Site icon suprovatsatkhira.com

দেবহাটায় ৪বছর ধরে কন্যাকে খুঁজছে বৃদ্ধ অসহায় পিতা মাতা

দেবহাটা প্রতিনিধি : দেবহাটায় ৪বছর ধরে একমাত্র কন্যার খোঁজ না পেয়ে পথে পথে পাগলের মত ঘুরছে বৃদ্ধ পিতা-মাতাসহ অসহায় পরিবারটি। তারা জানে না তাদের আদরের কন্যা আজ কোথায়? সে বেঁচে আছে না নেই? জামাইয়ের কাছে (জামাই-শাশুড়ি ফোনালাপ) মেয়ের খোঁজ নিলে সে বলে, বেশি বাড়বাড়ি করলে কানের মধ্যে মেশিন ভরে দিয়ে গুলি করে দেব! এই কথা বলে শাশুড়িকে স্ব-পরিবারে প্রাণ নাশের হুমকি দেয় জামাই আনিছুর। বাবা পেশায় মিস্ত্রি, মা দিন মজুর। বসবাস করে উপজেলার দক্ষিণ কুলিয়া গ্রামের একটি ছোট্ট কুড়ে ঘরে। বাবা জমাত আলী সাহাজী ও মা আকলিমা খাতুনের কোল জুড়ে দুই পুত্রের পরে জন্ম হয় একমাত্র কন্যার। আদর করে কন্যার নাম রাখে সামছুন্নাহার হিরা। কন্যা বড় হলে দেখা-দেখির মাধ্যমে বাবা-মা তাদের একমাত্র কন্যাকে বিয়ে দেয় ভাতশালা গ্রামের আবুল খায়ের বিশ্বাসের পুত্র আনিছুর বিশ্বাসের সাথে। বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়িতে জামাই আসলেই তাকে টাকা দিতে হত। গরিব শ্বশুর নিরুপায় হয়ে জামায়ের চাহিদা মত টাকা দিতে না পারলে বিভিন্ন প্রকার গালি গালাজসহ হুমকি প্রদান করে থাকতো জামাই আনিছুর। এক পর্যায়ে স্ত্রীকে তার বাপের বাড়িতে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। প্রায় ৪ বছর মেয়ের কোন হদিস না পেয়ে বিভিন্ন দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে অসহায় পরিবারটি। একান্ত স্বাক্ষাৎকারে এসব অভিযোগ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন কন্যার বাবা, মা ও ভাই। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার দেবহাটা থানায় অভিযোগ দিলে কন্যাকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বদলি জনিত কারণে এখনও উদ্ধার হয়নি ভিকটিম সামছুন্নাহার হিরা। দীর্ঘ সময় পার করে কোন দিশা না পেয়ে অবশেষে আদালতের দ্বারস্থ হয় কন্যা হারানো পরিবারটি। সকল ঘটনার বিবরণ দিয়ে ৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলা করে কন্যার মাতা আকলিমা বেগম(৬০)। মামলা নং সি আর ২৫/২০। এতে অভিযুক্তরা হলেন, ভাতশালা গ্রামের আবুল খায়ের বিশ্বাসের পুত্র বাদিনীর জামাতা একাধিক মামলার আসামি আনিছুর রহমান (৩৫), আবুল খায়ের বিশ্বাসের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৫৫), একই গ্রামের আহাদ বিশ্বাসের পুত্র নজরুল ইসলাম খোকা (৩৫) ও তার ভাই নুর আলী বিশ্বাস এবং কালু ঢালীর পুত্র আব্বাস ঢালী (৪০)। মামলা দায়েরের পর দেবহাটা থানার উপর তদন্ত ভার দেয় আদালত। তদন্ত এখনও প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানা যায়। এদিকে মামলা দায়েরের পর তদন্ত শুরু হতে না হতেই গাত্রদাহ শুরু হয় আসামিদের। এতে আসামিদের বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠে সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামরুল ইসলাম। সে ৫জন আসামির মধ্যে নজরুল ইসলাম খোকা ও নুর আলী বিশ্বাস তার আত্মীয় হওয়ায় তাদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য নানান অপচেষ্টায় লিপ্ত হয় বলে অভিযোগ করেন ভিকটিমের পরিবার। তবে কন্যার পিতা-মাতা তাদের আদরের একমাত্র কন্যাকে না পেয়ে প্রশাসন সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দারে দারে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে জানা যায়। তাই তাদের কন্যাকে ফিরে পেতে পারে সেজন্য পুলিশ সুপার সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভিকটিমের পরিবার ও এলাকাবাসী। এ বিষয়ে ইউপি সদস্য কামরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুইজন আসামি আমার আত্মীয় হওয়ায় আমি তাদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য বলেছি। কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি আনিছুর রহমানের শাস্তি দাবি করেন। এ বিষয়ে দেবহাটা থানার সেকেন্ড অফিসার ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নয়ন চৌধুরী জানান, মামলার বিষয়ে দীর্ঘ দিনের একটি জটিলতা আছে। ১নং আসামি আনিছুর রহমান দীর্ঘ দিন এলাকা ছাড়া। তাছাড়া করোনা পরিস্থিতির জন্য প্রতিবেদন দাখিল করতে বিলম্ব হচ্ছে। দুই একের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে প্রেরণ করা হবে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version