জুলাই ২, ২০২০
অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা ভোগান্তিতে পাটকেলঘাটার মানুষ
নাজমুল হক, পাটকেলঘাটা প্রতিনিধি : পাটকেলঘাটায় অপরিকল্পিত ভবন ও বাড়িঘর নির্মাণ করায় সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। হারিয়ে ফেলছে স্বাভাবিক বৃষ্টির পানি প্রবাহের গতি পথ। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে পাটকেলঘাটা বাজার সহ আশে পাশের গ্রামগুলোতে। জলাবদ্ধতায় ভুক্তভোগী স্থানীয়রা জানায়, বহুদিন থেকে বর্ষার মৌসুমে বাজারের বৃষ্টির পানি ¯্রােত আকারে বাজারের পূর্ব দিকের পানি নালা-ড্রেন দিয়ে কপোতাক্ষ নদীতে পড়ত। বিপরীত দিকের পানি গরু হাটা ড্রেন দিয়ে বাইগুনি হয়ে শাকদহা বিলে পড়ত। আবার পশ্চিম দিকে খুলনা-সাতক্ষীরা মহা-সড়কের দু’ধারের নালা দিয়ে বৃষ্টির পানি শাকদাহ, বড়বীলা ও সরুলিয়া খাল হয়ে তীব্র স্রোত আকারে পানির কিছু অংশ কপোতাক্ষে পড়ত, কিছু অংশ ভৈরবনগর ¯øুইচ গেট হয়ে বেতনা নদী, শালিখা নদীতে পড়ত। পাটকেলঘাটা বাজারের কিছু অংশের পানি বল-ফিল্ডের ধার দিয়ে বেয়ে এসে কালিপদ সাধুর বাড়ির পাশ দিয়ে ড্রেন বেয়ে মজুমদার ফিলিং স্টেশনের ¯øুইচ গেট হয়ে সোবহান হাজীর জমির পাশ ঘেঁষে যুগিপুকুরিয়া হয়ে তৈলকুপি বিলে পড়ত। অথচ পানির এসব স্বাভাবিক চলার পথ এখন প্রায় রুদ্ধ। এলাকার সামগ্রিক স্বার্থ চিন্তা না করে ব্যক্তি স্বার্থে অপরিকল্পিত দোকানপাট, বিল্ডিং-বাড়ি সহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে ড্রেনেজ ব্যবস্থা প্রায় বন্ধের সম্মুখীন। কোথাও কোথাও ড্রেন থাকলেও নানা বর্জ্য পদার্থ ফেলে সেগুলো ভরাট করে ফেলেছে। কেউ কেউ নামকাওয়াস্তে ড্রেন রাখলেও বড় ড্রেনগুলো সরু করে ফেলেছে। বর্তমানে খুলনা সাতক্ষীরা মহা-সড়কের দু’ধারে ড্রেন এখন নেই বললেও চলে। নালা-ড্রেন মাটি দিয়ে ভরাট করে দোকানপাট সহ বিভিন্ন স্থাপনা করেছেন ভূমি দস্যুরা। পাটকেলঘাটার পশ্চিম পাড়া এলাকার যে পানি পাটকেলঘাটা হারুণ অর রশিদ কলেজের সামনে দিয়ে যে জনগুরুত্বপূর্ণ পানির ড্রেনটি দিয়ে শাকদাহ বিলে পড়ত, সে ড্রেনটির উপর মাটি ভরাট করে ইটের প্রাচীর নির্মাণ করছে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল। এদিকে বাজারের বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী বিদ্যুৎ রোড, ডাকবাংলো রোড, টাওয়ার রোড, গরু হাটা রোডগুলির ড্রেনেজ ব্যবস্থা না রেখে অপরিকল্পিত দোকানপাট, বসতবাড়ি নির্মাণ করায় বর্ষার মৌসুমে এ রোডে হাঁটু পানি জমে থাকে, কোথাও কোথাও রাস্তাটির এমন অবস্থা হয় যেন পার হতে গেলে নৌকার প্রয়োজন হয়। এ ব্যাপারে পাটকেলঘাটার হারুণ অর রশিদ কলেজের অধ্যাপক সুব্রত দাশ বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে আমরা দেখেছি আমার বাড়ির সামনে দিয়ে তীব্র ¯্রােত আকারে ড্রেন দিয়ে পানি বের হয়ে যেত, সেই ড্রেন আমরা বজায় রাখলেও অধিকাংশরা মাটি দিয়ে ভরাট করে ফেলেছে। ইদানিং মজুমদাররা পানির ড্রেনের মোটা পাইপ তুলে দিয়ে চিকন পাইপ লাগিয়েছে। ফলে মারাত্মক জলাবদ্ধতার শিকার হতে হচ্ছে আমাদের’। পাটকেলঘাটার কুমিরা বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক পাটকেলঘাটার বাসিন্দা নেছার আলী বলেন, ‘আমাদের পশ্চিম পাড়ার বর্ষার পানি যে পথ দিয়ে প্রবাহিত হত অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ করায় পানি চলার সে স্বাভাবিক পথ আজ ব্যাহত হচ্ছে। আগামী দিনে আমাদের এমন হতে চলেছে যে যার অংশের পানি তারই গিলে খেতে হবে’। সরুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, ‘ভারতে যেমন ভবন নির্মাণ করতে হলে পঞ্চায়েতের অনুমতি লাগে আমাদেরও তেমন আইন করতে হবে। এদিকে পাটকেলঘাটা বাজারের রাস্তাগুলোর বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে চুরে খানা খন্দে পরিণত হয়েছে। নিদারুণ ঝুঁকির মধ্যে চলাচল করছে জনসাধারণ। রাস্তাগুলির এ বেহাল দশার যেন দেখার কেউ নাই। পাটকেলঘাটার কালিবাড়ী রোড, ডাকবাংলো রোড, গরুহাটা রোড, বল-ফিল্ড রোড, মজুমদারের গুদাম রোড, পুলিশ ফাঁড়ির রোড, হাই স্কুল রোড, পল্লী বিদ্যুৎ রোড, গোডাউন রোড, টাওয়ার রোড, সহ পাটকেলঘাটার প্রায় রোডগুলি চলাচলের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। ফলে ভোগান্তি পাচ্ছে এলাকাবাসী’। তিনি আরও জানান, ‘জুন মাস কেøাজিংয়ের মাস আমাদের হাতে কোন অর্থ বরাদ্দ নেই। জেলা পরিষদের রাস্তাগুলো আমাদের কিছু করার নেই। ভবিষ্যতে বাজেট হলে দেখা যাবে’। 8,573,597 total views, 1,367 views today |
|
|
|