Site icon suprovatsatkhira.com

বেষ্ট টিম সাতক্ষীরা’র অত্যাচারে অতিষ্ট জেলাবাসী!

নিজস্ব প্রতিবেদক: নেই কোন নিবন্ধন অথচ সাতক্ষীরা জেলাব্যাপী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ভয়ঙ্কর গ্রুপ ‘বেষ্ট টিম সাতক্ষীরা’। মুলত এটি একটি ফেসবুক গ্রæপ। কথিত সাংবাদিক পরিচয়দাতা মাদকাসক্ত এক যুবক ফেসবুক লাইভে এসে নিজেকে উপস্থাপন করেন সমাজ সেবক হিসেবে। একের পর এক সাধারণ মানুষের নামে ফেসবুক লাইভে এসে মানহানি, চরিত্রহননসহ ধর্ষিত নারীর ভিডিও প্রকাশ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এই বেষ্ট টিম সাতক্ষীরার দুই কান্ডারি হিসেবে পরিচিত সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট শাহনেওয়াজ পারভিন মিলি ও তার বর্তমান স্বামী মাদকাসক্ত মোস্তাফিজুর রহমান। তারা দুইজন জেলার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে বাল্যবিবাহ বন্ধের নামে অর্থ বাণিজ্য করে বেড়াচ্ছে এমন অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন। এই টিমে মোস্তাফিজুর রহমান তার মোটর সাইকেলের পিছনে বয়ে নিয়ে বেড়ান কয়েকজন সুন্দরী নারীকে। এই চক্র সর্বশেষ অপকর্ম করতে যেয়ে গত ২৮ আগস্ট ২০২০ শুক্রবার জনরোষে পড়ে পালিয়ে ফিরেছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পরানদহা গ্রামের দরিদ্র আলম হোসেনের বাড়ি থেকে।

অভিযোগে জানা গেছে। ফেসবুক ভিডিওতে লাইভ দিয়ে জেলার বিভিন্ন জায়গায় পারিবারিক ঝগড়া (স্বামী-স্ত্রী দাম্পত্য কলহ), জমি দখল, বাল্যবিবাহ বন্ধ, সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের গাছ বিক্রিসহ নানা কাজে তারা ব্যস্ত থাকেন সারাদিন।

সদর উপজেলার পরানদহা গ্রামের মৃত আবদুল খালেক সরদারের ছেলে আলমগীর হোসেন (৩৫) জানান, তিনি দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া গ্রামের মৃত নুর আলী সরদারের মেয়ে মারুফা খাতুনের সাথে বিগত ১৭ বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের পারিবারিক জীবনে নবম শ্রেণিতে পড়–য়া এক ছেলে ও এক চার বছর মেয়ে। সম্প্রতি এক মাস আগে তার ছেলে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে দেবহাটার সখিপুর হাসপাতালে মৃত্যু হয়। তার ছেলের করোনা রোগে মৃত্যু হয়েছে বলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে দিয়ে নিজের ছেলের কবর খুড়ে স্ত্রীর বাবার বাড়িতে দাফন করে। আলম ছেলের মৃতদেহ পরানদহে নিজ বাড়িতে নিয়ে দাফন করতে চাইলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন বাঁধা দেয়।
এদিকে, তার ছেলের মৃত্যুর পর আলমের স্ত্রী মারুফা খাতুন তার সংসারে ফিরে আসতে অস্বীকৃতি জানান। বিষয়টি নিয়ে কুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের একাধিকবার শালিস মিমাংসা হয়। সেখানে কোন সমাধান না হওয়ায় মারুফা তার বাবার বাড়িতে থেকে যায়। এক পর্যায়ে গত ২৫ আগস্ট ২০২০ তারিখে আলম হোসেন আদালতের মাধ্যমে স্ত্রী মারুফা খাতুনকে তালাক দেয়।

এ ঘটনার পর ঘটনার দিন ২৮ আগস্ট ২০২০ শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট শাহনেওয়াজ পারভিন মিলি, তার স্বামী মাদকাসক্ত মোস্তাফিজুর রহমান, আলমের প্রাক্তন স্ত্রী মারুফা খাতুন ও দেবহাটার কুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রাক্তন ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেন পরানদহ গ্রামে আলমের বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করে ঘরে রক্ষিত জমির দলিল, বন্ধক নেওয়া জমির চুক্তিপত্র, সোনার গহনা, নগদ ১৫ হাজার টাকা ও মূল্যবান কাগজপত্র এবং জিনিসপত্র নিয়ে যায়। এ সময় অ্যাডভোকেট শাহনেওয়াজ পারভিন মিলি চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘আমি মিলি আইনজীবী ও জেলা পরিষদের সদস্য, মানবাধিকারকর্মী তোমাদের ঘরে থাকা টাকা নিয়ে গেলাম, পারলে যা পারেন করেন। যার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী শিবপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান, আলমের স্বজন গৃহবধূ আসমা খাতুন, ইউসুফ আলী বলেন, শাহনেওয়াজ পারভিন মিলি নিজ হাতে অসহায় আলমের ঘরের তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে ঘরে রক্ষিত জমির দলিল, বন্ধক নেওয়া জমির চুক্তিপত্র, সোনার গহনা, নগদ ১৫ হাজার টাকা ও মূল্যবান কাগজপত্র এবং জিনিসপত্র নিয়ে যায়। এ সময় এলাকার পুরুষরা মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে যান। বাড়িতে নারী থাকায় তারা বাধা দিলে মিলি ও তার মাদকাসক্ত স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান নারীদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং থানা-পুলিশের ভয় দেখিয়ে হুমকি-ধামকি দিতে থাকেন।

এ ঘটনায় গত শনিবার ক্ষতিগ্রস্ত আলম হোসেন বাদী হয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এ ব্যাপারে অ্যাডভোকেট শাহনেওয়াজ পারভিন মিলির সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ওই এলাকার জনপ্রতিনধি। ঘটনার সময়ে আমি বাইরে ছিলাম। খবর পেয়ে সেখানে যেয়ে আলম ও মারুফা খাতুনের সংসার জোড়া লাগাতে কথা বলি। মারুফা এখন তালাকে কাগজ হাতে পাইনি সে কারণে তাকে সেখানে তার স্বামীর ঘরে তুলে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করেছি মাত্র। আমি কোনো জিনিসপত্র তছনছ করিনি। এবং আলমের ঘরের তালাও ভাঙিনি।

বেষ্ট টিম সাতক্ষীরার অ্যাডমিন মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান জানান, আলম হোসেন থানায় অভিযোগ করেছেন। একজন উপ-পরিদর্শকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার উপ-পরিদর্শক হাফিজুর রহমান জানান, ‘আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি ও অভিযোগকারী এবং এলাকাবাসীর সাথে ঘটনার বিস্তারিত শুনেছি। তদন্ত অব্যাহত আছে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version