নুর মনোয়ার: বিশ্ব আজ অতিমারি করোনায় বিপদস্ত। বিশ্বের প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে করোনার প্রভাব। ব্যতিক্রম নয় আমাদের দেশও। দেশে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ডেকোরেটার ব্যবসায়ী, ডেকোরেটার শ্রমিক ও বাবুর্চিরা। সাতক্ষীরায় ডেকোরেটার ব্যবসায় নিয়তিজ প্রতিটা ব্যক্তি আজ চরম দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। তাদের আক্ষেপ কোন প্রতিষ্ঠানই এ দুর্ভোগে কোন খোঁজখবর নিচ্ছে না। এ বিষয়ে খাদিজা ডেকোরেটারের মালিক কবির হোসেন বলেন, আমরা যারা ছোট ডেকোরেটার ব্যবসায়ী আছি তারা কেউ অনেক টাকার মালিক না। আমরা বেশিরভাগ ডেকোরেটার শ্রমিক। দীর্ঘদিন ডেকোরেটার শ্রমিক জীবনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সারা জীবনের জমানো সঞ্চয় দিয়ে আমাদের এ ব্যবসা। করোনার কারণে আজ প্রায় ছয় মাস আমাদের কোন কাজ নেই। ব্যবসায় ব্যবহৃত সব জিনিসপত্র নষ্ট হচ্ছে। কারও পর্দার কাপড় পোকায় কেটেদিচ্ছে, পিঁপড়ায় কেটেদিচ্ছে কারও ত্রিফল, আমার পঞ্চাশ হাজার টাকার বাঁশ নষ্ট হয়েছে। ব্যবসা না চলায় আমি সংসার চালাতে আর সমিতির কিস্তি দিতে পারছি না। সরকার আমাদের সুদমুক্ত ঋণ দিলে আমরা অন্য ব্যবসা করে জীবন ধারণ করতে পারতাম। সাতক্ষীরা জেলা ডেকোরেটার শ্রমিক সংগঠনের সাবেক সভাপতি আব্দুস সবুর জানান, ডেকোরেটার শ্রমিকরা দৈনিক শ্রমিক হিসাবে কাজ কোরে তাদের সংসার চালায়। করোনার কারণে দীর্ঘদিন তাদের কোন কাজ নেই। এখন কেউ ভাড়ায় ভ্যান চালাচ্ছে, কেউ বিলে জোন দিচ্ছে আর আমার মত বয়স্করা ছেলেমেয়েদের সংসারে অতি কষ্টে জীবন কাটাচ্ছে। বিভিন্ন পেশার মানুষ এখন নিজের কাজে ফিরছে শুধুমাত্র আমাদের কাজ নেই। জেলা ব্যপি শতশত ডেকোরেটার শ্রমিক, আমরা কি করবো কীভাবে সংসার চালাব। আমরা যে অন্য কোন কাজ জানি না আর এ বয়েসে অন্য কোন কাজও বা কীভাবে শিখব। আমাদের নীরব মৃত্যু হচ্ছে দেখার কেউ নেই। সাতক্ষীরা জেলা রন্ধন শিল্প বাবুর্চি শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি আব্দুল মান্নান জানান, জেলা ব্যাপী আমাদের সদস্য তিন শত একুশ জন এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরেই আছে দুই শত জনের বেশি যার বেশিরভাগই মহিলা। আমাদের মধ্যে মহিলারা বেশি কষ্টের মধ্যে আছে কারণ সংসার তাদের উপর নির্ভর। কোন মহিলার স্বামী নাই সস্তান লালন পালন করতে হয়, কোন মহিলার বাবা-মাকে দেখতে হয়। পুরুষরাও কষ্টে আছে কারণ তারা অন্য কাজ জানে না। আর সবথেকে বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে সমিতির কিস্তি। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি সংগঠনের পক্ষথেকে পৌর মেয়র ও জেলা পরিষদে লিখিত আবেদন করেছি। জেলা ডেকোরেটার মালিক সমিতির সভাপতি হেদায়েত ইসলাম জানান, সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের জীবনের সুন্দর মুহ‚র্ত গুলো আমরা সযতেœ আরও সুন্দর ও রুচিশীল করে তুলি কিন্তু আজ করোনার দুর্যোগে আমাদের কেউ খোঁজ রাখে না। সাতক্ষীরা জেলায় একশ’র ঊর্ধ্বে ডেকোরেটার, পাঁচশ’র উর্ধ্বে ডেকোরেটার শ্রমিক ও সাড়ে তিনশ’র মত বাবুর্চি আছে যার সকলেই আজ বেকার। ডেকোরেটার ব্যবসায়ী, ডেকোরেটার শ্রমিক ও বাবুর্চি সকলের একটি পরিবার আছে। উপার্জনহীন এক একটি পরিবার। ব্যথায় আমাদের বুক ফেটে যাচ্ছে। সমাজের সকলের কাছে আবেদন ডেকোরেটার শ্রমিক বাবুর্চিদের জন্য কিছু করুন। বর্তমানে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত সকলেই তাদের স্ব-স্ব কর্মে ফিরেছে, প্রশাসনের কাছে আবেদন ডেকোরেটার ব্যবসায়ী, ডেকোরেটার শ্রমিক ও বাবুর্চিদের কাজে ফেরার সুযোগ দিন।
করোনার প্রাদুর্ভাবে ডেকোরেটার ব্যবসায় ধস : শ্রমিক ও বাবুর্চিদের দুর্বিষহ জীবন
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/