নিজস্ব প্রতিনিধি : শ্রীউলার প্লাবিত পানি ধেয়ে আসছে আশাশুনি সদর ইউনিয়নে। ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে ৬ ও ৯ নং ওয়ার্ডের প্রায় ১২০০ পরিবার। দেয়াল চাপা পড়ে আহত হয়েছেন এক গৃহবধূ। প্রতি মুহ‚র্তে নতুন নতুন পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়ছে। আশে পাশে কোন সাইক্লোন শেল্টার না থাকায় ভিটাবাড়ির উঁচু স্থানই মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিস্তীর্ন এলাকা দিয়ে পানি আসতে থাকায় দুটি খালের গেটই পানি অপসারণের একমাত্র ভরসা।
খবর পেয়ে শনিবার (২২ আগস্ট) সকালে উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম বানভাসি মানুষদের পাশে গিয়ে তাদের খোঁজ খবর নিয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন। প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ভেঙে যায় শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালী গ্রামের খোলপেটুয়া নদীর বেড়ি-বাঁধ।
এতে শ্রীউলা ইউনিয়নের ২২ টি গ্রামই পানি বন্দী হয়ে পড়ে। এতদিন উক্ত পানি মহিষকুড় গ্রামের রাস্তা ছাপিয়ে আশাশুনি ইউনিয়নে ঢুকতে পারেনি। কিন্তু গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও নিন্মচাপের প্রভাবে নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেলে শুক্রবার (২১ আগস্ট) সকালের জোয়ারে শ্রীউলা ইউনিয়নের প্লাবনের পানি মহিষকুড় রাস্তা ছাপিয়ে আশাশুনি ইউনিয়নে ঢুকতে শুরু করে। দুপুরের সাথে সাথে কমলাপুর থেকে পুইজালা বাজারের ইটের সোলিং রাস্তার দক্ষিণ পাশে অবস্থিত আশাশুনি ইউনিয়নের খাসেরাবাদ, কমলাপুর ও ডাসেরআটি গ্রামের নিন্মঞ্চল প্লাবিত হয়ে যায়। ওই রাতেই কমলাপুর কার্লভাট, বিলনাটানা কার্লভাটসহ খাসেরাবাদ গ্রামের ৩টি কার্লভাট দিয়ে পানি রাস্তার উত্তর পাশে ঢুকে সলুয়ার খালে পড়তে থাকে। শনিবার দুপুরে সরজমিনে এলাকা ঘুরে দেখা গেছে- জোয়ারের পানি উপরোক্ত কার্লভাট ছাড়াও খাসেরাবাদ গ্রামের জনৈক জগতের মৎস্য ঘেরের সামনের ও পুইজালা বাজার সংলগ্ন ইটের সোলিং ছাপিয়ে প্রবল বেগে রাস্তার উত্তর পাশে আশাশুনি সদর অভিমুখে প্রবাহিত হচ্ছে। ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দিলীপ মÐল জানান- আমার ওয়ার্ডের ঠাকুরাবাদ, দক্ষিণ ও মধ্যম বলাবাড়িয়া, হাঁসখালী ও গাইয়াখালী গ্রাম (সন্ধ্যা পর্যন্ত) সম্পূর্ণ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। এতে ৬০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত এবং মৎস্য ঘের ডুবে লক্ষ লক্ষ টাকার বাগদা চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ ভেসে গেছে। ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম জানান- আমার ওয়ার্ডের কমলাপুর, ডাসেরআটী ও খাসেরাবাদ গ্রামের ৭০০ পরিবার এখন পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। রান্না করার জায়গাটুকু না থাকায় অধিকাংশ পরিবারের লোকজন প্রায় অনাহারে অর্ধাহারে রয়েছে। জগত মÐলের ঘেরের সামনের রাস্তাটি ভেঙে খালের সৃষ্টি হয়ে আশাশুনি সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে চলেছে।
সদর ইউপি চেয়ারম্যান স ম সেলিম রেজা মিলন জানান- খোলপেটুয়া নদী ভাঙনে প্লাবিত শ্রীউলার পানি শুক্রবার সকাল থেকে আশাশুনির মধ্যে ঢুকে পরপর দুটো জোয়ারে ৬ ও ৯ নং ওয়ার্ডের প্রায় ১৩০০ পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। প্রতি ঘণ্টায় নতুন নতুন ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়ে পড়ছে। এসব এলাকার প্রায় ৯০% মাটির ঘরবাড়ি। ইতোমধ্যে মাটির দেয়াল চাপা পড়ে খাসেরাবাদ গ্রামের মৃনাল সরকারের স্ত্রী গুরুতর আহত হলে তাকে সাতক্ষীরা সদরে নেওয়া হয়েছে। এসব এলাকায় কোন সাইক্লোন শেল্টার না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পানি বন্দী লোকজনকে মাটির ঘরেই বাধ্য হয়ে আশ্রয় নিতে হচ্ছে। পানি বন্দী এসব এলাকায় রান্না করার মত জায়গা না থাকা বা জ্বালানির অভাবে নারী, শিশু নিয়ে অধিকাংশ লোকজনকে অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে। এখনই মাটির ঘরবাড়ি পড়ে যাওয়ার খবর আসছে।
বিস্তীর্ণ এলাকা দিয়ে পানি আসতে থাকায় পানি প্রবাহের গতিরোধ করা যাচ্ছে না। আশাশুনি সদরটাকে রক্ষা করার জন্য মধ্যম বলাবাড়িয়া গ্রামের একটি কার্লভাট বন্ধ করে দেওয়ার কাজ চলছে। এছাড়া আদালতপুর গ্রামে একটি কেয়ার রাস্তা উঁচু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পানি অপসারণের জন্য মধ্যম বলাবাড়িয়া ৪ ব্যাÐের সুইচগেট ও সলুয়ারখালের গেটটি একমাত্র ভরসা। প্লাবিত এলাকায় অনতিবিলম্বে সুপেয় পানি ও শুকনো খাবারের প্রয়োজন। শুধুমাত্র পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ি বাঁধ গুলো যদি টেঁকসই মজবুত করে নির্মাণ করা হয় তবে এসব সমস্যার সৃষ্টি হবে না। তাই অনতিবিলম্বে বানভাসি মানুষের জরুরী খাদ্য ও বাসস্থান সহায়তা নিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন উপজেলাবাসী।