Site icon suprovatsatkhira.com

মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কালিগঞ্জের ডা. হজরত আলী আর নেই

নিজস্ব প্রতিনিধি: সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. হজরত আলী (৯০)। স্ট্রোকসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) বিকেল পৌনে ৫ টার দিকে তিনি উত্তর কালিগঞ্জ শহীদ সামাদ স্মৃতি ময়দান সংলগ্ন নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তিনি ৩ ছেলে, ৪ মেয়ে, নাতী-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
মরহুমের পরিবার সূত্র জানান, বুধবার (৫ আগস্ট) সকাল ১০ টার দিকে শহীদ সামাদ স্মৃতি ময়দানে প্রথম জানাজা এবং বাদ জোহর গ্রামের বাড়ি মথুরেশপুর ইউনিয়নের হাড়দ্দহ গ্রামে দ্বিতীয় জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মরহুমের দাফন সম্পন্ন হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ছয়দফা ঘোষণা করার পর মাঠে নেমে পড়েন ডা. হজরত আলী। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচনের পূর্বে কিছু সময়ের জন্য বঙ্গবন্ধু কালিগঞ্জ আসেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাতের সুযোগ হয় ডা. হজরত আলীর। এসময় তিনি বঙ্গবন্ধুর সাহচর্যে মুগ্ধ হন। সাধারণ নির্বাচন ও পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃত্বের নানা কুটচাল ও সার্বিক পরিস্থিতির সম্পর্কে খবর রাখার চেষ্টা করতেন সর্বদা। একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ এর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ শুনে স্থানীয় অনেক যুবক মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করতে থাকেন। ডা. হজরত আলী তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করেন এবং ট্রেনিং এর জন্য নাম তালিকাভুক্ত করেন। বঙ্গবন্ধুর আহŸানে তিনি গঠন করেন সংগ্রাম পরিষদ। ১১ সদস্যবিশিষ্ট এই সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ছিলেন ডা. হজরত আলী। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মাষ্টার জেহের আলী। ডা. হজরত আলীর নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ নাম তালিকাভুক্ত করা সকলকে ভারতে ট্রেনিং ক্যাম্পে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীতে ২৭ মার্চ ডা. হজরত আলী নিজে সীমান্ত নদী ইছামতি পার হয়ে শুন্যেরবাগান শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থানরত ব্যক্তিদের চিকিৎসা সেবা প্রদান শুরু করেন। তবে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের কাছ থেকে কোন সম্মানিভাতা নিতেন না তিনি।
মুক্তিযুদ্ধ শেষে তিনি দেশে ফেরেন। অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের অনুরোধের সত্বেও মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেন নি তিনি।
১৯৭২ সালে তিনি কিছুদিনের জন্য কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি আবারও মানুষের চিকিৎসা প্রদান শুরু করেন। ২০০৭ সালে বসতবাড়ির পাশে পিতা শের আলীর নামে একটি ক্লিনিক স্থাপন করেন। ওই ক্লিনিকে চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। এর বাইরে সময় পেলে তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে অংশ নিতেন।

এদিকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে মানুষের অন্তরে ঠাঁই পাওয়া চিকিৎসক, সদালাপী, অন্যায়ের প্রতিবাদকারী প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ডা. হজরত আলীর মৃত্যুর খবর জানার পরপরই উপজেলা ব্যাপী শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ মরহুমের বাসভবনে আসছেন। তারা মরহুমের রূহের মাগফিরাত কামনা ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছেন।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version