Site icon suprovatsatkhira.com

দেবহাটায় প্রভাবশালীর মিথ্যা মামলা ও হয়রানি থেকে রেহাই পেতে সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিনিধি : দেবহাটার কুলিয়া ইউনিয়নের ৬ পরিবারকে উচ্ছেদ পরবর্তী খালসহ সরকারি জমি দখলে নিতে প্রভাবশালী মুনছুর উদ্দীন কর্তৃক মিথ্যা মামলা দিয়ে অসহায় ও নিরীহ ব্যক্তিদের হয়রানির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগীরা। শনিবার (০৮ আগস্ট) বেলা ১১টায় দেবহাটা প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে মিথ্যা মামলা ও হয়রানির শিকার এসব পরিবারের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কুলিয়ার মৃত জসিমউদ্দীন সরদারের ছেলে আব্দুল করিম।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, তাদের এলাকা রামনগর গ্রামের বেতপোতা খালটি কুলিয়া লাবণ্যবতী খালের সাথে মিশে গেছে। বেতপোতা খালটি কুলিয়া ইউনিয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাল। যা বহু গ্রামের পানি নিষ্কাশনের একটি অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু এই খালের ৩২৫/৭৭-৭৮ নং কেসে ছোটশান্তা গ্রামের মৃত আজিম মোড়লের ছেলে মুনছুর উদ্দীন অবৈধভাবে বন্দবোস্ত নিয়ে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দেয়। রামনগর মৌজার ১নং খতিয়ানের ১২ দাগের জমি এস,এ রেকর্ডেই জমির শ্রেণি খাল হিসাবে লিপিবদ্ধ করে। খালটির পানি এলাকার মানুষের চাষ সহ বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার হয়। মূলত সরকারি খাল বন্দোবস্ত প্রাপ্তিতে অসহায় ও ভূমিহীন ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার থাকা সত্তে¡ও, কোটি টাকার সম্পদ বা শত-বিঘা জমির মালিকানার তথ্য গোপন করে ওই খালটি গোপনে নিজের নামে বন্দোবস্ত করিয়ে নেন মুনছুর উদ্দীন। বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছে তার কোটি টাকা, রয়েছে শত বিঘার ওপর জমিজমা। বন্দোবস্ত নেয়ার পর সে কখনও ওই খালের দখলে না থাকলেও, গোপনে বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে সরকারি খালের পার্শ্ববর্তী জমি কোবলা রেজিস্ট্রির মাধ্যমে বিক্রি করেছেন।

২০১৫ সালের ১৮ মার্চ সখিপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকে এসব সরকারী জমি বিভিন্ন লোকের নামে কোবলা রেজিস্ট্রি করেন মুনছুর উদ্দীন। সে সকল কোবলা নাম্বার হলো- ৫৪৭/১৫, ৫৪৮/১৫, ৫৪৯/১৫, ৫৫০/১৫। পরবর্তীতে সরকারি খাস খালটি বন্দোবস্ত বাতিল করে জনস্বার্থে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবি জানিয়ে ২০১৫ সালের ৯ মার্চ এলাকাবাসীর পক্ষে আব্দুল করিম বাদী হয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের নিকট একটি লিখিত আবেদন করেন। পরে জেলা প্রশাসক দেবহাটার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে তদন্তের নির্দেশ দেন। বিষয়টি তদন্ত করে এস,এ ১২ দাগের ৩.৮১ একর জমি জনসাধারণের ব্যবহার্যের জন্য সুপারিশ করা হয়। পরে জেলা কৃষি খাম জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত কমিটির সভায় খালটির বন্দোবস্ত বাতিল ও জনসাধারণের জন্য ব্যবহারের নির্দেশ প্রদান করা হয়। এতে করে বন্দোবস্ত বাতিলের আবেদনকারী আব্দুল করিমের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে প্রভাবশালী মুনছুর উদ্দীন মোড়ল।

পরে সেখানকার ১ একর ৫০ শতক জমির ভিতরে ১.১২ জমি তার দখলে নিতে মুনছুর উদ্দীন পুনরায় মিথ্যা মামলা দায়ের করের। এরপর ২৫/৫/২০১৫ তারিখে দেবহাটা থানায় মিথ্যা অভিযোগ এনে ডায়েরি করে মুনছুর উদ্দীন। ডায়েরির সূত্র ধরে ৭/৯/১৫ তারিখে দেবহাটা থানায় এনজিআর-৫/১৫ দায়ের হয়। এরপর বিজ্ঞ জুডিশিয়াল আদালতে মুনছুর আলী বাদী হয়ে সিআর-৫৪/১৫, টিআর-৮/১৫ দায়ের করেন। যাতে কুলিয়ার ভেন্নাপোতা গ্রামের মৃত হাজের আলীর ছেলে আব্দুস সত্তার কে আসামি করা হয়। এছাড়া বিজ্ঞ আমলী ৭ (দেবহাটা) আদালতে আবারও মুনছুর উদ্দীন বাদী হয়ে ৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে। মামলার আসামিরা হলেন কুলিয়া গ্রামের মৃত জসিম উদ্দীন সরদারের ছেলে আব্দুল করিম (৫৫), তাহের গাজীর ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৪৮), মৃত জসিম উদ্দীনের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৪৫), ভেন্নাপোতা গ্রামের মৃত হাজের আলী গাজীর ছেলে আব্দুস সাত্তার (৫০), রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত মোজামের ছেলে নূর বক্স (৪৫) ও ভেন্নাপোতা গ্রামের মৃত মাওলা ঢালীর ছেলে আলিম (৩৮)। এ সকল ব্যক্তিরা প্রত্যেকেই ওই খাল পাড়ের বাসিন্দা।

একই সাথে ঐ খালে বাধ দেওয়ার জন্য ৮ মার্চ ২০২০ তারিখে লোকজন দিয়ে জনসাধারণের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করতে আসলে স্থানীয়দের বাধার মুখে তারা ফিরে যায়। পরে ১৫ মার্চে সে আরো একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এভাবে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে স্থানীয় ভূমিহীনদের হয়রানি করে যাচ্ছেন মুনছুর উদ্দীন। আর এসব মামলায় প্রায় প্রত্যেকটিতে নিজের পোষ্য কিছু ব্যক্তিদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সাক্ষী বানিয়েছেন মুনছুর উদ্দীন। যাদের কেউই ওই খাল সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা নয়, বরং তারা প্রত্যেকেই মুনছুর উদ্দীনের নিজ এলাকা অর্থাৎ ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দুরের বাসিন্দা এবং মুনছুর উদ্দীনের টাকায় লালিত পালিত। এদেরকেই সাক্ষী বানিয়ে একের পর এক মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে খালপাড়ের ওই অসহায় বাসিন্দাদের উচ্ছেদের পাঁয়তারা চালিয়ে আসছে মুনছুর উদ্দীন মোড়ল।

তার দায়েরকৃত এসব মিথ্যা মামলা বিজ্ঞ আদালতে চলমান থাকা সত্তে¡ও মুনছুর মোড়ল বহুবার ঐ জমি অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা চালিয়েছেন। পরবর্তীতে সরকারী ওই খাল পুনরুদ্ধারে সরকার পক্ষ মহামান্য হাইকোর্টে সিভিল রিভিশন মামলা দায়ের করার জন্য নথি প্রেরণ করে। ৯ জানুয়ারি বিষয়টির স্মারক প্রাপ্ত পত্র দেবহাটা সহকারী জজ আদালত, সাতক্ষীরা দেওয়ানি ১৭/২০১৬ এর আরজি, জবাব, জবানবন্দি, রায়, ডিক্রির জাবেদা নকল এবং জেলা জজ আদালত, সাতক্ষীরা দেওয়ানি আপিল ১১৪/২০১৮ এর আরজি ও রায়ের জাবেদা নকল, স্বাক্ষরকৃত ওকালতনামা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র মহামান্য হাইকোর্টে সিভিল রিভিশন মামলার জন্য অনুরোধ জানান।

কিন্তু সবকিছু উপেক্ষা করেও বর্তমানে মুনছুর উদ্দীন তাদেরকে হয়রানি করছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন আব্দুল করিম। তাই ওই সরকারি খালের জমি পুনরুদ্ধার ও জনস্বার্থে ব্যবহারের পাশাপাশি যাতে মিথ্যা মামলা থেকে ভুক্তভোগী পরিবার গুলো অব্যাহতি পেতে পারে সেজন্য সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version