নিজস্ব প্রতিনিধি : দেবহাটা সরকারি বি.বি.এম.পি. ইনস্টিটিউশনের (পাইলট হাইস্কুল) সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম এবং বর্তমান প্রধান শিক্ষক মদন মোহন পালের বিরুদ্ধে অনৈতিক ও অসামাজিক কার্যকলাপ, অর্থ আত্মসাতসহ সীমাহীন দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ তুলে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ এবং স্মারকলিপি প্রদান করেছে এলাকাবাসী। সোমবার (৩১ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯টায় দেবহাটা সদর ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে বিদ্যালয় অভিমুখ থেকে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। মিছিলটি দেবহাটা উপজেলা মোড় প্রদক্ষিণ শেষে ফিরে পাইলট হাইস্কুল ও দেবহাটা থানার পাশে মানববন্ধনে ও প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। পরে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মদন মোহন পাল ও সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরীনের কার্যালয়ে গণস্বাক্ষরকৃত স্মারকলিপি প্রদান করেন।
এর আগেও একাধিকবার শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি রক্ষার্থে সাবেক শিক্ষার্থী, অন্যান্য শিক্ষকসহ অভিভাবকদের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথকভাবে বাদী হয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মদন মোহন পাল ও সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শিক্ষা কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক লিখিত অভিযোগ দায়ের হলেও, তাতে কোন ফল না পেয়ে সর্বশেষ প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করে এলাকাবাসী। এসময় দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী মোর্ত্তজা মো. আনোয়ারুল হক, ইউপি সদস্য আরমান হোসেন, সরকারি বিবিএমপি ইনস্টিটিউশনের সাবেক বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকার কয়েকশত সাধারণ মানুষ স্বত-স্ফ‚র্তভাবে ওই কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তৃতাকালে বক্তারা বলেন, মদন মোহন পাল বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের ছত্রছায়ায় অর্থ আত্মসাৎ করার পাশাপাশি নানা অনিয়ম জড়িয়ে পড়েন। সাবেক সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক যোগসাজশে স্কুল গেটের সামনে বিদ্যালয়ের ফান্ডের নাম করে দোকান তৈরির পর ভাড়ার টাকা আত্মসাৎ ও দোকানের একটি অংশ সাবেক সভাপতির দখলে রাখা হয়েছে।
নজরুল ইসলাম সভাপতি থাকাকালীন সময়ে তার অসামাজিক কার্যকলাপের সহযোগিতার জন্য এবং কালো টাকার বিনিময়ে বিতর্কিত ফারুক হোসেনকে নৈশ প্রহরী হিসেবে নিয়োগ দেন প্রধান শিক্ষক মদন মোহন পাল।
বক্তারা আরো বলেন, বিদ্যালয়ের পিছনের অংশে দীর্ঘদিনের চলাচলের পথ বন্ধ করে প্রধান শিক্ষকের সহায়তায় সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম নিজের অফিস খুলে বসেছেন। সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় ভাড়া নেয়ার নাম করে নজরুল ইসলাম পৈতৃক সম্পত্তির মতো স্কুলের জায়গায় নিজের অফিস ভোগদখল এবং সেখানে রাতের আধারে নারীদের নিয়ে অনৈতিক কর্মকান্ড করেন। যা সম্পূর্ণ অবৈধ।
নজরুল ইসলামের অনৈতিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে এবং জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ইতিপূর্বে তার বড় ছেলে আবুল কালাম বাদী হয়ে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন।
এছাড়া স্কুলটি সরকারি করণের নাম করে অন্যান্য শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা তুলে আত্মসাৎ করা এবং বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা তোলার অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষক মদন মোহন পাল ও সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ইতোপূর্বে প্রশাসনের এক তদন্ত প্রতিবেদনে বহুল বিতর্কিত প্রধান শিক্ষক মদন মোহন পাল ও সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে অর্থ আত্মসাত, রেজুলেশন খাতা তছরুপ ও স্কুলের নামে বরাদ্দকৃত ২ টন চাউল আত্মসাতসহ গুরুতর প্রায় ডজন খানেক অভিযোগ প্রমাণিত হয় বলেও প্রতিবাদ সমাবেশের বক্তব্যে উল্লেখ করেন বক্তারা।
এ ব্যাপারে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সরকারি বিবিএমপি ইনস্টিটিউশনের বর্তমান সভাপতি সাজিয়া আফরীন বলেন, ইতোমধ্যেই দায়েরকৃত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) আহŸায়ক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল হাই রকেটকে সদস্য সচিব করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দেবহাটা পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সাবেক সভাপতির বিরুদ্ধে মানববন্ধন
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/