম্পানে যেটি হয়েছে সেটির পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রæত ভাঙন কবলিত জায়গাগুলো মেরামত করার জন্য অনুরোধ করেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এস ও শাহনাজ পারভীনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন আমরা প্রতিটি ভাঙন কবলিত এলাকায় ইতিমধ্যে লোক পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি আপ্রাণ চেষ্টা করব যাতে সবগুলো টিকিয়ে রাখা যায়। সাধারণ মানুষের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।